হাওর বার্তা ডেস্কঃ চার বছর আগের এক অভিশপ্ত রাত তাকে কাঁদিয়েছিল। খুব কাছে এসেও মারাকানার মহামঞ্চে অমরত্বের পেয়ালায় আর চুমুক দেয়া হয়নি। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে আর্জেন্টিনার ১-০ গোলের সেই হৃদয়ভাঙা হার হতাশার পোস্টার বানিয়ে দিয়েছিল লিওনেল মেসিকে। ফাইনালে ব্যবধান গড়ে দিতে না পারার খেদ মেটানোর পণ করেই এবার রাশিয়ায় পা রেখেছেন আর্জেন্টিনার দুঃখী রাজপুত্র। কিন্তু বিশ্বকাপ মঞ্চটা এবার শুরুতেই অভিশপ্ত হয়ে উঠেছে তার জন্য।
পুঁচকে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্র দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছে আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে পেনাল্টি মিস করে হতাশায় মুখ লুকাতে হয়েছিল মেসিকে। এ নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের পাশাপাশি অনেকে তাকে খলনায়ক হিসেবে চিত্রিত করেছেন।
তবে এ দুঃসময়ে দলের সবাইকেই পাশে পাচ্ছেন মেসি। কারণ তারা জানেন, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ভাগ্য মেসির হাতেই। তারা ভুলে যাননি যে, এ মেসিই বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে মহাকাব্যিক এক হ্যাটট্রিকে বিশ্বকাপের টিকিট এনে দিয়েছিলেন দেশকে। একটি পেনাল্টি ব্যর্থতায় মেসির মতো মহানায়করা কখনও খলনায়ক হয়ে যেতে পারেন না।
বরং এ ব্যর্থতাই হতে পারে মেসির স্বরূপে ফেরার জ্বালানি। চাপের মুখে তার ঝলসে ওঠার নজির কম নেই। আজও শাপমোচনের চ্যালেঞ্জ নিয়েই মাঠে নামবেন আর্জেন্টিনার স্বপ্নসারথি। নোভগোরদে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১২টায় ডি-গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা।
নিজেদের ভাগ্য নিজেদের হাতে রাখতে আজ জিততেই হবে মেসিদের। আর্জেন্টিনার জন্য আক্ষরিক অর্থেই এটি বাঁচা-মরার ম্যাচ। হারলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ঘণ্টা বেজে যেতে পারে দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ক্রোয়েশিয়া আপাতত গ্রুপের শীর্ষে আছে।
বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে আসা আইসল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার বিবর্ণ পারফরম্যান্স সমর্থকদের মনে ভয়ের হিমশীতল অনুভূতি এনে দিয়েছে। আইসল্যান্ডের তুলনায় ঢের ভালো দল ক্রোয়েশিয়া। তারা শুধু ঠেকিয়ে খেলবে না, আক্রমণও করবে। দলটিতে তারকার ছড়াছড়ি। লুকা মডরিচ, রাকিতিচ, মানজুকিচরা নিঃসন্দেহে আর্জেন্টিনার অগ্নিপরীক্ষা নেবেন।
আর সেই পরীক্ষায় উতরাতে মেসিই ভরসা আর্জেন্টিনার। প্রথম ম্যাচে নড়বড়ে রক্ষণ, এলোমেলো মাঝমাঠের পাশাপাশি আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগও ছিল দ্যুতিহীন। মেসিকে মেসি হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে একাদশে বেশকিছু পরিবর্তন আনার আভাস দিয়েছেন কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার জায়গায় আসতে পারেন তরুণ ফরোয়ার্ড ক্রিস্টিয়ান পাভন।
মাঝমাঠে লুকাস বিগলিয়ার জায়গায় দেখা যেতে পারে লো সেলসোকে। তবে সাবেকরা শুরুর একাদশে দেখতে চান পাওলো দিবালাকে। মেসির পজিশনে খেলেন বলে দিবালার মতো প্রতিভাকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখায় ম্যারাডোনাও সমালোচনা করেছেন সাম্পাওলির। আপাতত সব সমালোচনা মুখবুজে সইতে হচ্ছে আর্জেন্টিনা কোচকে। নকআউট পর্বের টিকিট নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বড় গলায় কিছু বলার সুযোগও নেই তার।
আর মেসি বরাবরই সমালোচনার জবাব দেন জাদুকরী পারফরম্যান্স দিয়ে। এবারও হয়তো আস্তিন থেকে নতুন কোনো মণিমুক্তা বের করে সমালোচনার কাঁটাকে প্রশংসার ফুল বানিয়ে ফেলবেন। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো দুই ম্যাচে চার গোল করে হয়ে উঠেছেন রাশিয়া বিশ্বকাপের উজ্জ্বলতম মুখ। আজ মেসির জ্বলে ওঠার জন্য এটাই হতে পারে বড় প্রেরণা!