ঢাকা ০৮:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হজ আমাদের ধৈর্যের শিক্ষা দেয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩১:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুলাই ২০১৮
  • ৩৭৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলছে হজ মৌসুম। শুরু হয়েছে হজ ফ্লাইট। আল্লাহর ঘরের পবিত্র জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আল্লাহর অসংখ্য বান্দা মক্কাপানে ছুটে যাচ্ছেন। হৃদয়ভরা আবেগ, ভালোবাসা ও মোমিনের চির কাক্সিক্ষত স্বপ্নপূরণে ছুটে চলেছেন পবিত্র কাবা গৃহের উদ্দেশে।

যারা হজ করতে ইচ্ছুক তাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হজের বিধানগুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা। ভালোভাবে জেনে-বুঝে না নিলে নানা ধরনের ভুলভ্রান্তির আশঙ্কা থাকে। এমনকি কখনও কখনও এমন ভুলও হয় যে, আমলটিই বরবাদ হয়ে যায়। এ কারণে যে-কোনো ইবাদত বা আমলের আগে সে সংক্রান্ত মৌলিক বিধানগুলো জেনে নেওয়া খুব প্রয়োজন।

দ্বিতীয় কর্তব্য, হজের শিক্ষা ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানা এবং হজের বিধিবিধানের মধ্যে যে নৈতিক ও চারিত্রিক শিক্ষা রয়েছে, তা অর্জনের চেষ্টা করা। হজ-সম্পর্কিত আয়াত ও হাদিসগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে দেখা যাবে, হজের মধ্যেও অনেক চারিত্রিক শিক্ষা রয়েছে। এটি ইসলামের সব ইবাদতেরই বৈশিষ্ট্য। নামাজ বলুন, রোজা বলুন, জাকাত বলুন, হজ বলুন সবকিছুতেই রয়েছে অনেক চারিত্রিক শিক্ষা।

আমরা যদি হজের বিধানগুলো এবং এর শিক্ষা ও তাৎপর্য নিয়ে চিন্তা করি, তাহলে দেখতে পাব, হজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদের অনেক গুণ ও যোগ্যতার অধিকারী করতে চেয়েছেন। আমরা যদি সেসব গুণ ও যোগ্যতা অর্জন করতে চাই এবং সেজন্য চেষ্টা-সাধনা চালিয়ে যাই, তাহলে আল্লাহর অনুগ্রহে আমরা তা অর্জন করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।

হজের অনেক বড় এক শিক্ষা সবরের শিক্ষা, ধৈর্যের শিক্ষা। হজে খুব বেশি প্রয়োজন হয় ধৈর্যের। সাধারণত হজের সফর দীর্ঘ হয়ে থাকে এবং হজের সফরে এমন অনেক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যা অন্তরে ক্রোধের জন্ম দেয়, সহ্য করে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ধৈর্যের প্রয়োজন হয় অনেক। ধৈর্যের মাধ্যমে এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। হজ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে তিনটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন ১. কোনো অশ্লীল কথা ও কাজে লিপ্ত হবে না। ২. কোনো গোনাহ ও পাপাচারে লিপ্ত হবে না। ৩. কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়া-বিবাদ করবে না। (সূরা বাকারা : ১৯৭)।

তিন ক্ষেত্রেই প্রচুর ধৈর্যের প্রয়োজন। আলেমরা সবরের যে মৌলিক তিনটি ক্ষেত্র নির্দেশ করেছেন এর একটি হচ্ছে গোনাহ থেকে নিজেকে সংযত রাখা, দূরে রাখা। অশ্লীল কথা, কাজ ও পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবর ও সংযমের খুব প্রয়োজন। মনে করতে হবে, রমজানের এক মাস যে সংযমের অনুশীলন হয়েছে হজের সফরে আমার তার ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়ে যাবে। হজ-ওমরার সফরে বিশেষভাবে পরীক্ষা হয় পর্দার ও দৃষ্টির। এ দুই ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকা উচিত। তৃতীয় বিষয় ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হওয়া। ঝগড়া ইসলামের দৃষ্টিতে বড় নিন্দনীয়। কোনো সভ্য-ভদ্র ব্যক্তি কখনও ঝগড়া করতে পারে না। আর এটা সবসময়ের বিধান।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ‘যে মিথ্যা ত্যাগ করে, যা বাতিল ও ত্যাগ করারই বিষয় তার জন্য জান্নাতের প্রান্তে ঘর নির্মাণ করা হয়। আর যে ন্যায়ের ওপর থেকেও ঝগড়া ত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের মধ্যখানে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়। আর যে তার আখলাক চরিত্রকে সুন্দর করে তার জন্য জান্নাতের উঁচু স্থানে ঘর নির্মাণ করা হয়।’ (তিরমিজি : ১৯৯৩; ইবনে মাজাহ : ৫১)।

