হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের হাওর অঞ্চলের সরকারি চাকুরেদের জন্য ‘হাওর ভাতা’ চালু করতে যাচ্ছে সরকার। পাহাড়ি দুর্গম এলাকার মতো তাদের মূল বেতনের ৩০ শতাংশ হারে এই ভাতা দেয়া হতে পারে। বিগত কয়েকটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে হাওর এলাকার ডিসিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রণোদনামূলক এই ভাতার বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। শিগগিরই এই ভাতা চালুর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে রাজি হননি দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা। জানা গেছে, কয়েক বছর ধরেই হাওরপ্রবণ জেলার ডিসিরা দুর্গম এলাকা হিসেবে হাওর খাতা চালুর প্রস্তাব করে আসছেন।
সর্বশেষ গত বছরের ডিসি সম্মেলনে কিশোরগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস হাওর ভাতা চালু করার জন্য একটি প্রস্তাব পাঠান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। ডিসিদের দীর্ঘদিনের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হাওর এলাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক, শিক্ষা ও আইসিটি) তরফদার মো. আক্তার জামীল সাংবাদিককে বলেন, ‘গত বছর আমাদের ডিসি স্যার হাওর ভাতা চালু করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সরকারের শীর্ষমহল বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে বলে জেনেছি। দেখা যাক কবে নাগাদ তা চালু হয়।’
নাম প্রকাশ না করে সুনামগঞ্জ জেলার একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, ‘হাওর অঞ্চলে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। সেখানে নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে। কিছু কিছু এলাকা পাহাড়ি এলাকা থেকেও দুর্গম, বন্ধুর, অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ। পাহাড়ি ভাতার মতো হাওর অঞ্চলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাওর ভাতা দেয়া হলে তারা প্রণোদনা পাবে, খুশি হবে। এতে কাজের গতি আরও বাড়বে।’
বাংলাদেশের হাওর ও পাহাড়ি এলাকা অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক বেশি অনুন্নত। দুর্গম এসব এলাকায় নাগরিক সুবিধা বলতে কিছুই নেই।
তবে বিদেশি সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারির ফলে পাহাড়ি এলাকায় এখন শিক্ষার আলোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কিছুটা বেড়েছে। শিক্ষা, চাকরি ও ভ‚মিসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পাহাড়িরা আদায় করে নিয়েছেন। কিন্তু হাওর অঞ্চলের মানুষ এখনও এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে এ সুযোগ হাওরেও সম্প্রসারণের দাবি দীর্ঘদিনের। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার দাবি, হাওর ভাতা চালু হলে দেশের সাতটি জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ভাতা পাবেন।
সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলাকে হাওর অঞ্চল হিসেবে ধরা হয়। হাওর মূলত বিস্তৃত প্রান্তর, অনেকটা গামলা আকৃতির জলাভূমি, যা প্রতি বছর মৌসুমি বৃষ্টির সময় পানিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বর্ষাকালজুড়ে হাওরের পানিকে সাগর বলে মনে হয় এবং এর মধ্যে অবস্থিত গ্রামগুলোকে দ্বীপ বলে প্রতীয়মান হয়।
বাংলাদেশে প্রায় ৪০০ হাওর রয়েছে। হাওরগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। পাহাড়ের পাদদেশে বা পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থিত হাওর, প্লাবিত এলাকার হাওর, গভীর পানিতে প্লাবিত এলাকার হাওর।
হাওর ভাতা নিয়ে কাজ করছেন এমন একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, পাহাড়ি ভাতার মতো প্রণোদনামূলক হাওর ভাতা প্রচলনের জন্য কাজ চলছে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই কমিটির সভায় প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হবে। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর প্রস্তাব পাঠানো হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যদি মনে করে এ ভাতা চালুর প্রয়োজন, তাহলে তারা ওই প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় যদি সম্মতি দেয় তাহলে ভাতা চালু হবে। এর মধ্যে কেউ যদি মনে করেন এ ভাতার কোনো প্রয়োজন নেই, তাহলে তা চালু নাও হতে পারে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশের দুর্গম এলাকায় কর্মরত সরকারি চাকুরেরা মূল বেতনের ৩০ শতাংশ হারে অথবা জেলা পর্যায়ে তিন হাজার টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে পাঁচ হাজার টাকা বিশেষ ভাতা পান।
যুগান্তর