হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আমদানিকৃত চালের ওপর ২৫ শতাংশ এবং ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন। এই শুল্ক কার্যকর হলে শুধু আমদানিকৃত নয়, সব ধরনের চালের দাম বাড়বে। সুবিধা নেবে মজুতদার ও বড় ব্যবসায়ীরা। ২ থেকে ৩ মাস পর বাজারে চালের সংকট দেখা দেবে। সমস্যায় পড়বে মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষ। কিছুই পাবে না কৃষক। জানতে চাইলে জামালপুরের চাল ব্যবসায়ী ও নিপা অটো রাইস মিলের মালিক কাজী কাইয়ুম বলেন, আমদানির ওপর শুল্ক আরোপিত হলে বাজারে সব ধরনের চালের দাম কমবেশি বাড়বে।
বিশেষ করে চিকন চালের দাম বেশি বাড়বে। কারণ আমদানি না হলে বাজারে জোগান কমবে, চালের দাম বাড়বে। এখানে কৃষক কিছু টাকা পাবে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা কোনো টাকা পাবে না। যেহেতু তাদের কাছে এখন আর কোনো ধান নেই। বড় বড় মিলার ও মজুতদাররা যা মজুত করার তা করে ফেলেছে। এখন দাম বাড়লেই তাদের লাভ। এ ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের কাজে উৎসাহ জুগিয়েছেন তারা। অর্থাৎ মজুতদাররাই লাভবান হবেন। তবে ২০ থেকে ২৫ দিন আগে এটি করা হলে কৃষক এর সুফল পেত। কাজী কাইয়ুম বলেন, আমদানিকৃত চালের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক ২ মাসের জন্য আরোপ করলে ভালো হতো। কারণ ২ মাস পর চালের সংকট দেখা দেবে। কারণ আমদানি না হলে সংকট হবেই।
ইতোমধ্যে ভারত চালের দাম কমিয়ে দিয়েছে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এই চাল ব্যবসায়ী বলেন, এতে বাংলাদেশে কোনো প্রভাব পড়বে না। এছাড়া বাংলাদেশ যখন শুল্ক কমায় তখন ভারত বাড়ায়। আবার বাংলাদেশ যখন শুল্ক বাড়ায় তখন ভারত কমায়। প্রস্তাবিত বাজেটে (২০১৮-১৯) চাল আমদানিতে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফলে সব ধরনের চাল আমদানিতে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ ও সম্পূরক শুল্ক ৩ শতাংশ প্রযোজ্য হবে। এর ফলে আমদানি করা চালের দাম বাড়বে।
তিনি বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ধান-চালের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ এবং রেগুলেটরি ডিউটি ৩ শতাংশ পুনঃআরোপ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, চাল আমদানির ওপর এতদিন শুল্ক মওকুফ করার কারণে ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি তেমনভাবে চাল আমদানি করেছে। ফলে দেশের কৃষক মার খাচ্ছে। এদিকে আমদানিকৃত চালের ওপর ২৮ শতাংশ শুল্ক পুনরায় আরোপ করায় ভারতে চালের দাম কমে গেছে। প্রতি টনে ৬ থেকে ৮ ডলার কমেছে। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চালের দাম গত এক মাস ধরে বাড়ছিল। একদিনে দাম স্থির হয়ে গেছে।
তবে বাংলাদেশে এখনো চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। গত এক বছর ধরে বিশ্ববাজার থেকে চাল আমদানিতে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার এবং বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা মূলত ভারত থেকে চাল আমদানি করে। ভারতে এ বছর চালের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম কমে যায়। প্রতি কেজি চালের আমদানি মূল্য ৪৫ টাকা থেকে কমে ৩৫ টাকা হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে সরকারি গুদামে ১০ লাখ টনের বেশি চাল মজুত রয়েছে। এছাড়া এ বছর বোরোতে ১ কোটি ৯২ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেখা গেছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪০ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ ধরে স্থির আছে।
২০১২-১৩ অর্থ বছরের পর আর চাল আমদানি করা হয়নি সরকারিভাবে বরং ২০১৪ সালে ৫০ হাজার টন চাল শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি করা হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে আমদানি হয়েছে। এই অবস্থায় ২০১৫ সালে চাল আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসায় সরকার। যাতে চাল আমদানিতে নিরুৎসাহিত হয় ব্যবসায়ীরা। ফলে আমদানি শুল্কের কারণে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে লাভবান হয় দেশের কৃষক। কিন্তু গত বছর সুনামগঞ্জের ১৪২টি হাওরের সবকটিই ডুবে যায়। উজান থেকে পাহাড়ি ঢলে প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেটা চালের হিসাবে ৬ লাখ টনের মতো। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, গত বছরের বন্যায় ফসলহানির পরিমাণ ২২ লাখ টন।
আর এ কারণেই গত বছর থেকেই চাল আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। এই আমদানি প্রক্রিয়ায় সুযোগ বুঝে ভারত, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ দাম বাড়িয়ে দেয়। এক প্রকার বাধ্য হয়ে তা কিনেও আনা হয়। এবার দেশে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকায়। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচই উঠছে না। তাই কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত চালের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু কৃষকের কাছে এখন আর কোনো ধান নেই সব মজুদদার ও বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। কাজেই দাম বৃদ্ধির সুবিধা পাবেন এরাই। আর লোকসানের ঘানি টানতে হচ্ছে কৃষকদেরই।