ঝগড়া না করার নির্দেশ ইসলামে সবসময়ের। তবে হজের সময় এ নির্দেশটি আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এটা কোরআনের এক অনুপম উপস্থাপনভঙ্গি। যে জিনিসের বেশি প্রয়োজন কোরআন তা বিশেষভাবে উল্লেখ করে। কারণ হজের সফরে এমন সব পরিস্থিতি তৈরি হয়ে থাকে যাতে ঝগড়া হওয়াটা স্বাভাবিক। এজন্য পবিত্র কোরআনে হজের সফরে ঝগড়া থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিশেষভাবে ‘তুমি তো আল্লাহর ঘরের মেহমান।

আল্লাহর ঘরের মেহমানের জন্য কি কারও সঙ্গে ঝগড়া করা সাজে!’ যদি কোনো মুসলমান কোরআনের এ নির্দেশ পালন করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় আমাকে যত কষ্টই দেওয়া হোক, আমার সঙ্গে যত দুর্ব্যবহারই করা হোক, আমার সঙ্গে যত প্রতিশ্রুতিই ভঙ্গ করা হোক কোরআন বলে দিয়েছে, হজের মধ্যে কোনো ঝগড়া নেই, তাই আমি কারও সঙ্গে ঝগড়া করব না। এ প্রতিজ্ঞা যদি কেউ করে নিতে পারে, তাহলে হজের মাধ্যমে যে ধৈর্য ও সহনশীলতা এবং সবর ও সংযমের গুণ তার অর্জিত হবে, তার কি কোনো তুলনা হতে পারে?

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হজ আমাদের ধৈর্যের শিক্ষা দেয়

আপডেট টাইম : ১১:৩১:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুলাই ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলছে হজ মৌসুম। শুরু হয়েছে হজ ফ্লাইট। আল্লাহর ঘরের পবিত্র জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আল্লাহর অসংখ্য বান্দা মক্কাপানে ছুটে যাচ্ছেন। হৃদয়ভরা আবেগ, ভালোবাসা ও মোমিনের চির কাক্সিক্ষত স্বপ্নপূরণে ছুটে চলেছেন পবিত্র কাবা গৃহের উদ্দেশে।

যারা হজ করতে ইচ্ছুক তাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হজের বিধানগুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা। ভালোভাবে জেনে-বুঝে না নিলে নানা ধরনের ভুলভ্রান্তির আশঙ্কা থাকে। এমনকি কখনও কখনও এমন ভুলও হয় যে, আমলটিই বরবাদ হয়ে যায়। এ কারণে যে-কোনো ইবাদত বা আমলের আগে সে সংক্রান্ত মৌলিক বিধানগুলো জেনে নেওয়া খুব প্রয়োজন।

দ্বিতীয় কর্তব্য, হজের শিক্ষা ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানা এবং হজের বিধিবিধানের মধ্যে যে নৈতিক ও চারিত্রিক শিক্ষা রয়েছে, তা অর্জনের চেষ্টা করা। হজ-সম্পর্কিত আয়াত ও হাদিসগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে দেখা যাবে, হজের মধ্যেও অনেক চারিত্রিক শিক্ষা রয়েছে। এটি ইসলামের সব ইবাদতেরই বৈশিষ্ট্য। নামাজ বলুন, রোজা বলুন, জাকাত বলুন, হজ বলুন সবকিছুতেই রয়েছে অনেক চারিত্রিক শিক্ষা।

