ম্যানহাটনে মাটি খুঁজে পায়নি মনি। বললো, ৮ দিন কোথাও মাটি দেখলাম না। ৮ দিন রাত দেখিনি। ২৪ ঘণ্টা মানুষ চলাচল করছেন। সবাই ব্যস্ত। কুলাউড়া উপজেলার ঘরগাঁও গ্রামের সহজ-সরল গরিব ঘরের সাধারণ মেয়ে মনি বেগম। ৬ ভাই-বোনের সংসারে ৪ বোনের সর্বকনিষ্ঠ। সুলতানপুর বালিকা স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিনিধি হয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেয়। সে ২০শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক পৌঁছায়।
২৮শে সেপ্টেম্বর ঢাকার উদ্দেশে নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করে। ৩০শে সেপ্টেম্বর রাতে মনি কুলাউড়ায় পৌঁছায়। এ সময় তার সহপাঠীসহ বিপুলসংখ্যক লোক তাকে অভ্যর্থনা জানান। মনি নিউ ইয়র্কে ৮ দিনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলে, ভাবিনি এভাবে সবকিছু সহজেই হয়ে যাবে। কৃতজ্ঞ আমি সেভ দ্য চিলড্রেনের কাছে আমাকে এ সুযোগ দেয়ার জন্য।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমি বাল্যবিবাহ, মা ও শিশু সুরক্ষা, শিশু নির্যাতন নিয়ে কথা বলেছি। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, সাধারণ পরিষদের সভাপতি, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট, মিসেস ম্যান্ডেলা, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিসহ সেভ দ্য চিলড্রেনের ৫ জন সিইওর সঙ্গে মতবিনিময় করেছি।
এ ছাড়া কেমন কাটলো এ কদিন- এক প্রশ্নের উত্তরে সে জানালো, ভালই লেগেছে। বাসে করে ঘুরে বেড়িয়েছি। মা-বাবাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি প্রতিদিন। হোটেল হলিডে ইনের পাশেই ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট রুচি। প্রতিদিন ভাত খেয়েছি। ভাত ছাড়া অন্য কিছু ভাল লাগতো না। মাটির গন্ধে বেড়ে ওঠা মনি বেগম বললো, যেদিকে তাকাই উঁচু উঁচু বিল্ডিং। মনে মনে মাটি খুঁজেছি, কোথাও পাইনি।
উল্লেখ্য, বিশ্বের ১৯টি দেশ থেকে ১৯ জন প্রতিনিধি জাতিসংঘের অধিবেশনে আসেন সেভ দ্য চিলড্রেনের উদ্যোগে। মনি বেগম প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশকে। সঙ্গে গাইড হিসেবে আসেন সেফ দ্য চিলড্রেনের সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার তাহরীম জিনাত চৌধুরী। সারাক্ষণ মনি বেগমের সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে ছিলেন তিনি।
বললেন, মনি খুব সহজ-সরল মেয়ে। গ্রামের লাজুকতা সে ধরে রাখলেও বাঘা বাঘা সরকারপ্রধানের সঙ্গে শিশু-সচেতনতা বিষয়ে কথা বলেছে সাহসের সঙ্গে। ২৮শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক ত্যাগের আগে মনির সঙ্গে দেখা করেন কুলাউড়া বাংলাদেশী অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকার কর্মকর্তারা। সংগঠনের সভাপতি আতিকুল হক শাহীন, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন মঈন চৌধুরী, সিরাজ উদ্দিন সোহাগ, জাবেদ আহমেদ, ইলিয়াস খসরু, শাহেদ আলী, আবু জাহাঙ্গীর উদ্দিন ও জাবেদ খসরু।
এ সময় তারা মনি বেগমের সঙ্গে বেশ কিছু সময় কাটান ও কিছু উপহার সামগ্রী তুলে দেন। স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে সফরসঙ্গী তাহরীম জিনাত চৌধুরী বলেন, যেহেতু একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে এসেছেন, অনেকেই মনে করেছিলেন মনি বেগম তার সফরসঙ্গী। বিষয়টি আসলে সেটা নয়। সেভ দ্য চিলড্রেনের উদ্যোগেই মনি বেগম জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এসেছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সে শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, বাল্যবিবাহ রোধ, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে মা ও শিশুর চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, শিশু নির্যাতন বন্ধসহ শিশুবিষয়ক নানা কথা তুলে ধরে বক্তৃতার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে।-এমজমিন