ভারতের রেলওয়েতে এক মুসলিম তরুণীকে প্রথম মহিলা গেটওম্যান চাকরি নিয়ে এক অনন্য ইতিহাস গড়লেন।
মির্জা সালমা বেগ (২২) উত্তর প্রদেশের লখনৌয়ের মল্লারপুরের স্টেশনের রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে গেটওম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভারতীয় রেলের ইতিহাসে তিনিই প্রথম এবং একমাত্র মহিলা গেটওম্যান।
জানা যায়, সাধারণত গেটম্যান পদে মেয়েদের পরিবর্তে ছেলেরা চাকরির আবেদন করে থাকেন। যদিও রেলওয়ে নিয়মে এই পদে ছেলে এবং মেয়ে সকলেই আবেদন করতে পারে।
মির্জা সালমা বেগ নামের ওই তরুণী নিজেই বেছে নিয়েছেন গেটওম্যানের চাকরি। তিনি এখন স্টেশনে ট্রেন ঢোকার আগে লেভেল ক্রসিংয়ের গেট ফেলা এবং ট্রেন চলে গেলে গেট তোলার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
উত্তর রেলের মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা নীরজ শর্মা জানান, ‘গেটম্যান পদের জন্য পুরুষ এবং মহিলা সবাই আবেদন করতে পারেন। যদিও এই পদে মহিলারা খুব একটা আবেদন করেন না। এর আগে কোনো মহিলাকে এই পদে নিয়োগও দেয়া হয়নি। সালমাই প্রথম মহিলা, যাকে রেলওয়ে দপ্তর গেটম্যান হিসেবে নিয়োগ করেছে।’
অভাবের সংসারে বড় হয়েছেন সালমা। তার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। গেটওম্যান হিসেবে তার বাবা অবসর নেয়ার পর পেনশনের টাকায় কোনোরকমে তাদের সংসার চলে।
অবশেষে সংসারের হাল ধরতে সদ্য স্নাতক হওয়া সালমা গেটম্যান পদে চাকরিতে যোগ দেন।
তার আত্মীয়রা অবশ্য এই কাজে যোগ দেয়ায় কেউ কেউ বলেছিলেন, ‘এটা মেয়েদের কাজ নয়’, ‘এই কাজ এ মেয়ে কিভাবে করবে’ ইত্যাদি। সালমা এসব ভুল প্রমাণিত করে কৃতিত্বের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করে সবাইকে অবাক করে দিলেন ।
দুই বছর হলো তিনি এ পেশায় আছেন।
‘আমার মা পক্ষাঘাতগ্রস্ত আর ছোট একটি বোনের দেখাশুনা করতে হয় আমাকে। আমার পরিবারে কোনো ছেলে নেই কিন্তু তা নিয়ে বাবা মায়ের কোনো আফসোসও নেই। তাদের কাছে মেয়ে হলো শক্তি,’ বলছিলেন সালমা।
‘গেটম্যানের কাজ সহজ মনে হলেও এখানে বিশাল দায়িত্ব রয়েছে। সামান্য ভুল হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি খুশি যে আমি প্রাত্যহিক এই ট্রেন যাত্রার একটি অংশ,’ গর্বভরেই বলছিলেন সালমা।-হিন্দুস্তান টাইমস