হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাত নয়টা পঞ্চাশ মিনিটে ট্রেন ছাড়ার সময়। আমি সময়ের খানিক আগেই কমলাপুর রেল স্টেশনে হাজির। উদ্দেশ্য একদিনে সিলেটের বিছানাকান্দি ঘুরে আসা। একরাত সিলেট সার্কিট হাউসে থেকে পরের দিন ঢাকা ফিরে আসবো। আমার সঙ্গী আরো দু’জন আছে। যদিও তারা এখনো আসেনি। চলে আসবে তাজানি। তারা দু’জন এক সাথেই আছে। সময় একটু একটু করে ট্রেন ছাড়ার কাছাকাছি এগুচ্ছে। এখনো বাকি দুজনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। নয়টা পয়তাল্লিশ মিনিটে সঙ্গী দু’জনের একজনকে কল দিলাম, কল রিসিভ করেই বলছে, আমরা আসছি। ঘড়ির কাটা তত সময়ে আরো কয়েক মিনিট এগিয়ে গেছে। তারপরও তাদের দেখা নেই।
আবারো কল দিলে, ওরা বলছে, আসছি। ততক্ষণে নয়টা পঞ্চাশ বেজে গেছে। এবার মনে বিছুটা সংঙ্কা, তবে কি তারা আসছে না! মনে মনে ভাবলাম শেষ বারের মতো একটা কল দেই। কল দিতেই অপর প্রান্ত থেকে বললো এইত আমরা। সামনে তাকিয়ে দেখি দু’জন দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে। সামনে আসতেই তারা বললো, তারা নাকি স্টেশনেই ছিল, কথাটার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তা নিয়ে কথা বাড়ানো সমচিৎ মনে না হওয়ায় নিরব থাকলাম। তবে তাড়াতাড়ি ট্রেনে উঠার জন্য তাগাদা দিয়ে, নিজেও সহায়তা করলাম। তিনজন যখন ট্রেনে বসি, তখন রাত দশটা বেজে গেছে। তারা আসাতে সস্তি হলেও, অসস্তি আবার বাড়তে থাকলো। ট্রেন ছাড়ছে না।
সময়ের ট্রেন সময়ে ছাড়লে আমার দুই সঙ্গী হয়তো ট্রেন মিস করতো। এখন আর অতিরিক্ত সময় অপেক্ষা করতে মন চাইছে না। পাশে প্লাটফর্ম থেকে পরের ট্রেনও ছেড়ে যাচ্ছে দেখে বিরক্ত আরো বেড়ে যাচ্ছে। সঙ্গী দু’জনও তাদের অসস্তির কথা জানান দিচ্ছে। এক সময় ট্রেন চলার হুইসেল দিলে সস্তি কিছুটা ফিরে আসে। তখন ঘড়ির কাটা সাড়ে দশটা ছাড়িয়ে গেছে। সকাল পাঁচটার পর ট্রেন পৌঁছে দিলো সিলেটে। সেখানে আগে থেকেই কথা বলে রাখা সার্কিট হাউসের উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে সিলেটের কিং ব্রিজের উপর যাওয়ার সময় তিনজনের সেলফি তোলা। এসময় আমার সঙ্গী রহমান আজিজ ট্রেনে একটু ঝামেলায় ফেলেছিল তাও ভুলে যাই। যদিও সে ঝামেলা থেকে ওকে উদ্ধার করতে আমার বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।
অপর সঙ্গী আবু আলীও সাথেই ছিল। সেলফি তোলার সময় একজন পুলিশ বাধা দিলো। কথা নাবাড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলে গেলাম। সার্কিট হাউসে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে, আবারো বেড়িয়ে পরি। দিনটা পহেলা মে থাকায় সমস্ত দোকানপাট আর যানবাহব বন্ধ। ফলে সকালের নাস্তা করা সম্ভব হবে কি না তার নিশ্চয়তা নেই। যে পুলিশ আমাদের কিং ব্রিজ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, সেই পুলিশের সহায়তাই চাইতে হলো। তিনি জানান, আপনারা যেহেতু বিছানাকান্দি যাবেন তাহলে কিছুটা সামনে আম্বরখানা সিএনজি স্টেশন গেলে খাবার হোটেল পাবেন।
ওইখান থেকেই বিছানাকান্দির সিএনজিও পাবেন। আম্বরখানা সিএনজি স্টেশন যেতে জন প্রতি ১০ টাকা সিএনজি ভাড়া। সেখানে গেলে দু’তিনটা হোটেল খোলা আছে। এর মধ্যে ভাল একটা হোটেলে পরোটা, ভাজি আর ডিম খেয়ে বেড়িয়েই সিএনজির খোজ শুরু করলাম। একটু সামনে যেতেই লম্বা লাইনে লাইনে একটার পেছনে একটা সিএনজি দাড়িয়ে আছে। কাছে যেতেই ‘বিছনাকান্দি যাইবেন’, ভাড়া জানতে চাইলে দুই হাজার টাকা দাম হাকেন। এর নিচে কেউ যাবে না। আর কেই সিরিয়ালও ভঙ্গ করবে না।
কিন্তু একদাম এক রেট বিষয়টি আমার ভাল না লাগায় আমরা একটু সামনের দিকে এগুতেই অপর দিক থেকে আসা এক সিএনজি চালককে বললাম বিছানাকান্দি যাবা। সে যেতে চাইলে, দরমাম করে বারো শত টাকায় যেতে রাজি হলে আমরা তার সিএনজিতে উঠে পড়ি। সিএনজি কিছু দূর এগুতেই পেছন থেকে আরেকটা সিএনজি আমাদের সিএনজিকে ধাওয়া করা শুরু করে। ওই সিএনজি আমাদের সিএনজিকে আটকানার চেষ্টা করছে। বিপদ বুঝে আমরা কিংকতর্ব্যবিমূঢ় হয়ে পরি।