ঢাকা ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী মতলবের নারীরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:০০:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৩১০ বার

অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা আজ সমান তালে এগিয়ে চলেছে। এমন এক সময় ছিল যখন নারীরা শুধু পুরুষদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার হতো। কিন্তু সমাজ পরিবর্তণ হয়েছে, সভ্যতার উন্নতি হয়েছে আর নারীরা তাদের গণ্ডির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে সমাজ, দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে পুরুষ এবং নারীকে সমান অধিকার নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তেমনি ভাবে কৃষিকাজ ও বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করে অনেক নারী আজ স্বাবলম্বী হয়েছে। অন্ধকার থেকে তারা আজ আলোর পথে ধাবিত হচ্ছে। মতলব উত্তর উপজেলার চরকাশিম এলাকায় কয়েকজন নারী কৃষি শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
এলাকায় সরেজমিন ঘরে কয়েকজন নারী কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা তাদের জীবনচিত্র তুলে ধরেন। তাদের মধ্যে একজন নারী কৃষক হাফিজা বেগম (৫০) জানায়, এক সময় তার স্বামীর সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। এক বেলা ভাত বা রুটি জুটলেও অন্য বেলা না খেয়ে থাকতে হতো। দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করেছেন। স্থানীয় কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদারের সহযোগিতায় ও পরামর্শে তিনি কৃষি কাজের ওপর এক মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী মতলবের নারীরা
প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরে তার স্বামীকে অন্যের জমি বর্গা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। স্ত্রীর কথা মতো তার স্বামী আইনুল হক ৭৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে এক পাশে ধান চাষ এবং অপর পাশে সবজি আবাদ শুরু করেন। স্বামী-স্ত্রী দিনরাত ক্ষেতে পরিশ্রম শুরু করেন। হাফিজা বেগমের সবজির মধ্যে লাউ, চালকুমড়া, টমেটো, ঝিঙা, শসা, করলা, ঢেঁড়স, মুলা, গাজর, কপিসহ নানা প্রজাতির শাকসবজি রয়েছে। ভোর বেলায় বিভিন্ন হাটবাজার থেকে ক্ষেতে বেপারিরা (পাইকাররা) এসে নগদ টাকায় সবজি কিনে নিয়ে যায়। হাফিজা বেগম বলেন, আমার স্বামী সবজি বিক্রির টাকা হাতে নেয় না। আমার ওপরই ছেড়ে দিয়েছে সংসারের হাল। সংসারের খরচ মিটিয়ে ছেলেমেয়েকে কলেজে ও স্কুলে পড়াচ্ছে। সপ্তাহে খরচ বাদে তার ৪/৫ হাজার টাকা তার মুনাফা থাকে। এখন তাদের সুখের সংসার।
কৃষাণীদের মধ্যে মিনা বেগম বলেন, পুরুষের পাশাপাশি সমান কাজ করেও আমরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। স্বামীর সঙ্গে সমান কাজ করলেও অনেক সময় স্বামী আমাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন। ফসল ও সবজি বিক্রির টাকা হাতে দেয় না। স্বামী নিজ হাতে খরচ করে। আমি টাকা চাইলে তিনি নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। তার মতে, আমি নারী বলে কি আমার অধিকার নেই। নায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তিনি জোর দাবি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী মতলবের নারীরা

আপডেট টাইম : ০৮:০০:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা আজ সমান তালে এগিয়ে চলেছে। এমন এক সময় ছিল যখন নারীরা শুধু পুরুষদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার হতো। কিন্তু সমাজ পরিবর্তণ হয়েছে, সভ্যতার উন্নতি হয়েছে আর নারীরা তাদের গণ্ডির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে সমাজ, দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে পুরুষ এবং নারীকে সমান অধিকার নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তেমনি ভাবে কৃষিকাজ ও বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করে অনেক নারী আজ স্বাবলম্বী হয়েছে। অন্ধকার থেকে তারা আজ আলোর পথে ধাবিত হচ্ছে। মতলব উত্তর উপজেলার চরকাশিম এলাকায় কয়েকজন নারী কৃষি শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
এলাকায় সরেজমিন ঘরে কয়েকজন নারী কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা তাদের জীবনচিত্র তুলে ধরেন। তাদের মধ্যে একজন নারী কৃষক হাফিজা বেগম (৫০) জানায়, এক সময় তার স্বামীর সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। এক বেলা ভাত বা রুটি জুটলেও অন্য বেলা না খেয়ে থাকতে হতো। দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করেছেন। স্থানীয় কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদারের সহযোগিতায় ও পরামর্শে তিনি কৃষি কাজের ওপর এক মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী মতলবের নারীরা
প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরে তার স্বামীকে অন্যের জমি বর্গা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। স্ত্রীর কথা মতো তার স্বামী আইনুল হক ৭৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে এক পাশে ধান চাষ এবং অপর পাশে সবজি আবাদ শুরু করেন। স্বামী-স্ত্রী দিনরাত ক্ষেতে পরিশ্রম শুরু করেন। হাফিজা বেগমের সবজির মধ্যে লাউ, চালকুমড়া, টমেটো, ঝিঙা, শসা, করলা, ঢেঁড়স, মুলা, গাজর, কপিসহ নানা প্রজাতির শাকসবজি রয়েছে। ভোর বেলায় বিভিন্ন হাটবাজার থেকে ক্ষেতে বেপারিরা (পাইকাররা) এসে নগদ টাকায় সবজি কিনে নিয়ে যায়। হাফিজা বেগম বলেন, আমার স্বামী সবজি বিক্রির টাকা হাতে নেয় না। আমার ওপরই ছেড়ে দিয়েছে সংসারের হাল। সংসারের খরচ মিটিয়ে ছেলেমেয়েকে কলেজে ও স্কুলে পড়াচ্ছে। সপ্তাহে খরচ বাদে তার ৪/৫ হাজার টাকা তার মুনাফা থাকে। এখন তাদের সুখের সংসার।
কৃষাণীদের মধ্যে মিনা বেগম বলেন, পুরুষের পাশাপাশি সমান কাজ করেও আমরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। স্বামীর সঙ্গে সমান কাজ করলেও অনেক সময় স্বামী আমাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন। ফসল ও সবজি বিক্রির টাকা হাতে দেয় না। স্বামী নিজ হাতে খরচ করে। আমি টাকা চাইলে তিনি নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। তার মতে, আমি নারী বলে কি আমার অধিকার নেই। নায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তিনি জোর দাবি জানান।