ঢাকা ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সবুজ বনের পাখি ‘ঘুঘু’

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০২:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • ৫৮৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভোরের দিকে লাউয়াছড়ার নির্জন পথে এই পাখিদের দেখা যায়। দু-একটি দলে মিলিত হয়ে তারা মাটি থেকে খুটে খুটে খাবার খেতে আসে। হঠাৎ ছুটে চলা গাড়ির শব্দে ওরা খাবারে বিরতি টেনে চলে যায় অন্যদিকে। পাহাড়ি ভোর কিংবা সকাল এই দু’টো মুহূর্তকে তাদের উপস্থিতি দিয়ে প্রতিদিনের মতো স্বাগত জানায় সবুজ ঘুঘুরা। সকালের স্নিগ্ধতায় এরা প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্য হয়ে ধরা দেয়। তাদের সবুজাভ রঙের বর্ণছটায় শুভ্র সকাল আপন মুগ্ধতা ফিরে পায়।

তবে সারাদেশ থেকেই আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে সবুজ ঘুঘু। অবাধ শিকার এ পাখিটিকে বিপন্ন করার পেছনে অন্যতম কারণ। এর ইংরেজি নাম Emeraled Dove  এবং বৈজ্ঞানিক নাম Chalcophaps indica ।

Related image
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় সবুজ ঘুঘু ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ পাখি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান সাংবাদিককে বলেন, এক সময় সবুজ ঘুঘু সারাদেশে ভালো পরিমাণেই ছিলো। আমাদের গ্রামগঞ্জের বাড়ির পেছনের যেসব বাঁশঝাড় বা গাছগাছালিপূর্ণ অংশগুলো ছিলো যেখানে এদের দেখা যেত। এখন দেখা যায় না বললেই চলে। বর্তমানে তাদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

Related image

প্রজনন সম্পর্কে তিনি বলেন, সবুজ ঘুঘুর ‘ব্রিডিং টাইম’টা (প্রজনন সময়) একটু ঝুঁকিপূর্ণ। অন্য পাখি যেমন তাদের বাসার পাশে কেউ গেলে বা পাখি বাসা দেখলে পাখিরা তাদের বাসাতে ফিরে আসে বা তাদের বাসাটি পরিত্যক্ত করে চলে যায় না। কিন্তু সবুজ ঘুঘুর বেলায় তা নয়। প্রজনন মৌসুমে তাদের বাসার আশপাশে কেউ গেলে বা সে যদি ‘ডিস্টার্ব ফিল’ করে তবে তারা বাসাটি পরিত্যক্ত করে অন্যত্র চলে যায়।

শারীরিক বর্ণনা প্রসঙ্গে কামরুল হাসান বলেন, সবুজ ঘুঘুর পিঠের দিক এবং ডানা ধাতব সবুজ বা পান্না রঙের। সূর্যের আলো পড়লেই ঝকঝক করে পুরো অংশটি। মাথা এবং ঘাড় ধূসরাভ। ঠোঁট লাল এবং পা ও পাতা সিঁদুরে লাল। পেটের দিক গোলাপি ধূসর বা উজ্জ্বল গোলাপি। এদের উচ্চতা প্রায় ২৭ সেন্টিমিটার।

সবুজ ঘুঘুর খাবার তালিকা এবং প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, এরা বিভিন্ন শস্যদানা, ফল এবং ছোট ছোট পোকামাকড় প্রভৃতি খায়। সবুজ বনের নির্জন বনে একা কিংবা জোড়ায় খাবার খুঁজে বেড়ায়। এরা মূলত চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। বাঁশবন বা পাতাঝরা বনেও তাদের দেখা মেলে। সিলেট এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোতে তাদের দেখা যায়।

Related image
এই পাখিটির বড় ‘থ্রেড’ (ঝুঁকি) হচ্ছে ‘হান্টিং’ (শিকার)। চা বাগান বা গ্রামের দিকে ফাঁদ পেতে বা ঘুঘু দিয়ে ঘুঘুকে শিকার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও ‘এয়ারগান’ বন্দুক দিয়েও এদের শিকার করা হয়।

অবাদে হান্টিঙের কারণে এদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান।

সূত্রঃ বাংলানিউজ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সবুজ বনের পাখি ‘ঘুঘু’

