ঢাকা ০৪:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রুপসেরা হয়েই শেষ ষোলোতে ব্রাজিল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২০:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন ২০১৮
  • ২৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খুব সহজেই হ্যাটট্রিক হতে পারত নেইমারের। পারেননি কোনো গোল করতে। অনায়াসেই এ ম্যাচে পাঁচ-ছয় গোলের ব্যবধানে জিততে পারত ব্রাজিল। হয়নি তা-ও।

তাতে অবশ্য অভিযোগ করার মতো ব্রাজিলিয়ান সমর্থক মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ব্রাজিল যে খেলেছে ব্রাজিলের মতো! সাম্বার ছন্দে, সৌন্দর্যের ঝংকারে। আর সেটিও সাফল্যের সঙ্গে আপস না করে। সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে ‘ই’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়েই নক আউট পর্বে উঠেছে সেলেসাওরা। সেখানে তাঁদের প্রতিপক্ষ ‘এফ’ গ্রুপ রানার্স-আপ মেক্সিকো। আগের দিন আর্জেন্টিনা শঙ্কা জাগিয়েছিল। কাল জার্মানি তো বাদই পড়ে গেল। মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামের আবহে কাল তাই ‘কি হয় কি হয়’ অবস্থা! ব্রাজিল সমর্থকরা যতই গলা চড়িয়ে গান গাক না কেন, বুকের দুরুদুরু কাঁপন দূর হচ্ছিল না তাতে। প্রথম খেলায় সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করেছে দল; কোস্টারিকার বিপক্ষে জিততে হয়েছে ইনজুরি সময়ের গোলে—সার্বিয়ার বিপক্ষে কোনো অঘটনের শিকার না হয় আবার!

হয়নি সেটি। পাউলিনিয়ো ও থিয়াগো সিলভার গোলে ২-০ ব্যবধানে জেতে তারা। তিন খেলায় সাত পয়েন্ট নিয়ে হয় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। গ্রুপের অন্য খেলায় কোস্টারিকার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে সুইজারল্যান্ড গ্রুপ রানার্স-আপ। শেষ ষোলোতে সুইসদের প্রতিপক্ষ সুইডেন।

স্পার্তাক স্টেডিয়ামে বাইরের স্পার্তান বীরের মতো কাল শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্রাজিল। সার্বিয়াকে ছিঁড়েকুড়ে ফেলার মন্ত্র জপেই যেন মাঠে নামে আদেনর বাক্কি তিতের দল। এবং গোল পেয়ে যেতে পারত চতুর্থ মিনিটেই। ফিলিপে কৌতিনিয়োর ডিফেন্স চেরা পাস খুঁজে নেয় গাব্রিয়েল জেসুসকে। দৌড়ের সময়টা দুর্দান্ত এই ফরোয়ার্ডের, ফিনিশিংটা যদি তেমন হতো! হয়নি বলেই ব্রাজিলের এগিয়ে যাওয়া হয় না; বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল পান না জেসুস।

এরপরই অপ্রত্যাশিত হোঁচট। দশম মিনিটেই ঘামের সঙ্গে অশ্রুবিন্দু মিশিয়ে ইনজুরির কারণে মাঠ থেকে বেরিয়ে আসেন মার্সেলো। এমনিতেই রাইট উইংব্যাক দানি আলভেস স্কোয়াডে নেই। সঙ্গে প্রথম পছন্দের লেফট উইং ব্যাকও কাল ম্যাচের শুরুতে বেরিয়ে যাওয়ায় ব্রাজিলের আক্রমণের দুই ডানাই যেন কাটা পড়ে।

