ঢাকা ০৫:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিটি নির্বাচনে আ’লীগ বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্তই মূল চ্যালেঞ্জ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০০:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ জুন ২০১৮
  • ২৬৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ক্রমশ বাড়ছে রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের উত্তাপ। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই তিন সিটিতে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। নগরবাসী, ভোটার, দলীয় নেতাকর্মী-সবার মুখে নির্বাচনী আলাপ। বিশেষ করে কোন দল থেকে মেয়র পদে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন এই নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। সরকারের শেষ সময়ে তিন সিটিতে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণে মরিয়া আওয়ামী লীগ। পিছিয়ে নেই বিএনপিও। তারাও জয় নিশ্চিত করতে চায়। তাই জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থীর সন্ধান করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাইকমান্ড।

এদিকে তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন দুই দলের সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তিন সিটিতেই একাধিক প্রার্থী মাঠে আছেন। মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী সংখ্যা কিছুটা কম হলেও কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় সমর্থন পেতে চালাচ্ছেন লবিং তদবির। স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি অনেকে কেন্দ্রেও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। খুলনার মতো এ তিন সিটিতেও একক কাউন্সিলর প্রার্থী দিতে হিমশিম খেতে হবে দুই দলের নীতিনির্ধারকদের। দল সমর্থন না দিলেও অনেকে নির্বাচন করতে অনড়। প্রয়োজনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে চিন্তিত দুই দলের নীতিনির্ধারকরা।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুসারে ৩০ জুলাই এ তিন সিটিতে হবে ভোট গ্রহণ। ১৩ জুন থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৮ জুন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ ও ২ জুলাই এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জুলাই। ১০ জুলাই এ সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে নির্বাচনী প্রচার। তিন সিটিতেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রোববার তিনি বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জে জয় পেয়েছি। মাঝে কুমিল্লা ও রংপুরে ছন্দপতন হয়েছে। খুলনাতে জয় পেয়ে ফের জয়ের ধারায় ফিরে এসেছি। গাজীপুরেও আমাদের জয় হবে। এই জয়ের ধারায় সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও অব্যাহত থাকবে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনপ্রিয়তা দিয়েই আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিককে বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ এখনও শুরু করিনি। মহাসচিবসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতা দেশের বাইরে আছেন। তারা ফিরলেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনে এই তিন সিটিতে যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও যোগ্যদের মনোনয়ন দেয়া হবে। মেয়র এবং কাউন্সিলর পদে যাতে একক প্রার্থী থাকে সেই বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি।

নজরুল বলেন, খুলনার পর সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস বেড়েই চলেছে। তারপরও আমরা আশা করব নির্বাচন কমিশন গাজীপুরে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে ভোটারদের সেই সন্দেহ দূর করবে। সূত্র জানায়, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র ছেড়ে কাউন্সিলর নিয়ে হিসাব কষছে ১৪ দলের শরিকরা। তারা তিন সিটিতে কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলরে ভাগ চায়। সিটি নির্বাচন নিয়ে আজ বুধবার ১৪ দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও বেঁকে বসতে পারে এমন নেতাদের ডাকা হচ্ছে ঢাকায়। আর কাউন্সিলরে বিদ্রোহী প্রার্থী রুখতে থাকছে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার নির্দেশ। খুলনায় এ কৌশল কাজে দেয়ায়, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও এটা প্রয়োগ করা হবে। এতে কাজ হবে এমন আশা করছে আওয়ামী লীগ।

