ঢাকা ০৮:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংকটে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৫:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • ৩৫৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে ফের সংকট ঘনীভূত হয়েছে। একদিকে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে বড় পরিসরে কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া অনলাইন সিস্টেম বাতিলের মাধ্যমে থমকে যাচ্ছে। অন্যদিকে গতকাল থেকে মালয়েশিয়া সরকার যৌথ অভিযান জোরদার করায় সেদেশে অবস্থিত প্রায় দুই লাখ অবৈধ প্রবাসী গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন। সব মিলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সংকট দেখা দিলেও প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও কর্মী পাঠাতে মনোনীত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর পক্ষে দাবি করা হচ্ছে, বাজার নিয়ে কোনো সংকট হবে না। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে। বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া।

১৯৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়া শুরু। মাঝখানে কেটে গেছে প্রায় চার যুগ। বৈধ-অবৈধ মিলে দেশটিতে বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। প্রায় ৪০ বছরের শ্রমবাজারের ইতিহাসে ৮ বছর রয়েছে দেশটিতে কোনো কর্মীই ঢোকেনি। কমপক্ষে ৬ বার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে আবার বন্ধ হয়ে গেছে। দেশটিতে বিপুল পরিমাণ শ্রমিকের চাহিদা সত্ত্বেও অতীতে শ্রমিক রপ্তানিতে নানা অনিয়ম-অস্বচ্ছতার কারণে হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজারটি। ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তির আলোকে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে বড় পরিসরে কর্মী যাওয়া শুরু করে মালয়েশিয়ায়। কিন্তু, ১৮ মাসের মাথায় ফের হোঁচট খেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

গত ২১ আগস্ট মালয়েশিয়া সরকার জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর অনলাইন সিস্টেম সেদেশের কোম্পানি সিনারফ্ল্যাক্সের ‘এসপিপিএ’ বাতিল করেছে। আজ ১ সেপ্টেম্বর থেকে ‘এসপিপিএ’ প্রক্রিয়ায় কোনো কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারবে না। গত ২৮ আগস্ট জনশক্তি বিটে কর্মরত বিভিন্ন মিডিয়ার রিপোর্টারদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশি মাইগ্র্যান্টস (আরবিএম)-এর মিট দ্য প্রেসে অংশ নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি। জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে যে কর্মী যাচ্ছিল সেদেশের বেসরকারি কোম্পানি সিনারফ্ল্যাক্স-এর অনলাইন সিস্টেম ‘এসপিপিএ’ শুধু বাতিল করেছে মালয়েশিয়া। এই সিস্টেমে ১ সেপ্টেম্বর থেকে আর কোনো কর্মী দেশটিতে যাবে না। তবে পাইপলাইনে থাকা ২৫-৩০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারবে।

জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে মনোনীত করে মালয়েশিয়া সরকার। এ নিয়ে শুরু থেকেই বঞ্চিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ক্ষোভ ছিলো। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি ও তাদের ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার অন্যতম ব্যক্তি দাতো আমিন নূরের বিরুদ্ধে শ্রমকিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগের খবর প্রকাশিত হয়। মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই সেদেশের অন্য এজেন্সিগুলোকে বঞ্চিত করে শুধু ১০ রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগকে অনৈতিক ও মনোপলি হিসেবে অভিহিত করা হয়। গত ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন বাংলাদেশের বৈধ সব এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে।

এরই মধ্যে গত ২১ আগস্ট মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনলাইন সার্ভিস প্রোভাইডার সিনারফ্ল্যাক্স চিঠি দিয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে তাদের কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার কোনো কোনো মিডিয়ায় ‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ’ বলে খবর প্রকাশ করলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বঞ্চিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন বায়রা নির্বাচনে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের প্রধান শফিকুল আলম ফিরোজ অভিযোগ করেন, প্রায় ১৪শ এজেন্সিকে বঞ্চিত করে মাত্র ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করেছে। তারা শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এদের অনিয়মের কারণেই মালয়েশিয়া সরকার ‘জিটুজি প্লাস’ প্রক্রিয়ায় কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আগামীতে সব এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সুযোগ পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। অন্যদিকে গত ২৭ আগস্ট মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সেলর মো. সায়েদুল ইসলাম প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একটি পাঠান।

চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘মালয়েশিয়ায় জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি উভয় সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিতে চলমান এই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য মালয়েশিয়া সরকার সিনারফ্ল্যাক্স এসডিএন-বিএইচডি নামের সেদেশের একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়। মালয়েশিয়া সরকারের প্রস্তাবিত ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে এ রিক্রুটিং কার্যক্রম চলমান আছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বর্তমানে নিয়োজিত ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি সৃষ্ট মনোপলির পরিবর্তে অধিকসংখ্যক বা সব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান।

এছাড়া, কর্মী প্রেরণকারী সব দেশ থেকে একই পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু করা হবে বলে জানান।’ শ্রম কাউন্সেলরের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘মালয়েশিয়া সরকারের নতুন চিন্তাভাবনাকে পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে সিনারফ্ল্যাক্স কোম্পানির (এসপিপিএ) সিস্টেম ১ সেপ্টেম্বর থেকে অকার্যকর হবে বলে গত ২১ আগস্ট মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিনারফ্ল্যাক্সের নির্বাহী পরিচালককে জানানো হয়েছে। ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে পরবর্তী কার্যক্রম উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার আলোকে নির্ধারিত হবে। অন্যসব দেশের কর্মী নিয়োগেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া ‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ’ বলে বিভ্রান্ত্রিকর তথ্য পরিবেশন করছে।

প্রকৃতপক্ষে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি। এদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বাংলাদেশ হাইকমিশনের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই উভয় সরকারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে।’১৯৭৮ সালে মাত্র ২৩ জন কর্মীর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বাজার উন্মুক্ত হয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ৪০ বছরে ৮ বছর কোনো কর্মীই দেশটিতে প্রবেশ করেনি। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শুধু সরকারিভাবে দেশটিতে স্বল্প পরিসরে কর্মী গেছে। ১৯৯১ সালে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকেও দেশটিতে কর্মী পাঠানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে বড় পরিসরে দেশটিতে কর্মী গেছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে যথাক্রমে ২ লাখ ৭৩ হাজার ২০১ জন ও এক লাখ ৩১ হাজার ৭৬২ জন।

২০০৯ সালের পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালে জিটুজি তথা শুধু সরকারিভাবে দেশটিতে কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা ছিলো অতি নগন্য। ফলে সমুদ্র পথে পাচার হতে থাকে মানুষ। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবর ও সমুদ্রে ট্রলারডুবিতে বহু মানুষের হতাহতের খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় হইচই ফেলে দেয়। এরই প্রেক্ষাপটে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের পাশাপাশি রিক্রুটিং এজেন্সিকে যুক্ত করে ‘জিটুজি প্লাস’ প্রক্রিয়ায় বড়পরিসরে কর্মী নিতে বাংলাদেশের সাথে চুক্তি সই করে মালয়েশিয়া। কিন্তু, চুক্তির একদিনের মাথায়ই তা স্থগিত ঘোষণা করে দেশটি। এরপর সরকারি ও বেসরকারি তৎপরতায় সচল হয় ‘জিটুজি প্লাস’ প্রক্রিয়া। ২০১৭ সালের ৮ মার্চ থেকে এ পদ্ধতিতে কর্মী যাওয়া শুরু করে।

গত দেড় বছরে প্রায় দুই লাখ ১ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশ করেছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় বলছে, আরও ২৫-৩০ হাজার কর্মী এই প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এদিকে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে মালয়েশিয়ায় জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্টগুলো। সংবাদ সম্মেলনে বায়রার সদ্য বিদায়ী মহাসচিব ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুহুল আমিন স্বপন বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের যেকোনো বক্তব্যকে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অতিরঞ্জিত করে দেশ ও মিডিয়াকে বিভ্রান্ত করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এখনো ৭০ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়া যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে, যাদের ভিসা হয়ে গেছে। অনেকের কলিং ভিসা আসার অপেক্ষায় রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে না এমন কথা মালয়েশিয়া সরকার কখনো বলেনি। মালয়েশিয়া সরকার কোন পদ্ধতিতে কলিং ভিসা প্রসেস করবে, এটা তাদের রাষ্ট্রীয় ব্যাপার। এতদিন এসপিপিএ পদ্ধতিতে ভিসা প্রসেস করতো, এখন ১৪টি দেশের জন্য একই পদ্ধতিতে ভিসা প্রসেস করবে। এতে কাজের স্বচ্ছতা এবং গতি দুটোই বাড়বে।এদিকে গতকাল মধ্যরাত থেকে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ কর্মসূচির সময় শেষ হওয়ায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে সরকার। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানশ্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। সেধের অভিবাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ৩+১ কর্মসূচি শুরু করা হয়। ১০০+৩০০ মোট ৪০০ রিঙ্গিতে একটি বিশেষ পাসের জন্য স্বতন্ত্রভাবে ফি ধার্য করে। যা তাদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন ছাড়া বাড়িতে ফিরে যেতে সক্ষম হবে।