কিন্তু তিতের দল তো এখন আর এককভাবে কারো ওপর নির্ভরশীল না। নেইমার-নির্ভরতাই কমিয়ে ফেলেছে যেখানে, সেখানে মার্সেলো কোন ছাড়! হোঁচট সামলে ঠিকই আবার সৃজনশীলতার মঞ্চ বানিয়ে ফেলে স্পার্তাকের সবুজকে। মাঝ মাঠে আলগোছে বলের আদান-প্রদান করতে করতে বিদ্যুত্গতির দুই-তিন স্পর্শে সার্বিয়ার রক্ষণ এলোমেলো করে দিচ্ছিল তাঁরা। একবার, দুইবার নয়—বারবার। আর সেই সৃষ্টিশীলতার জাদুর কাঠি ফিলিপে কৌতিনিয়োর পায়ে। কখনো গড়ানো পাসে, কখনো ওপর দিয়ে তুলে দেওয়া লবে খুঁজে নিচ্ছিলেন নেইমার, জেসুসদের। তাঁকে মিডফিল্ডে পাঠানোয় সেলেসাওদের খেলায় সাম্বার ছন্দ ফিরেছে অনেকখানি।

তবু গোল যে হচ্ছিল না! কৌতিনিয়োর পাসে জেসুস একটুর জন্য পৌঁছতে পারেন না বলের কাছে। আবার ২৫তম মিনিটে এই নাম্বার নাইন যখন সার্বিয়ান রক্ষণের দঙ্গল থেকে বল বের করেন, তখন নেইমারের চকিত শট আরো ক্ষিপ্রতায় ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক ভ্লাদিমির স্টোইকোভিচ। ২৯তম মিনিটে জেসুসের মিসটি অবশ্য অমার্জনীয়। নেইমারের পাসে আবারও দারুণ টাইমিংয়ের দৌড়; আবার গোলরক্ষককে একা পেয়ে যাওয়া। একটু দেরি করলেন, খানিকটা দ্বিধাও বুঝিবা—তাতেই বলকে আর পাঠাতে পারেন না জালের কোলে।

সার্বিয়াও থেকে থেকে আক্রমণে উঠছিল। তবে তা অমন ত্রাস ছড়ানো কিছু নয়। গোল পাওয়ার দাবিদার তখন ম্যাচে একটিই দল। সেই গোল আসে অবশেষে ৩৬তম মিনিটে। গোলদাতা? তিতের সময়ে নেইমার (১০), জেসুসের (১০) পর সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন যিনি—সেই পাউলিনিয়ো। এই কোচের অধীনে কাল অষ্টম গোল করলেন তিনি। আর সেটিও মিডফিল্ড থেকে তাঁর ট্রেডমার্ক দেরি করা দৌড়ে। সার্বিয়ান ডিফেন্সের ওপর দিয়ে করা কৌতিনিয়োর অসাধারণ চিপে লাফিয়ে উঠে বুটের ডগা ছুঁইয়ে বলকে গোলে রূপান্তর পাউলিনিয়োর। ব্রাজিলিয়ান দলের অনুশীলনে নিজেদের ভেতরকার ওই কৌতুকটি তখন কী যথার্থই না মনে হয়—‘আমরা যতই আক্রমণ করি না কেন, গোল করার সময় ঠিক দেখবে কোত্থেকে পাউলিনিয়ো চলে আসবে।’ যেন বাজার ও রান্না যাঁরাই করুক, খাওয়ার সময় পাউলিনিয়ো ঠিক হাজির হয়ে যাবে।

গোলটা কেবল যেভাবে আসার কথা, সেভাবে হাজির হচ্ছে না নেইমারের সামনে। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি হাফ চান্স কাজে লাগাতে পারেননি। ইনজুরি সময়ে পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে থেকে দারুণ বাঁকানো শট একটুর জন্য পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে। ৫৭তম মিনিটে চোখ ঝলসানো কাউন্টার অ্যাটাকে গোল পেয়ে যেতে পারতেন। সার্বিয়ার কর্নার থেকে ডান প্রান্তে ফাগনার ও কৌতিনিয়ো পাসে পাসে এগিয়ে যান মিডফিল্ড পেরিয়ে। বাঁয়ে বল ঠেলেন নেইমারের কাছে। তাঁর গড়ানো শট অবশ্য সার্বিয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেনি।