আপডেট টাইম : ১১:০২:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভোরের দিকে লাউয়াছড়ার নির্জন পথে এই পাখিদের দেখা যায়। দু-একটি দলে মিলিত হয়ে তারা মাটি থেকে খুটে খুটে খাবার খেতে আসে। হঠাৎ ছুটে চলা গাড়ির শব্দে ওরা খাবারে বিরতি টেনে চলে যায় অন্যদিকে। পাহাড়ি ভোর কিংবা সকাল এই দু’টো মুহূর্তকে তাদের উপস্থিতি দিয়ে প্রতিদিনের মতো স্বাগত জানায় সবুজ ঘুঘুরা। সকালের স্নিগ্ধতায় এরা প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্য হয়ে ধরা দেয়। তাদের সবুজাভ রঙের বর্ণছটায় শুভ্র সকাল আপন মুগ্ধতা ফিরে পায়।

তবে সারাদেশ থেকেই আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে সবুজ ঘুঘু। অবাধ শিকার এ পাখিটিকে বিপন্ন করার পেছনে অন্যতম কারণ। এর ইংরেজি নাম Emeraled Dove  এবং বৈজ্ঞানিক নাম Chalcophaps indica ।

Related image
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় সবুজ ঘুঘু ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ পাখি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান সাংবাদিককে বলেন, এক সময় সবুজ ঘুঘু সারাদেশে ভালো পরিমাণেই ছিলো। আমাদের গ্রামগঞ্জের বাড়ির পেছনের যেসব বাঁশঝাড় বা গাছগাছালিপূর্ণ অংশগুলো ছিলো যেখানে এদের দেখা যেত। এখন দেখা যায় না বললেই চলে। বর্তমানে তাদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

Related image

প্রজনন সম্পর্কে তিনি বলেন, সবুজ ঘুঘুর ‘ব্রিডিং টাইম’টা (প্রজনন সময়) একটু ঝুঁকিপূর্ণ। অন্য পাখি যেমন তাদের বাসার পাশে কেউ গেলে বা পাখি বাসা দেখলে পাখিরা তাদের বাসাতে ফিরে আসে বা তাদের বাসাটি পরিত্যক্ত করে চলে যায় না। কিন্তু সবুজ ঘুঘুর বেলায় তা নয়। প্রজনন মৌসুমে তাদের বাসার আশপাশে কেউ গেলে বা সে যদি ‘ডিস্টার্ব ফিল’ করে তবে তারা বাসাটি পরিত্যক্ত করে অন্যত্র চলে যায়।

শারীরিক বর্ণনা প্রসঙ্গে কামরুল হাসান বলেন, সবুজ ঘুঘুর পিঠের দিক এবং ডানা ধাতব সবুজ বা পান্না রঙের। সূর্যের আলো পড়লেই ঝকঝক করে পুরো অংশটি। মাথা এবং ঘাড় ধূসরাভ। ঠোঁট লাল এবং পা ও পাতা সিঁদুরে লাল। পেটের দিক গোলাপি ধূসর বা উজ্জ্বল গোলাপি। এদের উচ্চতা প্রায় ২৭ সেন্টিমিটার।

সবুজ ঘুঘুর খাবার তালিকা এবং প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, এরা বিভিন্ন শস্যদানা, ফল এবং ছোট ছোট পোকামাকড় প্রভৃতি খায়। সবুজ বনের নির্জন বনে একা কিংবা জোড়ায় খাবার খুঁজে বেড়ায়। এরা মূলত চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। বাঁশবন বা পাতাঝরা বনেও তাদের দেখা মেলে। সিলেট এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোতে তাদের দেখা যায়।

Related image
এই পাখিটির বড় ‘থ্রেড’ (ঝুঁকি) হচ্ছে ‘হান্টিং’ (শিকার)। চা বাগান বা গ্রামের দিকে ফাঁদ পেতে বা ঘুঘু দিয়ে ঘুঘুকে শিকার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও ‘এয়ারগান’ বন্দুক দিয়েও এদের শিকার করা হয়।

অবাদে হান্টিঙের কারণে এদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান।

সূত্রঃ বাংলানিউজ