৩০ আগস্ট পর্যন্ত অবৈধ কর্মীদের আত্মসমর্পণ করে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হয়। দেশটির অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরী মোস্তফার আলী বলেন, এই সুযোগ আর বাড়ানো হবে না। ৩১ আগস্ট মধ্যরাত থেকেই অবৈধ শ্রমিকদের গেপ্তারে অভিযানে নামে ইমিগ্রেশন ও স্থানীয় প্রশাসন। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন প্রবাসীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সবসময়ই অস্থিরতার মধ্যে থাকে। এই বন্ধ হয়, এই খোলে। জিটুজি প্লাস পদ্ধতি চালুর দেড় বছরের মাথায় সিস্টেম বাতিলের মাধ্যমে হোঁচট খেয়েছে। একই সময়ে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযান জোরদার হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে প্রায় দুই লাখ বৈধ কাগজপত্র না থাকা প্রবাসী। সবমিলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।

বায়রার সাবেক সভাপতি ও ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ নূর আলী বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার অতীতে কমপক্ষে ৬ বার বন্ধ হয়েছে। কোনো কোনো সময় বাজার ওপেন হয়ে ৫-৬ মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়েছে। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানোর ফলেই অতীতে মালয়েশিয়া সরকার বাজার বন্ধ করেছিল। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকেই সেদেশের সরকার ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে না গিয়ে সম্পূর্ণ নতুনভাবে অনলাইন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছভাবে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আগে ৫০ জনের ডিমান্ড আসলে সেটায় একটা শূন্য বসিয়ে ৫০০ জন করে লোক পাঠানোর অভিযোগ ছিল।

যারা সেখানে গিয়ে কাজ পেত না, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো। জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে যেভাবে লোক যাচ্ছিল, এতে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। মোহাম্মদ নূর আলী বলেন, মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি। অনলাইন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসবে। সেটা খুবই স্বাভাবিক। যেকোনো সিস্টেমকে একটি পর্যায়ে গিয়ে আপডেট করতে হয়। একইভাবে তাদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগও অস্বীকার করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সংকটে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

আপডেট টাইম : ১০:৪৫:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে ফের সংকট ঘনীভূত হয়েছে। একদিকে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে বড় পরিসরে কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া অনলাইন সিস্টেম বাতিলের মাধ্যমে থমকে যাচ্ছে। অন্যদিকে গতকাল থেকে মালয়েশিয়া সরকার যৌথ অভিযান জোরদার করায় সেদেশে অবস্থিত প্রায় দুই লাখ অবৈধ প্রবাসী গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন। সব মিলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সংকট দেখা দিলেও প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও কর্মী পাঠাতে মনোনীত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর পক্ষে দাবি করা হচ্ছে, বাজার নিয়ে কোনো সংকট হবে না। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে। বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া।

১৯৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়া শুরু। মাঝখানে কেটে গেছে প্রায় চার যুগ। বৈধ-অবৈধ মিলে দেশটিতে বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। প্রায় ৪০ বছরের শ্রমবাজারের ইতিহাসে ৮ বছর রয়েছে দেশটিতে কোনো কর্মীই ঢোকেনি। কমপক্ষে ৬ বার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে আবার বন্ধ হয়ে গেছে। দেশটিতে বিপুল পরিমাণ শ্রমিকের চাহিদা সত্ত্বেও অতীতে শ্রমিক রপ্তানিতে নানা অনিয়ম-অস্বচ্ছতার কারণে হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজারটি। ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তির আলোকে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে বড় পরিসরে কর্মী যাওয়া শুরু করে মালয়েশিয়ায়। কিন্তু, ১৮ মাসের মাথায় ফের হোঁচট খেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

গত ২১ আগস্ট মালয়েশিয়া সরকার জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর অনলাইন সিস্টেম সেদেশের কোম্পানি সিনারফ্ল্যাক্সের ‘এসপিপিএ’ বাতিল করেছে। আজ ১ সেপ্টেম্বর থেকে ‘এসপিপিএ’ প্রক্রিয়ায় কোনো কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারবে না। গত ২৮ আগস্ট জনশক্তি বিটে কর্মরত বিভিন্ন মিডিয়ার রিপোর্টারদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশি মাইগ্র্যান্টস (আরবিএম)-এর মিট দ্য প্রেসে অংশ নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি। জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে যে কর্মী যাচ্ছিল সেদেশের বেসরকারি কোম্পানি সিনারফ্ল্যাক্স-এর অনলাইন সিস্টেম ‘এসপিপিএ’ শুধু বাতিল করেছে মালয়েশিয়া। এই সিস্টেমে ১ সেপ্টেম্বর থেকে আর কোনো কর্মী দেশটিতে যাবে না। তবে পাইপলাইনে থাকা ২৫-৩০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারবে।

জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে মনোনীত করে মালয়েশিয়া সরকার। এ নিয়ে শুরু থেকেই বঞ্চিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ক্ষোভ ছিলো। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি ও তাদের ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার অন্যতম ব্যক্তি দাতো আমিন নূরের বিরুদ্ধে শ্রমকিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগের খবর প্রকাশিত হয়। মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই সেদেশের অন্য এজেন্সিগুলোকে বঞ্চিত করে শুধু ১০ রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগকে অনৈতিক ও মনোপলি হিসেবে অভিহিত করা হয়। গত ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন বাংলাদেশের বৈধ সব এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে।

এরই মধ্যে গত ২১ আগস্ট মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনলাইন সার্ভিস প্রোভাইডার সিনারফ্ল্যাক্স চিঠি দিয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে তাদের কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার কোনো কোনো মিডিয়ায় ‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ’ বলে খবর প্রকাশ করলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বঞ্চিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন বায়রা নির্বাচনে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের প্রধান শফিকুল আলম ফিরোজ অভিযোগ করেন, প্রায় ১৪শ এজেন্সিকে বঞ্চিত করে মাত্র ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করেছে। তারা শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এদের অনিয়মের কারণেই মালয়েশিয়া সরকার ‘জিটুজি প্লাস’ প্রক্রিয়ায় কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আগামীতে সব এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সুযোগ পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। অন্যদিকে গত ২৭ আগস্ট মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সেলর মো. সায়েদুল ইসলাম প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একটি পাঠান।

চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘মালয়েশিয়ায় জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি উভয় সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিতে চলমান এই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য মালয়েশিয়া সরকার সিনারফ্ল্যাক্স এসডিএন-বিএইচডি নামের সেদেশের একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়। মালয়েশিয়া সরকারের প্রস্তাবিত ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে এ রিক্রুটিং কার্যক্রম চলমান আছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বর্তমানে নিয়োজিত ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি সৃষ্ট মনোপলির পরিবর্তে অধিকসংখ্যক বা সব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান।

এছাড়া, কর্মী প্রেরণকারী সব দেশ থেকে একই পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু করা হবে বলে জানান।’ শ্রম কাউন্সেলরের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘মালয়েশিয়া সরকারের নতুন চিন্তাভাবনাকে পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে সিনারফ্ল্যাক্স কোম্পানির (এসপিপিএ) সিস্টেম ১ সেপ্টেম্বর থেকে অকার্যকর হবে বলে গত ২১ আগস্ট মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিনারফ্ল্যাক্সের নির্বাহী পরিচালককে জানানো হয়েছে। ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে পরবর্তী কার্যক্রম উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার আলোকে নির্ধারিত হবে। অন্যসব দেশের কর্মী নিয়োগেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া ‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ’ বলে বিভ্রান্ত্রিকর তথ্য পরিবেশন করছে।

প্রকৃতপক্ষে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি। এদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বাংলাদেশ হাইকমিশনের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই উভয় সরকারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে।’১৯৭৮ সালে মাত্র ২৩ জন কর্মীর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বাজার উন্মুক্ত হয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ৪০ বছরে ৮ বছর কোনো কর্মীই দেশটিতে প্রবেশ করেনি। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শুধু সরকারিভাবে দেশটিতে স্বল্প পরিসরে কর্মী গেছে। ১৯৯১ সালে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকেও দেশটিতে কর্মী পাঠানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে বড় পরিসরে দেশটিতে কর্মী গেছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে যথাক্রমে ২ লাখ ৭৩ হাজার ২০১ জন ও এক লাখ ৩১ হাজার ৭৬২ জন।

