ঢাকা ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাতির ভয়ে স্কুলে আসেন না শিক্ষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৭:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৮
  • ৩৯৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাজানো গুছানো স্কুল চত্বর। আলাদা আলাদা শ্রেণিকক্ষ, জলের ট্যাঙ্ক, খাবার জায়গা, রান্নাঘর, খেলার মাঠসহ কত না সুব্যবস্থা। কিন্তু সমস্যা একটাই; হাতির ভয়! স্কুলের চারপাশে শাল, সেগুনের জঙ্গল থাকায় সেখানে প্রায়ই চড়াও হয় জংলি হাতির দল। যদিও এ নিয়ে মোবাইলে নিয়মিত সতর্কবার্তা পাঠায়।

তার পরেও স্কুলে আসতে চান না ওই স্কুলের একমাত্র শিক্ষক। এই অবস্থার মধ্যেই গত ফেব্রুয়ারিতে অবসর নিয়েছেন তিনি। এরপর আর নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে বন্ধ রয়েছে স্কুলটি। কিন্তু বাচ্চাদের স্কুলে আসা বন্ধ নেই। প্রতিদিন এসে তালাবন্ধ স্কুলের সামনে থেকে তারা ফিরে যাচ্ছে।

এই স্কুলটি অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। বিষ্ণুপুর মহকুমা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে, বেলশুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতগাড়া গ্রামে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুলটি। ফলে শুধু পড়াশোনা নয়; মিড-ডে মিল থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার শিশুরা।

জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রামে ৪০টি পরিবারের বাস। ৩০টি আদিবাসী আর ১০টি লোহার পরিবার। প্রথম থে কে চতুর্থ শ্রেণি অবধি ২৬টি বাচ্চা ওই কেন্দ্রে পড়তো। কারও জমি নেই। দিনমজুর আর শালপাতা সংগ্রহই পেশা। গ্রামের একটি মাত্র পাকা ঘর, সেটাই স্কুল। ১৯৯৯ সালে দু’জন শিক্ষককে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল স্কুলটি। চাঁচর গ্রামের মৃণাল চক্রবর্তী ২০১২-এর জানুয়ারি মাসে অবসর নেওয়ার পরে পাশের বেলশুলিয়া গ্রামের সাধন মহাদণ্ড একাই সামলাছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনিও অবসর নেন। তারপর থেকেই স্কুলে তালা। কেউ পড়াতে আসে না। বন্ধ মিড-ডে মিলও।

স্থানীয় বাসিন্দা মামুনি মান্ডি ও লক্ষ্মীমণি মান্ডি জানান, তারা ভোরে জঙ্গলে শালপাতা তুলতে বেরিয়ে যান। বাচ্চারা স্কুল থাকলে নিশ্চিন্তে থাকতেন। এখন বাচ্চাগুলি গ্রামেই ঘুরে বেড়ায়। সব থেকে কাছের বাগডোবা আর বেনাবান্দি গ্রামে স্কুল রয়েছে। তবে তা পাঁচ থেকে ছ’কিলোমিটার দূরে। তাই জঙ্গলের পথে বাচ্চাদের পাঠাতে চান না তারা।

সমস্যার কথা স্বীকার করে বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ নূর মহম্মদ খান বলেন, ‘ওই স্কুলটি জঙ্গল ঘেরা গ্রামে। কেউ পড়াতে যেতে চান না। প্রশাসনের সব স্তরে জানান আছে। বাচ্চাগুলি লেখাপড়ার পাশাপাশি মিড-ডে মিল থেকেও বঞ্চিত। দুপুরের খাবারটা ওই জঙ্গলঘেরা দিনমজুর পরিবারগুলির কাছে খুব প্রয়োজনের।’

এদিকে বিষ্ণুপুর মহকুমা কর্মকর্তা মানস মণ্ডল বলেন, ‘স্কুল বন্ধ হবে না। সমস্যা জানার পরে বিশেষ অনুমতি নিয়ে বাঁকুড়া জেলা সরকারি ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল-শিক্ষকদের কাছ থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছে। পয়লা সেপ্টেম্বর বিষ্ণুপুরের মহকুমা অফিসেই ইন্টারভিউ হবে।’

