ঢাকা ০৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চায়ের কাপে শিলার জীবন সংগ্রাম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:১১:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • ৩৫৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিরপুর মাজার রোড থেকে যখন আপনি উত্তরার দিকে যাবেন তখন মিরপুর গড়ান চটবাড়ির সঙ্গেই দেখবেন বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশের আরেকটি পথ। বিকাল ৪টা থেকে ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। কারণ এখান থেকেই দর্শনার্থীদের একটি অংশ নৌকা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। তাদের ঘিরেই সেখানে কয়েকটি চায়ের দোকান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে শিলা রানি সরকারের দোকানে ভিড় বেশি লক্ষ করা যায়।

সকাল সাতটা থেকে দুপুর একটা তারপর বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তার দোকান খোলা থাকে। দর্শনার্থীদের ভিড় তার দোকানে সবচেয়ে বেশি। তার স্বামী বাবু মন্ডল একজন নৌকার কারিগর। একমাত্র পুত্র কার্তিক মন্ডল স্কুলে পড়াশোনা করে। সব সময়ই দেখা যায় অন্য দোকানের চেয়ে শিলা রানি সরকারের দোকানে ভিড় বেশি। সব সময় সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে তিনি হাসিমুখে কথা বলতে অভ্যস্ত। চায়ের দাম রাখেন মাত্র পাঁচ টাকা। অল্প পুঁজিতে তিনি জীবন সংগ্রামে নেমেছেন।

স্বামীর নৌকা নির্মাণের কাজে আয় খুব কম হওয়ার কারণে শিলা রানি সরকারের ওপর সংসারের দায়িত্ব পড়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিনি চায়ের দোকানে দীর্ঘ সময় দিচ্ছেন। তার মধুর ব্যবহারের কারণে একবার যারা দোকানে যান, তারা দ্বিতীয়বার যাবেনই। বাংলাদেশে সংগ্রামী নারীরা সারা দেশে জীবন সংগ্রামে কখনো পরাজিত হননি। কারন তারা জানেন পুরুষশাসিত সমাজ ধর্মের নামে কখনো সামাজিক বাধার কারণে এই নারীদের জীবন যুদ্ধে হারিয়ে দেয়া হয়। পুরুষরা যা পারবেন না, তা একজন নারী করে দেখাবেন, তা তারা কোনোদিনই মেনে নিতে পারেন না। এতে তাদের আঁতে ঘা লাগে, তারা মনে করেন নারীর কাছে আমি হেরে গেলাম। কিন্তু তারা একবারও ভেবে দেখেন না সৃষ্টির শুরু থেকে পুরুষের সঙ্গে নারীদের সংগ্রামে নামতে হয়েছে।

যেটুকু সাফল্য এসেছে নারী-পুরুষের যৌথ জীবন সংগ্রামের কারণে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সফর করে আমাদের সংগ্রামী নারীদের জীবন যুদ্ধ দেখার সুযোগ পেয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীদের পুরুষের চেয়ে বেশি সংগ্রাম করতে দেখেছি। সেখানকার পুরুষরা বেশিরভাগ অলস। জলে ভাসা বেদে সমাজের নারীদের সংসারের হাল ধরতে হচ্ছে। পুরুষরা অলস জীবনযাপন করছেন। বাংলাদেশের যেখানে যাবেন সেখানেই দেখবেন একজন শীলা রানি সরকার সব বাধা উপেক্ষা করে জীবন সংগ্রামে নেমেছেন। বারবার তারা নিজের সমাজ দ্বারা, নিজের ধর্ম দ্বারা বাধার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু তারপরও তারা হার মানছেন না। পুরুষ-শাসিত সমাজ এই সফল নারীদের কাছে নিজেদের পরাজিত ভাবছেন। মেনে নিতে পারছেন না নারীর সাফল্য।

শিলা রানি সরকারের কাছে যখন তার বাল্য জীবন সম্বন্ধে জানতে চাইলাম তিনি জানালেন, ছোটকাল থেকেই তিনি কিছু একটা করবেন এই স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু এই স্বপ্ন কখনই পূরণ হয়নি। বিয়ের পর তিনি স্বামীর পাশে শুধু স্ত্রী হিসেবে নয়, একজন সহযোগী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। বেশির ভাগ সময় যেহেতু তার স্বামীর কোনো কাজ থাকে না যে কারণে এই সামান্য পুঁজি একটি চায়ের দোকানের ওপর তিনজনকে নির্ভর করতে হয়। শত বাধা, শত্রুতা উপেক্ষা করে শিলা রানি সরকার জীবন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। তার চায়ের দোকানের ক্রেতারা জানালেন, জীবন যুদ্ধে যেন শিলা রানি সরকার সফল হতে পারেন এটাই তারা প্রত্যাশা করেছেন। কিছু পুঁজি পেলে এই সংগ্রামী নারী দোকানকে নতুন করে সাজাতে পারবেন। তাই দানশীল ব্যক্তিত্বরা এগিয়ে আসবে, এই প্রত্যাশা তাদের।