এরপরই ছোট্ট এক সার্বিয়ান ঝড়। ৬০ থেকে ৬৫ মিনিটের ভেতর মুহুর্মুহু আক্রমণ ব্রাজিলের সীমায়। এ সময় তাঁরা সমতা ফেরালে অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। দ্রুতই ট্যাকটিকাল পরিবর্তন করেন তিতে। গোলদাতা পাউলিনিয়ো তুলে পাঠান তুলনামূলক রক্ষণ মানসিকতার মিডফিল্ডার ফের্নান্দিনিয়োকে। কাজ হয় তাতে। আর কাজের কাজ হয় পরপরই পাওয়া দ্বিতীয় গোলে। ম্যাচের বেশির ভাগ কর্নার যেভাবে সরাসরি সার্বিয়ান গোলসীমায় না ফেলে ছোট পাসে আক্রমণ তৈরি করছিল ব্রাজিল, এটি তার ব্যতিক্রম। নেইমারের  ভাসিয়ে দেওয়া বলে হেড করে গোল করেন থিয়াগো সিলভা।

এই দ্বিতীয় গোলে শান্ত হয় ব্রাজিলের স্নায়ু। আর সম্ভাবনার অঙ্ক থেকে ছিটকে পড়ে সার্বিয়া। বাকি সময়ে দেখার ছিল আরো গোল করতে পারে কি না তিতের দল। নেইমার পান কি না প্রার্থিত গোল; জেসুস পান কি না কাঙ্ক্ষিত গোল। পাননি তাঁরা। ৮৩তম মিনিটে নেইমারের মিসটি অবিশ্বাস্য। ডান দিক থেকে উইলিয়ানের বাড়ানো বলে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি। তা চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। আর ৮৬তম মিনিটে তাঁর হঠাৎ পাওয়া সুযোগের শটটি কিভাবে যে ফিরিয়েছেন সার্বিয়ান গোলরক্ষক, নিজেও বলতে পারবেন না।

নাহ্, নেইমার-জেসুসদের গোল না হয় তোলা রইল বিশ্বকাপের সামনের ম্যাচগুলোর জন্য। কালকের ম্যাচটি বরং ব্রাজিলের দলীয় সৃষ্টিশীলতার অর্কেস্ট্রা বাজানোর নিদর্শন হিসেবেই না হয় থাক!

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রুপসেরা হয়েই শেষ ষোলোতে ব্রাজিল

আপডেট টাইম : ১০:২০:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খুব সহজেই হ্যাটট্রিক হতে পারত নেইমারের। পারেননি কোনো গোল করতে। অনায়াসেই এ ম্যাচে পাঁচ-ছয় গোলের ব্যবধানে জিততে পারত ব্রাজিল। হয়নি তা-ও।

তাতে অবশ্য অভিযোগ করার মতো ব্রাজিলিয়ান সমর্থক মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ব্রাজিল যে খেলেছে ব্রাজিলের মতো! সাম্বার ছন্দে, সৌন্দর্যের ঝংকারে। আর সেটিও সাফল্যের সঙ্গে আপস না করে। সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে ‘ই’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়েই নক আউট পর্বে উঠেছে সেলেসাওরা। সেখানে তাঁদের প্রতিপক্ষ ‘এফ’ গ্রুপ রানার্স-আপ মেক্সিকো। আগের দিন আর্জেন্টিনা শঙ্কা জাগিয়েছিল। কাল জার্মানি তো বাদই পড়ে গেল। মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামের আবহে কাল তাই ‘কি হয় কি হয়’ অবস্থা! ব্রাজিল সমর্থকরা যতই গলা চড়িয়ে গান গাক না কেন, বুকের দুরুদুরু কাঁপন দূর হচ্ছিল না তাতে। প্রথম খেলায় সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করেছে দল; কোস্টারিকার বিপক্ষে জিততে হয়েছে ইনজুরি সময়ের গোলে—সার্বিয়ার বিপক্ষে কোনো অঘটনের শিকার না হয় আবার!