অপরদিকে নিজ দলের একাধিক প্রার্থী ছাড়াও জোটের শরিক জামায়াতকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকায় স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার চিন্তাভাবনা রয়েছে দলটির। সিলেট : বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এতে ঘুরেফিরে আসছে সিসিকের বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী এবং সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নাম।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এখন পর্যন্ত এ দুজনই এগিয়ে আছেন। তবে মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে এ দুই নেতাকে ঘরের লড়াই সামলাতে হচ্ছে। উভয় নেতাই নিজ দলে মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মুখোমুখি হচ্ছেন। জানা গেছে, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পাশাপাশি ভোটের মাঠে সক্রিয় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম। জানতে চাইলে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সাংবাদিককে বলেন, দলীয় সভাপতির নির্দেশ পেয়েই দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচনী মাঠে আছি। এরইমধ্যে একাধিকবার প্রতিটি ওয়ার্ড ঘুরেছি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এলাকার উন্নয়ন চায়। আর উন্নয়নের জন্য সিলেটের ভোটাররা আমার সঙ্গেই আছে। সিলেটে আওয়ামী লীগের আর কোনো প্রার্থী নেই জানিয়ে কামরান বলেন, যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারাও কেন্দ্রের নির্দেশে আমার পক্ষে কাজ করবেন।

এদিকে বিএনপি থেকে এবারও মনোনয়ন পেতে পারেন আরিফুল হক চৌধুরী- এমন জোর গুঞ্জন রয়েছে। মেয়র পদে আরিফের সঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ও টানা তিনবারের সিটি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর নামও শোনা যাচ্ছে।
সিসিকের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, মানুষের রায় নিয়ে গত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলাম। বাকি সময়ে প্রতিশ্র“ত উন্নয়নকাজ শেষ করার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি দলীয় কাজেও সময় দিয়েছি। দল নিশ্চয়ই এসব বিবেচনা করে মনোনয়ন দেবে। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য গত এক বছর ধরে কাজ করে চলেছি আমি। সিলেটকে তিলোত্তমা হিসেবে গড়ে তুলতে আমার নিজস্ব কিছু পরিকল্পনাও আছে। দল মূল্যায়ন করলে আমি নির্বাচন করব।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে আছেন। যদিও উভয় দলের স্থানীয় নেতারা প্রত্যেক ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দেয়ার চেষ্টা করছেন। নগরীর ৩নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলর আবজাদ হোসেন আমজাদ ও একই দলের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল খালিক ও একেএম লায়েক, ৪নং ওয়ার্ডে বিএনপির সোহাদ রব চৌধুরীসহ অন্যরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

৫নং ওয়ার্ডে বিএনপির হুমায়ুন আহমদ কামাল, সাবেক পৌর কমিশনার কামাল মিয়া (গুল্লি কামাল) ও আমিনুর রহমান খোকন, ৬নং ওয়ার্ডে বিএনপির বর্তমান কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে আছেন বিএনপির আরেক নেতা এমদাদ হোসেন চৌধুরী। ৮নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াছ, একই দলের সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাস, ১১নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলর রকিবুল ইসলাম ঝলক ও একই দলের সাবেক কাউন্সিলর এ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব বাবলু ভোটযুদ্ধে নামছেন। এভাবে প্রতি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগ বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে আছেন।

বরিশাল : মেয়র পদ নিয়ে রাজশাহী ও সিলেটে অনানুষ্ঠানিক ঘোষণার কথা শোনা গেলেও বরিশালের প্রার্থিতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে আওয়ামী লীগ। এখানে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে জয় নিশ্চিত করার মতো প্রার্থীর অভাব দেখছে দলটি। আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর বড় ছেলে সাদেক আবদুল্লাহর মেয়র পদে মনোনয়নের বিষয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে আছে।

তবে জয় নিশ্চিতের জন্য নানা কৌশলের অংশ হিসেবে তা এখনই দৃশ্যমান করা হচ্ছে না। বরিশালে আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম ও মাহবুব উদ্দিন আহমেদ জোর লবিং করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান মঙ্গলবার সাংবাদিককে বলেন, জয় ছিনিয়ে আনতে পারবে এমন প্রার্থীর সন্ধান করছি। জনপ্রিয় একাধিক প্রার্থীর মধ্য থেকেই একজনকে চূড়ান্ত করা হবে। সামনে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভা আছে। সেখানে নাম প্রকাশ করা হবে। এদিকে বরিশালে বিএনপির ছয়জন প্রার্থী মনোনয়ন দৌড়ে আছেন। তারা মনোনয়ন পেতে নানা মাধ্যমে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরা হলেন, বর্তমান মেয়র আহসান হাবীব কামাল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ওবায়দুল হক চাঁন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীন, মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা আফরোজা খানম নাসরিন।

তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, খুলনার মতো বরিশালেও মনোনয়নে চমক থাকতে পারে। প্রকাশ্যে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেও সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সরোয়ারের হাতে ধানের শীষ তুলে দিতে পারে দলটির হাইকমান্ড। দলের নীতিনির্ধারকের সিদ্ধান্ত মেনে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব সরোয়ারই হতে পারেন বরিশালের বিএনপির মেয়র প্রার্থী। জানতে চাইলে মজিবুর রহমান সরোয়ার সাংবাদিককে বলেন, আমি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই। তারপরও দলের হাইকমান্ড যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।

জানা গেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ৩০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে দুই দলের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে। ৭ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে নিগার সুলতানা হনুফা, ইমরুল আহম্মেদ উজ্জল, আব্দুল খালেক কায়সার বিশ্বাস- বিএনপি থেকে সৈয়দ আকবর হোসেন মাঠে রয়েছেন। ২০নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে- এসএম জাকির হোসেন, জিয়াউর রহমান বিপ্লব ও বিএনপি থেকে মো. বাতেন (ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক), ৮নং ওয়ার্ডে বিএনপি থেকে সেলিম হাওলাদার, মো. আল আমিন- আওয়ামী লীগ থেকে শেখ মনি, বশির আহম্মেদ মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ১৯নং ওয়ার্ডে গাজী নইমুল হোসেন লিটু, মো. সুনহাম-বিএনপি থেকে জাহিদ হোসেন, কাজী বশির ও মোস্তাফিজুর রহমান বাবু আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ২১নং ওয়ার্ডে বিএনপি থেকে আলতাফ মাহামুদ সিকদার, খন্দকার আবুল হাসান লিমন- আওয়ামী লীগ থেকে শেখ সাঈয়েদ আহম্মেদ মান্না, এসএম সুজন মাঠে আছেন।

রাজশাহী : রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে অন্য দুই সিটির চেয়ে এখানে মেয়র পদে দুই দলেই সম্ভাব্য প্রার্থী সংখ্যা কম। আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিটনের প্রার্থিতার বিষয়ে সবুজ সংকেত দেয়ায় এখানে অন্য নেতারা প্রার্থিতার বিষয়ে সাহস করছেন না। এছাড়া রাজশাহী সিটির যে উন্নয়ন হয়েছে সাবেক মেয়র লিটনের হাত ধরেই। তাই জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানের ছেলে খায়রুজ্জামান রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে তফসিল ঘোষণা হলেও বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন তা স্পষ্ট হয়নি। বর্তমান মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবারো নির্বাচন করতে চান। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ভোট করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাই এই সিটিতে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্তে ততটা বেগ পেতে হবে না। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী নিয়ে দুশ্চিন্তায় দলটি। কারণ দলটি ইতিমধ্যে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। মহানগর সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসাইন স্বতন্ত্র প্রার্থী করা হয়েছে। তবে তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। চানতে চাইলে বুলবুল সাংবাদিককে বলেন, গত নির্বাচনে দল আমার ওপর আস্থা রেখেছিল। আমি সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছি। মেয়র হওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলের নানা বাধার মুখেও নগরীর উন্নয়নে যথাসাধ্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করার প্রস্তুতি আমার রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের নানা অনিয়ম ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে রাজশাহীর ভোটাররা আবারও ধানের শীষকে জয়ী করাবে বলে আশা করি।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকবে। কাউন্সিলর পদে এ তিনটি সংগঠনে এখনও দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি সাধারণ এবং ১০টি নারী সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রার্থীরা মাঠে কাজ শুরু করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি এবং জামায়াতের তৃণমূলে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। জানা গেছে, রাসিক নির্বাচনে মোট ৪০টি কাউন্সিলর পদের বিপরীতে দেড় শতাধিক আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থী প্রচারণায় রয়েছেন। তিন নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান এবং সাবেক কাউন্সিলর কামাল হোসেন প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। এছাড়া চার নম্বর ওয়ার্ডে সাজ্জাদ হোসেন এবং রুহুল আমিন টুনু ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ কবির মুক্তা প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন।