আমরা যদি হজের বিধানগুলো এবং এর শিক্ষা ও তাৎপর্য নিয়ে চিন্তা করি, তাহলে দেখতে পাব, হজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদের অনেক গুণ ও যোগ্যতার অধিকারী করতে চেয়েছেন। আমরা যদি সেসব গুণ ও যোগ্যতা অর্জন করতে চাই এবং সেজন্য চেষ্টা-সাধনা চালিয়ে যাই, তাহলে আল্লাহর অনুগ্রহে আমরা তা অর্জন করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।

হজের অনেক বড় এক শিক্ষা সবরের শিক্ষা, ধৈর্যের শিক্ষা। হজে খুব বেশি প্রয়োজন হয় ধৈর্যের। সাধারণত হজের সফর দীর্ঘ হয়ে থাকে এবং হজের সফরে এমন অনেক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যা অন্তরে ক্রোধের জন্ম দেয়, সহ্য করে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ধৈর্যের প্রয়োজন হয় অনেক। ধৈর্যের মাধ্যমে এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। হজ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে তিনটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন ১. কোনো অশ্লীল কথা ও কাজে লিপ্ত হবে না। ২. কোনো গোনাহ ও পাপাচারে লিপ্ত হবে না। ৩. কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়া-বিবাদ করবে না। (সূরা বাকারা : ১৯৭)।

তিন ক্ষেত্রেই প্রচুর ধৈর্যের প্রয়োজন। আলেমরা সবরের যে মৌলিক তিনটি ক্ষেত্র নির্দেশ করেছেন এর একটি হচ্ছে গোনাহ থেকে নিজেকে সংযত রাখা, দূরে রাখা। অশ্লীল কথা, কাজ ও পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবর ও সংযমের খুব প্রয়োজন। মনে করতে হবে, রমজানের এক মাস যে সংযমের অনুশীলন হয়েছে হজের সফরে আমার তার ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়ে যাবে। হজ-ওমরার সফরে বিশেষভাবে পরীক্ষা হয় পর্দার ও দৃষ্টির। এ দুই ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকা উচিত। তৃতীয় বিষয় ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হওয়া। ঝগড়া ইসলামের দৃষ্টিতে বড় নিন্দনীয়। কোনো সভ্য-ভদ্র ব্যক্তি কখনও ঝগড়া করতে পারে না। আর এটা সবসময়ের বিধান।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ‘যে মিথ্যা ত্যাগ করে, যা বাতিল ও ত্যাগ করারই বিষয় তার জন্য জান্নাতের প্রান্তে ঘর নির্মাণ করা হয়। আর যে ন্যায়ের ওপর থেকেও ঝগড়া ত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের মধ্যখানে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়। আর যে তার আখলাক চরিত্রকে সুন্দর করে তার জন্য জান্নাতের উঁচু স্থানে ঘর নির্মাণ করা হয়।’ (তিরমিজি : ১৯৯৩; ইবনে মাজাহ : ৫১)।

ঝগড়া না করার নির্দেশ ইসলামে সবসময়ের। তবে হজের সময় এ নির্দেশটি আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এটা কোরআনের এক অনুপম উপস্থাপনভঙ্গি। যে জিনিসের বেশি প্রয়োজন কোরআন তা বিশেষভাবে উল্লেখ করে। কারণ হজের সফরে এমন সব পরিস্থিতি তৈরি হয়ে থাকে যাতে ঝগড়া হওয়াটা স্বাভাবিক। এজন্য পবিত্র কোরআনে হজের সফরে ঝগড়া থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিশেষভাবে ‘তুমি তো আল্লাহর ঘরের মেহমান।

আল্লাহর ঘরের মেহমানের জন্য কি কারও সঙ্গে ঝগড়া করা সাজে!’ যদি কোনো মুসলমান কোরআনের এ নির্দেশ পালন করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় আমাকে যত কষ্টই দেওয়া হোক, আমার সঙ্গে যত দুর্ব্যবহারই করা হোক, আমার সঙ্গে যত প্রতিশ্রুতিই ভঙ্গ করা হোক কোরআন বলে দিয়েছে, হজের মধ্যে কোনো ঝগড়া নেই, তাই আমি কারও সঙ্গে ঝগড়া করব না। এ প্রতিজ্ঞা যদি কেউ করে নিতে পারে, তাহলে হজের মাধ্যমে যে ধৈর্য ও সহনশীলতা এবং সবর ও সংযমের গুণ তার অর্জিত হবে, তার কি কোনো তুলনা হতে পারে?