সূত্র: আনন্দবাজার

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

হাতির ভয়ে স্কুলে আসেন না শিক্ষক

আপডেট টাইম : ১১:১৭:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাজানো গুছানো স্কুল চত্বর। আলাদা আলাদা শ্রেণিকক্ষ, জলের ট্যাঙ্ক, খাবার জায়গা, রান্নাঘর, খেলার মাঠসহ কত না সুব্যবস্থা। কিন্তু সমস্যা একটাই; হাতির ভয়! স্কুলের চারপাশে শাল, সেগুনের জঙ্গল থাকায় সেখানে প্রায়ই চড়াও হয় জংলি হাতির দল। যদিও এ নিয়ে মোবাইলে নিয়মিত সতর্কবার্তা পাঠায়।

তার পরেও স্কুলে আসতে চান না ওই স্কুলের একমাত্র শিক্ষক। এই অবস্থার মধ্যেই গত ফেব্রুয়ারিতে অবসর নিয়েছেন তিনি। এরপর আর নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে বন্ধ রয়েছে স্কুলটি। কিন্তু বাচ্চাদের স্কুলে আসা বন্ধ নেই। প্রতিদিন এসে তালাবন্ধ স্কুলের সামনে থেকে তারা ফিরে যাচ্ছে।

এই স্কুলটি অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। বিষ্ণুপুর মহকুমা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে, বেলশুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতগাড়া গ্রামে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুলটি। ফলে শুধু পড়াশোনা নয়; মিড-ডে মিল থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার শিশুরা।

জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রামে ৪০টি পরিবারের বাস। ৩০টি আদিবাসী আর ১০টি লোহার পরিবার। প্রথম থে কে চতুর্থ শ্রেণি অবধি ২৬টি বাচ্চা ওই কেন্দ্রে পড়তো। কারও জমি নেই। দিনমজুর আর শালপাতা সংগ্রহই পেশা। গ্রামের একটি মাত্র পাকা ঘর, সেটাই স্কুল। ১৯৯৯ সালে দু’জন শিক্ষককে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল স্কুলটি। চাঁচর গ্রামের মৃণাল চক্রবর্তী ২০১২-এর জানুয়ারি মাসে অবসর নেওয়ার পরে পাশের বেলশুলিয়া গ্রামের সাধন মহাদণ্ড একাই সামলাছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনিও অবসর নেন। তারপর থেকেই স্কুলে তালা। কেউ পড়াতে আসে না। বন্ধ মিড-ডে মিলও।

স্থানীয় বাসিন্দা মামুনি মান্ডি ও লক্ষ্মীমণি মান্ডি জানান, তারা ভোরে জঙ্গলে শালপাতা তুলতে বেরিয়ে যান। বাচ্চারা স্কুল থাকলে নিশ্চিন্তে থাকতেন। এখন বাচ্চাগুলি গ্রামেই ঘুরে বেড়ায়। সব থেকে কাছের বাগডোবা আর বেনাবান্দি গ্রামে স্কুল রয়েছে। তবে তা পাঁচ থেকে ছ’কিলোমিটার দূরে। তাই জঙ্গলের পথে বাচ্চাদের পাঠাতে চান না তারা।

সমস্যার কথা স্বীকার করে বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ নূর মহম্মদ খান বলেন, ‘ওই স্কুলটি জঙ্গল ঘেরা গ্রামে। কেউ পড়াতে যেতে চান না। প্রশাসনের সব স্তরে জানান আছে। বাচ্চাগুলি লেখাপড়ার পাশাপাশি মিড-ডে মিল থেকেও বঞ্চিত। দুপুরের খাবারটা ওই জঙ্গলঘেরা দিনমজুর পরিবারগুলির কাছে খুব প্রয়োজনের।’

এদিকে বিষ্ণুপুর মহকুমা কর্মকর্তা মানস মণ্ডল বলেন, ‘স্কুল বন্ধ হবে না। সমস্যা জানার পরে বিশেষ অনুমতি নিয়ে বাঁকুড়া জেলা সরকারি ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল-শিক্ষকদের কাছ থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছে। পয়লা সেপ্টেম্বর বিষ্ণুপুরের মহকুমা অফিসেই ইন্টারভিউ হবে।’

সূত্র: আনন্দবাজার