২০০৯ সালের পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালে জিটুজি তথা শুধু সরকারিভাবে দেশটিতে কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা ছিলো অতি নগন্য। ফলে সমুদ্র পথে পাচার হতে থাকে মানুষ। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবর ও সমুদ্রে ট্রলারডুবিতে বহু মানুষের হতাহতের খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় হইচই ফেলে দেয়। এরই প্রেক্ষাপটে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের পাশাপাশি রিক্রুটিং এজেন্সিকে যুক্ত করে ‘জিটুজি প্লাস’ প্রক্রিয়ায় বড়পরিসরে কর্মী নিতে বাংলাদেশের সাথে চুক্তি সই করে মালয়েশিয়া। কিন্তু, চুক্তির একদিনের মাথায়ই তা স্থগিত ঘোষণা করে দেশটি। এরপর সরকারি ও বেসরকারি তৎপরতায় সচল হয় ‘জিটুজি প্লাস’ প্রক্রিয়া। ২০১৭ সালের ৮ মার্চ থেকে এ পদ্ধতিতে কর্মী যাওয়া শুরু করে।

গত দেড় বছরে প্রায় দুই লাখ ১ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশ করেছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় বলছে, আরও ২৫-৩০ হাজার কর্মী এই প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এদিকে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে মালয়েশিয়ায় জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্টগুলো। সংবাদ সম্মেলনে বায়রার সদ্য বিদায়ী মহাসচিব ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুহুল আমিন স্বপন বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের যেকোনো বক্তব্যকে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অতিরঞ্জিত করে দেশ ও মিডিয়াকে বিভ্রান্ত করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এখনো ৭০ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়া যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে, যাদের ভিসা হয়ে গেছে। অনেকের কলিং ভিসা আসার অপেক্ষায় রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে না এমন কথা মালয়েশিয়া সরকার কখনো বলেনি। মালয়েশিয়া সরকার কোন পদ্ধতিতে কলিং ভিসা প্রসেস করবে, এটা তাদের রাষ্ট্রীয় ব্যাপার। এতদিন এসপিপিএ পদ্ধতিতে ভিসা প্রসেস করতো, এখন ১৪টি দেশের জন্য একই পদ্ধতিতে ভিসা প্রসেস করবে। এতে কাজের স্বচ্ছতা এবং গতি দুটোই বাড়বে।এদিকে গতকাল মধ্যরাত থেকে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ কর্মসূচির সময় শেষ হওয়ায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে সরকার। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানশ্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। সেধের অভিবাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ৩+১ কর্মসূচি শুরু করা হয়। ১০০+৩০০ মোট ৪০০ রিঙ্গিতে একটি বিশেষ পাসের জন্য স্বতন্ত্রভাবে ফি ধার্য করে। যা তাদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন ছাড়া বাড়িতে ফিরে যেতে সক্ষম হবে।

৩০ আগস্ট পর্যন্ত অবৈধ কর্মীদের আত্মসমর্পণ করে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হয়। দেশটির অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরী মোস্তফার আলী বলেন, এই সুযোগ আর বাড়ানো হবে না। ৩১ আগস্ট মধ্যরাত থেকেই অবৈধ শ্রমিকদের গেপ্তারে অভিযানে নামে ইমিগ্রেশন ও স্থানীয় প্রশাসন। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন প্রবাসীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সবসময়ই অস্থিরতার মধ্যে থাকে। এই বন্ধ হয়, এই খোলে। জিটুজি প্লাস পদ্ধতি চালুর দেড় বছরের মাথায় সিস্টেম বাতিলের মাধ্যমে হোঁচট খেয়েছে। একই সময়ে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযান জোরদার হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে প্রায় দুই লাখ বৈধ কাগজপত্র না থাকা প্রবাসী। সবমিলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।

বায়রার সাবেক সভাপতি ও ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ নূর আলী বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার অতীতে কমপক্ষে ৬ বার বন্ধ হয়েছে। কোনো কোনো সময় বাজার ওপেন হয়ে ৫-৬ মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়েছে। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানোর ফলেই অতীতে মালয়েশিয়া সরকার বাজার বন্ধ করেছিল। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকেই সেদেশের সরকার ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে না গিয়ে সম্পূর্ণ নতুনভাবে অনলাইন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছভাবে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আগে ৫০ জনের ডিমান্ড আসলে সেটায় একটা শূন্য বসিয়ে ৫০০ জন করে লোক পাঠানোর অভিযোগ ছিল।

যারা সেখানে গিয়ে কাজ পেত না, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো। জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে যেভাবে লোক যাচ্ছিল, এতে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। মোহাম্মদ নূর আলী বলেন, মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি। অনলাইন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসবে। সেটা খুবই স্বাভাবিক। যেকোনো সিস্টেমকে একটি পর্যায়ে গিয়ে আপডেট করতে হয়। একইভাবে তাদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগও অস্বীকার করেন।