সৈয়দ রশিদ আলম: গবেষক

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

চায়ের কাপে শিলার জীবন সংগ্রাম

আপডেট টাইম : ০১:১১:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিরপুর মাজার রোড থেকে যখন আপনি উত্তরার দিকে যাবেন তখন মিরপুর গড়ান চটবাড়ির সঙ্গেই দেখবেন বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশের আরেকটি পথ। বিকাল ৪টা থেকে ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। কারণ এখান থেকেই দর্শনার্থীদের একটি অংশ নৌকা ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। তাদের ঘিরেই সেখানে কয়েকটি চায়ের দোকান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে শিলা রানি সরকারের দোকানে ভিড় বেশি লক্ষ করা যায়।

সকাল সাতটা থেকে দুপুর একটা তারপর বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তার দোকান খোলা থাকে। দর্শনার্থীদের ভিড় তার দোকানে সবচেয়ে বেশি। তার স্বামী বাবু মন্ডল একজন নৌকার কারিগর। একমাত্র পুত্র কার্তিক মন্ডল স্কুলে পড়াশোনা করে। সব সময়ই দেখা যায় অন্য দোকানের চেয়ে শিলা রানি সরকারের দোকানে ভিড় বেশি। সব সময় সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে তিনি হাসিমুখে কথা বলতে অভ্যস্ত। চায়ের দাম রাখেন মাত্র পাঁচ টাকা। অল্প পুঁজিতে তিনি জীবন সংগ্রামে নেমেছেন।

স্বামীর নৌকা নির্মাণের কাজে আয় খুব কম হওয়ার কারণে শিলা রানি সরকারের ওপর সংসারের দায়িত্ব পড়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিনি চায়ের দোকানে দীর্ঘ সময় দিচ্ছেন। তার মধুর ব্যবহারের কারণে একবার যারা দোকানে যান, তারা দ্বিতীয়বার যাবেনই। বাংলাদেশে সংগ্রামী নারীরা সারা দেশে জীবন সংগ্রামে কখনো পরাজিত হননি। কারন তারা জানেন পুরুষশাসিত সমাজ ধর্মের নামে কখনো সামাজিক বাধার কারণে এই নারীদের জীবন যুদ্ধে হারিয়ে দেয়া হয়। পুরুষরা যা পারবেন না, তা একজন নারী করে দেখাবেন, তা তারা কোনোদিনই মেনে নিতে পারেন না। এতে তাদের আঁতে ঘা লাগে, তারা মনে করেন নারীর কাছে আমি হেরে গেলাম। কিন্তু তারা একবারও ভেবে দেখেন না সৃষ্টির শুরু থেকে পুরুষের সঙ্গে নারীদের সংগ্রামে নামতে হয়েছে।

যেটুকু সাফল্য এসেছে নারী-পুরুষের যৌথ জীবন সংগ্রামের কারণে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সফর করে আমাদের সংগ্রামী নারীদের জীবন যুদ্ধ দেখার সুযোগ পেয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীদের পুরুষের চেয়ে বেশি সংগ্রাম করতে দেখেছি। সেখানকার পুরুষরা বেশিরভাগ অলস। জলে ভাসা বেদে সমাজের নারীদের সংসারের হাল ধরতে হচ্ছে। পুরুষরা অলস জীবনযাপন করছেন। বাংলাদেশের যেখানে যাবেন সেখানেই দেখবেন একজন শীলা রানি সরকার সব বাধা উপেক্ষা করে জীবন সংগ্রামে নেমেছেন। বারবার তারা নিজের সমাজ দ্বারা, নিজের ধর্ম দ্বারা বাধার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু তারপরও তারা হার মানছেন না। পুরুষ-শাসিত সমাজ এই সফল নারীদের কাছে নিজেদের পরাজিত ভাবছেন। মেনে নিতে পারছেন না নারীর সাফল্য।

শিলা রানি সরকারের কাছে যখন তার বাল্য জীবন সম্বন্ধে জানতে চাইলাম তিনি জানালেন, ছোটকাল থেকেই তিনি কিছু একটা করবেন এই স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু এই স্বপ্ন কখনই পূরণ হয়নি। বিয়ের পর তিনি স্বামীর পাশে শুধু স্ত্রী হিসেবে নয়, একজন সহযোগী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। বেশির ভাগ সময় যেহেতু তার স্বামীর কোনো কাজ থাকে না যে কারণে এই সামান্য পুঁজি একটি চায়ের দোকানের ওপর তিনজনকে নির্ভর করতে হয়। শত বাধা, শত্রুতা উপেক্ষা করে শিলা রানি সরকার জীবন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। তার চায়ের দোকানের ক্রেতারা জানালেন, জীবন যুদ্ধে যেন শিলা রানি সরকার সফল হতে পারেন এটাই তারা প্রত্যাশা করেছেন। কিছু পুঁজি পেলে এই সংগ্রামী নারী দোকানকে নতুন করে সাজাতে পারবেন। তাই দানশীল ব্যক্তিত্বরা এগিয়ে আসবে, এই প্রত্যাশা তাদের।

সৈয়দ রশিদ আলম: গবেষক