কল্পলোকের অবাস্তব বাজেট বলে অভিহিত করেছেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে কল্পলোকের অবাস্তব বাজেট বলে অভিহিত করেছেন। বৃহস্পতিবার অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এরশাদ বলেন, ‘এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়। বাস্তবতার সঙ্গে বাজেটের মিল নেই। এ বাজেট হচ্ছে ঘাটতির রেকর্ড করা বাজেট। এ বাজেট দিয়ে মনোতুষ্টি করা গেলেও সাবির্কভাবে দেশের কল্যাণ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের করের টাকায় ঋণের নামে লুটপাট হওয়া ব্যাংকগুলোর ঘাটতি পূরণ করার কথা বলা হয়েছে। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।’

সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, ‘এ বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়ার কোনো বিষয় নেই। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো উদ্যোগ বা দিকনির্দেশনাও নেই।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের তুষ্ট করার জন্যই এ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বাজেট বাস্তবের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের দেশের ভোটাররা অনেক সচেতন। বিশাল অঙ্কের ঘাটতি বাজেট দিয়ে তাদের তুষ্ট করা যাবে না।’

বাজেট কল্পনাবিলাসী-জামায়াত: প্রস্তাবিত বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলেই অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। পেশ করা বাজেট অদূরদর্শী, কল্পনাবিলাসী ও নির্বাচনমুখী।’ জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ৯ বছরে আমরা লক্ষ্য করে আসছি যে, সরকার প্রায় প্রতি বছরই মোটা অঙ্কের বাজেট পেশ করলেও দুর্নীতি, অনিয়ম ও নানা বিশৃঙ্খলার কারণে তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় এবং শেষ পর্যন্ত বাজেট কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়। সদ্য পেশ করা বাজেটের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে হচ্ছে।’

ডা. শফিক বলেন, ‘পেশ করা বাজেট অনেকাংশে বিদেশি ও দেশি ঋণ নির্ভর। করমুক্ত আয়ের সীমা গত কয়েক বছর ধরে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাখা হচ্ছে। অথচ করমুক্ত আয়ের সীমা আরও অন্তত ১ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা উচিত ছিল। এ বাজেট দুর্নীতি আরও বাড়াবে। সরকারের দলীয় লোকদের স্বার্থ হাসিল হবে। কিন্তু জনগণের কোনো কল্যাণ হবে না।’ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়-আ স ম রব: আ স ম আবদুর রব জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন অর্থমন্ত্রীর উত্থাপিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়।

ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার চটকদারি বাজেট ঘোষণা করা হলেও রাজনীতি, রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সরকারের দুর্বলতা ও দুর্নীতির কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে আ স ম রব ও আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘চলতি অর্থবছরসহ বিগত কয়েক বছর যেমন বাজেটের শতকরা ৩০ ভাগের বেশি অবাস্তবায়িত থেকেছে। আগামী অর্থবছরেও এর ব্যতিক্রম হবে না। এ বাজেটের ফলে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি কমে আসবে বিধায় বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে না।’

তারা বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির হার সরকারের নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে যাবে। পরোক্ষ করের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়ার ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়বে। এছাড়া, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসের আয়ুষ্কাল নিয়ে অর্থমন্ত্রী পূর্ণ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করেছেন, তা সম্পূর্ণ অনৈতিক। দেশের সব রাজনৈতিক ও শ্রেণী-পেশার নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংশোধিত আকারে বাজেট পুনরায় উত্থাপনের দাবি জানিয়েছেন জেএসডির এ দুই শীর্ষ নেতা।

প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন কিছু নেই -রওশন এরশাদ: ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। তিনি বলেছেন, এবারের বাজেট গতানুগতিক। এটাকে নির্বাচনী বাজেট বলা যেতে পারে। বৃহস্পতিবার অর্থবছরের ২০১৮-১৯ বাজেট উপস্থাপনের পর সংসদ ভবনে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। রওশন এরশাদ বলেন, প্রত্যেক সরকারই বাজেট দেয়, এবারও বাজেট দেয়া হয়েছে।

অনেক সময় অনেক প্রকল্প নেয়া হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। এবারের বাজেট নিয়ে আমরা আশান্বিত, দেখা যাক কতটুকু জনকল্যাণ হয়। তিনি বলেন, এটা নির্বাচনী বাজেট। এবার আমরা আশা করছি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান খাতে সুযোগ সৃষ্টি হবে, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে, এখন কতটুকু পূরণ হবে সেটা দেখার বিষয়।

এ সময় তিনি ফরমালিন ও মাদক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। রওশন এরশাদ বলেন, ৫ বছর যাবৎ মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলছি। ফরমালিন নিয়ে কথা বলেছি। এখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হচ্ছে। এটা যদি আরও আগে নেয়া হতো তাহলে এত ক্ষতি হতো না।

বিস্ময়কর অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ-ইনু: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, উন্নয়নের যে বিস্ময়কর অগ্রগতির পথে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, এ বাজেট তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলে আমি মনে করি। তিনি আরও বলেন, কৃষি, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, পানি সম্পদের উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিটেন্স আয়, বৈষম্য রোধ, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা প্রভৃতি খাতে প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে গত কয়েক বছরে। এবারের বাজেট সেই অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর