হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশে আমদানি করা চালে ২৮ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহালের ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। কিছু চালের দাম এক কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা করে বেড়ে গেছে। বাজারে গিয়ে দেখা গেলো মিল মালিকরা চালের দাম বস্তা-প্রতি দেড়শ টাকার মতো বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
গত বছর বন্যায় ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সাময়িকভাবে আমদানি শুল্ক তুলে দেয়া হয়েছিল। বাজারে এখন যে চাল রয়েছে তা শুল্ক পুনর্বহালের ঘোষণা দেয়ার আগে বিনা শুল্কে আনা চাল। তাই এসব চালের দাম বাড়ার কোন যুক্তি নেই বলে জানাচ্ছেন স্বয়ং আড়তদারেরা।
বাংলাদেশের সবচাইতে বড় পাইকারি বাজারগুলোর একটি ঢাকার কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেলো ক্রেতা-বিহীন চালের আড়ত। আড়তদারেরা কেউ ঘুমাচ্ছেন, কেউ বা আবার চুপচাপ বসে আছেন।দাম সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখা গেলো ২৮ নম্বর চাল, পাইজাম, ভারতীয় নাজিরশাইল, কালিজিরা চাল, এগুলোর দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা করে বেড়েছে।
আড়তদার মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল তালুকদার বলছেন, “মিলারদের বস্তা-প্রতি চালের দাম বাড়ানোর প্রভাব এটি। শুল্ক বসাবে এইটা কেবল ঘোষণা হইছে। এখনো সংসদে পাশ হয় নাই। তার আগেই মিলাররা বস্তা-প্রতি এক থেকে দেড়শ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে।”
আড়তদারেরা পূর্বাভাস দিয়ে বলছেন, সামনে চালের দাম আরো বাড়বে। বিশেষ করে ঈদের পরে। কিন্তু চালের দাম বাড়লে যারা সবচাইতে বেশি ভুক্তভোগী হন সেই দরিদ্র মানুষের উপর এর প্রভাব এখনই পড়ছে।
ঢাকার সবচাইতে বড় বস্তি কড়াইলে থাকেন গৃহকর্মী সিমা আক্তার। তিনি বলছেন, “সবকিছুর দাম বাড়ছেই। যে চালের দাম ছিল চল্লিশ টাকা কেজি তার দাম যদি হঠাৎ পঞ্চাশ টাকা হয়ে যায় তাতে কি আমাদের কষ্ট হয় না?”
বিক্রেতাদের মতো বাংলাদেশের খাদ্যমন্ত্রী মোঃ কামরুল ইসলামও বলছেন, এই দাম বাড়ার কোন যুক্তি তিনি দেখছেন না।
তিনি বলছেন, “বরাবরই চাল আমদানির উপর ২৮ শতাংশ শুল্ক ছিল। গত বছর হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যার কারণে আমাদের ফসল হানি হয়েছিলো। তখন আমাদের বাইরে থেকে চাল আমদানির প্রয়োজন ছিল। শুল্ক উঠিয়ে দেয়ায় বাইরের থেকে চাল এসে বাজার স্থিতিশীল হয়েছে।”তিনি বলছেন, এই বছর দেশে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই আর চাল আমদানির প্রয়োজন নেই।”দেশে চালের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভালো। কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা দরকার। তাই আবার শুল্ক আরোপ করা হয়েছ,” বলেন মি. ইসলাম।
কিন্তু মিল মালিকরা চালের দাম কেন বাড়াচ্ছেন? সেটি বুঝতে কথা বলেছিলাম বাংলাদেশে মিল মালিকদের সমিতির সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলির সাথে। তিনি সোজা ভাষায় বললেন, “শুল্ক পুনর্বহাল করার ফলে ভারত থেকে আর নতুন চাল আসছে না। না আসার কারণে বাঙালীরা আমরা যখনই একটু হাওয়া পাই, যেমন খুচরা বলেন বা পাইকারি, কৃষক বলেন বা মিলার সর্বত্রই একটা ভাব থাকে যে এটা বেড়ে যাবে এবং সেই বেড়ে যাওয়াটা শুরু হয়েছে।”
কিন্তু যে চাল শুল্ক মুক্ত সুবিধার সময় আনা হয়েছে সেই চালের দাম কেন বাড়বে? এই প্রশ্নে তিনি বললেন, “আগের আর পরের বিষয়টি কিন্তু ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে কখনো থাকে না। দামটা যখন কমে যায় তখন কিন্তু সবাইকে আগের জিনিস কম দামেই বিক্রি করতে হয়।”
তিনি আরো বলছেন, দেশি ধান এখনো পুরোটা কাটা শেষ হয়নি। যতটুকু উঠেছে তাতে মণ প্রতি সরকার নির্ধারিত এক হাজার ৬০ টাকায় ধান বিক্রি সম্পন্ন হলে সামনে চালের দাম আরো বাড়তে পারে।তার মতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ভারত থেকে চাল আনলেই খুচরা বাজারে দামের সামঞ্জস্য হবে। কিন্তু ধানের দাম কমানো অথবা আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিলে শেষ পর্যন্ত তার ফল কৃষকের উপরে কতটা পড়বে সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।