হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমাদের জন্য বিশ্বকাপ শুরু হবে এখন থেকে- নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করার পর এমনটাই বলেছিলেন আর্জেন্টিনার সেন্টার-ব্যাক মার্কোস রোহো। রোহোর এ কথাটা বলতে পারেন আর্জেন্টিনা দলের বাকি সবাই। বলতে পারে বিশ্বকাপে টিকে থাকা বাকি দলগুলোও। বিশ্বকাপের আসল লড়াই তো শুরু হবে আজ নকআউট পর্ব থেকেই! ৩২ দলের মধ্য থেকে গ্রুপ পর্বের কঠিন সব সমীকরণ মিলিয়ে নকআউট পর্বে এসেছে ১৬টি দল। আর এই ১৬ দলের জন্য বিশ্বকাপ এখন খুব সহজ সমীকরণের এক টুর্নামেন্ট- জিতলে পরের রাউন্ড, হারলে বাদ।
ফাইনালের পথে সব দলের সামনেই এখন আর মাত্র তিনটি ম্যাচ। কিন্তু সেই পথটা কি সবার জন্য সমান? এই বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর দলগুলোকে দেখে অন্তত সেটা বলা যাচ্ছে না। একদিকে আছে সাবেক চার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন- ব্রাজিল, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে।
সঙ্গে আছে গত ইউরোর চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালও। আর অন্যদিকে স্পেন ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে আছে এবারের বিশ্বকাপের স্বাগতিক দল রাশিয়াও, ফিফা র্যাংকিংয়ে যাদের অবস্থান ৭০তম।
দু’দিকের এমন ভারসাম্যহীনতার মূল কারণ নিশ্চিতভাবেই গ্রুপ পর্বের কিছু অপ্রত্যাশিত ফল। আর অপ্রত্যাশিত ফলের কথা বললে সবার আগে আসবে জার্মানির নাম। ২০১৪ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন, বিশ্বকাপের আসরে বরাবরই পরাক্রমশালী এক শক্তি জার্মানরা এবার বাদ পড়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই! ডাই ম্যানশাফটদের বিদায়ে ‘এফ’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ হিসেবে উঠেছে যথাক্রমে সুইডেন ও মেক্সিকো।
আবার আর্জেন্টিনার কথাই ধরুন। ‘ডি’ গ্রুপে থাকা লিওনেল মেসির দল নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে, সেটাও আবার শেষ ম্যাচে পাওয়া জয়ের বদৌলতে। ‘এইচ’ গ্রুপ থেকে ছিটকে গেছে পোল্যান্ডের মতো দল, শেষ ষোলোতে সেই গ্রুপের দুই প্রতিনিধি কলম্বিয়া ও জাপান।
তবে গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার খাদের কিনারা থেকে নকআউট নিশ্চিত করাটাই আবার শেষ ষোলো এবং সামনে থাকা বাকি রাউন্ডগুলোকে জমজমাট করে তুলছে। আজকের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দল ফ্রান্সের। তবে ফেভারিট হলেও, বা নিজেদের গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নকআউট পর্বে এলেও এখনও নিজেদের সেরা খেলাটা উপহার দিতে পারেনি ফরাসিরা। অন্যদিকে কোনোমতে মান রক্ষা করা আর্জেন্টিনা শেষ ম্যাচে কিছুটা ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। আজকের আরেক ম্যাচে লড়বে লুইস সুয়ারেজের উরুগুয়ে ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। ‘এ’ গ্রুপ থেকে উরুগুয়ে নিজেদের সব ম্যাচ জিতে শেষ ষোলোয় আসলেও ইউরোজয়ী পর্তুগাল গ্রুপ পর্বে অনেকটাই বিবর্ণ ছিল। যদিও রোনালদোর ছন্দে থাকাটা তাদের জন্য বড় ভরসা।
ফুটবল দর্শকদের জন্য দুটি ম্যাচই খুলে রেখেছে বেশ কিছু সম্ভাবনার দ্বার। এই দুই ম্যাচেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে পারেন বর্তমান সময়ে বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম বড় দুই তারকা মেসি ও রোনালদো। হয়তো আর কোনোদিন বিশ্বকাপের মঞ্চে নাও দেখা যেতে পারে তাদের। আবার এমনও হতে পারে, দু’জনের দলই চলে যেতে পারে পরের রাউন্ডে। সেক্ষেত্রে কোয়ার্টার ফাইনালে অপেক্ষা করবে রোনালদো বনাম মেসির ‘ক্ল্যাসিকো’ লড়াই।
শেষ ষোলোর লড়াইয়ে আগামী ২ জুলাই পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল মুখোমুখি হবে মেক্সিকোর। গ্রুপ পর্বের প্রতিটি ম্যাচেই ক্রমোন্নতির ছাপ রাখা ব্রাজিলই নিশ্চিতভাবেই ফেভারিট। আর ‘ফেভারিট-তত্ত্ব’ যদি কাজে লাগে, সেক্ষেত্রে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল পাবে ২ জুলাইয়ের আরেক ম্যাচে মাঠে নামা বেলজিয়াম আর জাপানের মধ্যকার জয়ী দলকে। আবারও, ‘ফেভারিট-তত্ত্ব’ কাজে লাগলে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম।
অন্যদিকে ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের সামনে আগামী ১ জুলাই শেষ ষোলোর প্রতিপক্ষ রাশিয়া। দু’দলের সামর্থ্যের তফাৎটা বেশ স্পষ্ট হওয়াতেই শেষ ষোলোর আরেক লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়া বনাম ডেনমার্ক ম্যাচের জয়ী দল কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনকে পাচ্ছে, সেটা হয়তো অনেকটাই নিশ্চিত।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটায় বেলজিয়ামের বিপক্ষে হারলেও একদিক দিয়ে অবশ্য ইংল্যান্ডের ‘জয়’ই হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে, অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে তাদের পথ। ৩ জুলাই কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে গেলে সেখানে তাদের অপেক্ষায় থাকবে সুইডেন বনাম সুইজারল্যান্ড ম্যাচের জয়ী দল।
পয়েন্টের হিসাব নেই। নেই গোল ব্যবধান, হলুদ কার্ড-লাল কার্ডের হিসাবও। বিশ্বকাপে এখন একটাই হিসাব- ডু অর ডাই। নির্ধারিত নব্বই মিনিটে হোক, বা এক্সট্রা টাইমে হোক, বা পেনাল্টি শুটআউটে- জয় ছাড়া অন্য কিছুই যথেষ্ট নয় কারোর জন্য। এখানে পা হড়কানোর কোনো সুযোগ নেই। নেই খাদের কিনারা থেকে উঠে আসার সুযোগও। ১৬ দলের পথ এখন থেকে কেবল সামনের দিকেই এগোবে। সেই পথ গিয়ে মিলবে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে, ১৫ জুলাইয়ের ফাইনালের মঞ্চে।