ঢাকা ০৮:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তরুণীর জবানিতে উঠে এলো যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৮
  • ৩৮৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জীবিকার তাগিদে অনেক নারীই শ্রমিক হিসেবে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। কেউ কেউ শেষ সম্বলটুকু পর্যন্ত বিক্রি করে দেন। এর পর সেখানে পৌঁছে দেখতে পান ভিন্ন চিত্র। তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। এমন নির্যাতিত নারীদের সাময়িক আশ্রয় দিতে সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে সেইফ হোম; কিন্তু নির্মম হলেও সত্য, সেই সেইফ হোমেও নিরাপদ নন তারা। সেখানেও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার গল্প উঠে এসেছে সম্প্রতি সৌদি আরবের সেইফ হোম থেকে ফেরা এক নারীর বর্ণনায়।

সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জানিয়ে এর প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে এক নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিটনাশক পানের আগে ওই তরুণী একটি চিরকুট লিখেছেন। এতে তিনি সৌদি আরবের সেইফ হোমের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের কয়েক কর্মীকে অভিযুক্ত করেন। ২৪ বয়সী ওই তরুণীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিত্র।

এদিকে তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন ওই থানার এসআই কবির হোসেন। এতে সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেইফ হোমের চার কর্মচারীকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন-লোকমান, ফারুক, গোলাম ও মেহেদী। নির্যাতিতা তরুণীকেও ওই মামলায় আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

বিয়ে ঠিক হওয়ার পর পরই সৌদি আরবে পাড়ি জমানো ওই তরুণী বলেন, লাগেজটির জন্য পাঁচদিন ঘুরেছি। এরপরও লাগেজ ফেরত পাইনি। এতো কিছুর পর শেষ সম্বল হারানোয় আর কিছু মানতে পারিনি। তাই ভেবেছি আমি সব বলে দেব। আমি যদি মারাও যাই, তাতেও যেন অন্য মেয়েরা মুক্ত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবে আড়াই বছর ছিলাম। এর মধ্যে সেইফ হোমে ১০ মাস। এ সময়ে আমার ওপর কী নির্যাতন হয়েছে সেটি বলে বোঝাতে পারব না। সেইফ হোমের ভেতরেও ধর্ষণ করা হতো। সেইফ হোমে কোনো মেয়ে অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হতো। তাকে দেখাশোনার কথা বলে বের করে নিয়ে আবাসিক হোটেলে রেখে নির্যাতন করা হতো। সেইফ হোমে পাঁচ শতাধিক নারী থাকেন।

ভূক্তভোগী ওই তরুণী আরও বলেন, সেইফ হোমের পিয়নের দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মী মেহেদী হাসান, খাবারের দায়িত্বে থাকা মইনুদ্দিন ও লোকমান এবং চালক গোলাম ও ফাহাদ। এর মধ্যে দূতাবাসের কর্মকর্তা লোকমান মাঝেমধ্যে সেইফ হোমে এসে ‘ফুর্তি’ করে চলে যান। আর মেহেদী মেয়েদের সঙ্গে সেইফ হোমের ভেতরেই রাতে ঘুমান। দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এসব বিষয় বললে তারা জানান, আমাদের কিছু করার নেই। মেহেদী সেখানকার নারীদের বলতেন, তোরা আমার কিছুই করতে পারবি না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই তরুণী বলেন, আমি দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ সবার কাছে আকুতি জানাই-তাদের যেন উদ্ধার করা হয়। বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এজাজ শফিক বলেন, মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই তরুণীকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হবে। ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এই তরুণী ২৭ আগস্ট ঢাকায় ফেরেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

তরুণীর জবানিতে উঠে এলো যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র

আপডেট টাইম : ১১:৫৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জীবিকার তাগিদে অনেক নারীই শ্রমিক হিসেবে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। কেউ কেউ শেষ সম্বলটুকু পর্যন্ত বিক্রি করে দেন। এর পর সেখানে পৌঁছে দেখতে পান ভিন্ন চিত্র। তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। এমন নির্যাতিত নারীদের সাময়িক আশ্রয় দিতে সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে সেইফ হোম; কিন্তু নির্মম হলেও সত্য, সেই সেইফ হোমেও নিরাপদ নন তারা। সেখানেও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার গল্প উঠে এসেছে সম্প্রতি সৌদি আরবের সেইফ হোম থেকে ফেরা এক নারীর বর্ণনায়।

সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জানিয়ে এর প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে এক নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিটনাশক পানের আগে ওই তরুণী একটি চিরকুট লিখেছেন। এতে তিনি সৌদি আরবের সেইফ হোমের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের কয়েক কর্মীকে অভিযুক্ত করেন। ২৪ বয়সী ওই তরুণীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিত্র।

এদিকে তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন ওই থানার এসআই কবির হোসেন। এতে সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেইফ হোমের চার কর্মচারীকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন-লোকমান, ফারুক, গোলাম ও মেহেদী। নির্যাতিতা তরুণীকেও ওই মামলায় আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

বিয়ে ঠিক হওয়ার পর পরই সৌদি আরবে পাড়ি জমানো ওই তরুণী বলেন, লাগেজটির জন্য পাঁচদিন ঘুরেছি। এরপরও লাগেজ ফেরত পাইনি। এতো কিছুর পর শেষ সম্বল হারানোয় আর কিছু মানতে পারিনি। তাই ভেবেছি আমি সব বলে দেব। আমি যদি মারাও যাই, তাতেও যেন অন্য মেয়েরা মুক্ত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবে আড়াই বছর ছিলাম। এর মধ্যে সেইফ হোমে ১০ মাস। এ সময়ে আমার ওপর কী নির্যাতন হয়েছে সেটি বলে বোঝাতে পারব না। সেইফ হোমের ভেতরেও ধর্ষণ করা হতো। সেইফ হোমে কোনো মেয়ে অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হতো। তাকে দেখাশোনার কথা বলে বের করে নিয়ে আবাসিক হোটেলে রেখে নির্যাতন করা হতো। সেইফ হোমে পাঁচ শতাধিক নারী থাকেন।

ভূক্তভোগী ওই তরুণী আরও বলেন, সেইফ হোমের পিয়নের দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মী মেহেদী হাসান, খাবারের দায়িত্বে থাকা মইনুদ্দিন ও লোকমান এবং চালক গোলাম ও ফাহাদ। এর মধ্যে দূতাবাসের কর্মকর্তা লোকমান মাঝেমধ্যে সেইফ হোমে এসে ‘ফুর্তি’ করে চলে যান। আর মেহেদী মেয়েদের সঙ্গে সেইফ হোমের ভেতরেই রাতে ঘুমান। দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এসব বিষয় বললে তারা জানান, আমাদের কিছু করার নেই। মেহেদী সেখানকার নারীদের বলতেন, তোরা আমার কিছুই করতে পারবি না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই তরুণী বলেন, আমি দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ সবার কাছে আকুতি জানাই-তাদের যেন উদ্ধার করা হয়। বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এজাজ শফিক বলেন, মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই তরুণীকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হবে। ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এই তরুণী ২৭ আগস্ট ঢাকায় ফেরেন।