হয়নি সেটি। পাউলিনিয়ো ও থিয়াগো সিলভার গোলে ২-০ ব্যবধানে জেতে তারা। তিন খেলায় সাত পয়েন্ট নিয়ে হয় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। গ্রুপের অন্য খেলায় কোস্টারিকার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে সুইজারল্যান্ড গ্রুপ রানার্স-আপ। শেষ ষোলোতে সুইসদের প্রতিপক্ষ সুইডেন।

স্পার্তাক স্টেডিয়ামে বাইরের স্পার্তান বীরের মতো কাল শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্রাজিল। সার্বিয়াকে ছিঁড়েকুড়ে ফেলার মন্ত্র জপেই যেন মাঠে নামে আদেনর বাক্কি তিতের দল। এবং গোল পেয়ে যেতে পারত চতুর্থ মিনিটেই। ফিলিপে কৌতিনিয়োর ডিফেন্স চেরা পাস খুঁজে নেয় গাব্রিয়েল জেসুসকে। দৌড়ের সময়টা দুর্দান্ত এই ফরোয়ার্ডের, ফিনিশিংটা যদি তেমন হতো! হয়নি বলেই ব্রাজিলের এগিয়ে যাওয়া হয় না; বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল পান না জেসুস।

এরপরই অপ্রত্যাশিত হোঁচট। দশম মিনিটেই ঘামের সঙ্গে অশ্রুবিন্দু মিশিয়ে ইনজুরির কারণে মাঠ থেকে বেরিয়ে আসেন মার্সেলো। এমনিতেই রাইট উইংব্যাক দানি আলভেস স্কোয়াডে নেই। সঙ্গে প্রথম পছন্দের লেফট উইং ব্যাকও কাল ম্যাচের শুরুতে বেরিয়ে যাওয়ায় ব্রাজিলের আক্রমণের দুই ডানাই যেন কাটা পড়ে।

কিন্তু তিতের দল তো এখন আর এককভাবে কারো ওপর নির্ভরশীল না। নেইমার-নির্ভরতাই কমিয়ে ফেলেছে যেখানে, সেখানে মার্সেলো কোন ছাড়! হোঁচট সামলে ঠিকই আবার সৃজনশীলতার মঞ্চ বানিয়ে ফেলে স্পার্তাকের সবুজকে। মাঝ মাঠে আলগোছে বলের আদান-প্রদান করতে করতে বিদ্যুত্গতির দুই-তিন স্পর্শে সার্বিয়ার রক্ষণ এলোমেলো করে দিচ্ছিল তাঁরা। একবার, দুইবার নয়—বারবার। আর সেই সৃষ্টিশীলতার জাদুর কাঠি ফিলিপে কৌতিনিয়োর পায়ে। কখনো গড়ানো পাসে, কখনো ওপর দিয়ে তুলে দেওয়া লবে খুঁজে নিচ্ছিলেন নেইমার, জেসুসদের। তাঁকে মিডফিল্ডে পাঠানোয় সেলেসাওদের খেলায় সাম্বার ছন্দ ফিরেছে অনেকখানি।

তবু গোল যে হচ্ছিল না! কৌতিনিয়োর পাসে জেসুস একটুর জন্য পৌঁছতে পারেন না বলের কাছে। আবার ২৫তম মিনিটে এই নাম্বার নাইন যখন সার্বিয়ান রক্ষণের দঙ্গল থেকে বল বের করেন, তখন নেইমারের চকিত শট আরো ক্ষিপ্রতায় ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক ভ্লাদিমির স্টোইকোভিচ। ২৯তম মিনিটে জেসুসের মিসটি অবশ্য অমার্জনীয়। নেইমারের পাসে আবারও দারুণ টাইমিংয়ের দৌড়; আবার গোলরক্ষককে একা পেয়ে যাওয়া। একটু দেরি করলেন, খানিকটা দ্বিধাও বুঝিবা—তাতেই বলকে আর পাঠাতে পারেন না জালের কোলে।

সার্বিয়াও থেকে থেকে আক্রমণে উঠছিল। তবে তা অমন ত্রাস ছড়ানো কিছু নয়। গোল পাওয়ার দাবিদার তখন ম্যাচে একটিই দল। সেই গোল আসে অবশেষে ৩৬তম মিনিটে। গোলদাতা? তিতের সময়ে নেইমার (১০), জেসুসের (১০) পর সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন যিনি—সেই পাউলিনিয়ো। এই কোচের অধীনে কাল অষ্টম গোল করলেন তিনি। আর সেটিও মিডফিল্ড থেকে তাঁর ট্রেডমার্ক দেরি করা দৌড়ে। সার্বিয়ান ডিফেন্সের ওপর দিয়ে করা কৌতিনিয়োর অসাধারণ চিপে লাফিয়ে উঠে বুটের ডগা ছুঁইয়ে বলকে গোলে রূপান্তর পাউলিনিয়োর। ব্রাজিলিয়ান দলের অনুশীলনে নিজেদের ভেতরকার ওই কৌতুকটি তখন কী যথার্থই না মনে হয়—‘আমরা যতই আক্রমণ করি না কেন, গোল করার সময় ঠিক দেখবে কোত্থেকে পাউলিনিয়ো চলে আসবে।’ যেন বাজার ও রান্না যাঁরাই করুক, খাওয়ার সময় পাউলিনিয়ো ঠিক হাজির হয়ে যাবে।

গোলটা কেবল যেভাবে আসার কথা, সেভাবে হাজির হচ্ছে না নেইমারের সামনে। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি হাফ চান্স কাজে লাগাতে পারেননি। ইনজুরি সময়ে পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে থেকে দারুণ বাঁকানো শট একটুর জন্য পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে। ৫৭তম মিনিটে চোখ ঝলসানো কাউন্টার অ্যাটাকে গোল পেয়ে যেতে পারতেন। সার্বিয়ার কর্নার থেকে ডান প্রান্তে ফাগনার ও কৌতিনিয়ো পাসে পাসে এগিয়ে যান মিডফিল্ড পেরিয়ে। বাঁয়ে বল ঠেলেন নেইমারের কাছে। তাঁর গড়ানো শট অবশ্য সার্বিয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেনি।

এরপরই ছোট্ট এক সার্বিয়ান ঝড়। ৬০ থেকে ৬৫ মিনিটের ভেতর মুহুর্মুহু আক্রমণ ব্রাজিলের সীমায়। এ সময় তাঁরা সমতা ফেরালে অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। দ্রুতই ট্যাকটিকাল পরিবর্তন করেন তিতে। গোলদাতা পাউলিনিয়ো তুলে পাঠান তুলনামূলক রক্ষণ মানসিকতার মিডফিল্ডার ফের্নান্দিনিয়োকে। কাজ হয় তাতে। আর কাজের কাজ হয় পরপরই পাওয়া দ্বিতীয় গোলে। ম্যাচের বেশির ভাগ কর্নার যেভাবে সরাসরি সার্বিয়ান গোলসীমায় না ফেলে ছোট পাসে আক্রমণ তৈরি করছিল ব্রাজিল, এটি তার ব্যতিক্রম। নেইমারের  ভাসিয়ে দেওয়া বলে হেড করে গোল করেন থিয়াগো সিলভা।

এই দ্বিতীয় গোলে শান্ত হয় ব্রাজিলের স্নায়ু। আর সম্ভাবনার অঙ্ক থেকে ছিটকে পড়ে সার্বিয়া। বাকি সময়ে দেখার ছিল আরো গোল করতে পারে কি না তিতের দল। নেইমার পান কি না প্রার্থিত গোল; জেসুস পান কি না কাঙ্ক্ষিত গোল। পাননি তাঁরা। ৮৩তম মিনিটে নেইমারের মিসটি অবিশ্বাস্য। ডান দিক থেকে উইলিয়ানের বাড়ানো বলে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি। তা চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। আর ৮৬তম মিনিটে তাঁর হঠাৎ পাওয়া সুযোগের শটটি কিভাবে যে ফিরিয়েছেন সার্বিয়ান গোলরক্ষক, নিজেও বলতে পারবেন না।

নাহ্, নেইমার-জেসুসদের গোল না হয় তোলা রইল বিশ্বকাপের সামনের ম্যাচগুলোর জন্য। কালকের ম্যাচটি বরং ব্রাজিলের দলীয় সৃষ্টিশীলতার অর্কেস্ট্রা বাজানোর নিদর্শন হিসেবেই না হয় থাক!