অন্যদিকে বিএনপিতেও রয়েছে একাধিক প্রার্থী। নগরীর এক নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর বিএনপির সদস্য মনসুর রহমান, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুস শহিদ, শামীম হোসেন বিএনপি প্রার্থী। এছাড়া এ ওয়ার্ডে জামায়াতের প্রার্থী রয়েছেন ইলিয়াস আলী। একইভাবে দুই নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মাহবুব সাঈদ টুকু এবং মোখলেসুর রহমান বিএনপির প্রার্থী। এছাড়া এ ওয়ার্ডে জামায়াতের প্রার্থী রয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর নোমানুল ইসলাম। একইভাবে নগরীর অন্য ওয়ার্ডগুলোতেই বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।

সূত্রঃ যুগান্তর

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

সিটি নির্বাচনে আ’লীগ বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্তই মূল চ্যালেঞ্জ

আপডেট টাইম : ১১:০০:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ জুন ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ক্রমশ বাড়ছে রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের উত্তাপ। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই তিন সিটিতে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। নগরবাসী, ভোটার, দলীয় নেতাকর্মী-সবার মুখে নির্বাচনী আলাপ। বিশেষ করে কোন দল থেকে মেয়র পদে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন এই নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। সরকারের শেষ সময়ে তিন সিটিতে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণে মরিয়া আওয়ামী লীগ। পিছিয়ে নেই বিএনপিও। তারাও জয় নিশ্চিত করতে চায়। তাই জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থীর সন্ধান করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাইকমান্ড।

এদিকে তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন দুই দলের সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তিন সিটিতেই একাধিক প্রার্থী মাঠে আছেন। মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী সংখ্যা কিছুটা কম হলেও কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় সমর্থন পেতে চালাচ্ছেন লবিং তদবির। স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি অনেকে কেন্দ্রেও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। খুলনার মতো এ তিন সিটিতেও একক কাউন্সিলর প্রার্থী দিতে হিমশিম খেতে হবে দুই দলের নীতিনির্ধারকদের। দল সমর্থন না দিলেও অনেকে নির্বাচন করতে অনড়। প্রয়োজনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে চিন্তিত দুই দলের নীতিনির্ধারকরা।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুসারে ৩০ জুলাই এ তিন সিটিতে হবে ভোট গ্রহণ। ১৩ জুন থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৮ জুন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ ও ২ জুলাই এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জুলাই। ১০ জুলাই এ সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে নির্বাচনী প্রচার। তিন সিটিতেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রোববার তিনি বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জে জয় পেয়েছি। মাঝে কুমিল্লা ও রংপুরে ছন্দপতন হয়েছে। খুলনাতে জয় পেয়ে ফের জয়ের ধারায় ফিরে এসেছি। গাজীপুরেও আমাদের জয় হবে। এই জয়ের ধারায় সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও অব্যাহত থাকবে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনপ্রিয়তা দিয়েই আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিককে বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ এখনও শুরু করিনি। মহাসচিবসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতা দেশের বাইরে আছেন। তারা ফিরলেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনে এই তিন সিটিতে যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও যোগ্যদের মনোনয়ন দেয়া হবে। মেয়র এবং কাউন্সিলর পদে যাতে একক প্রার্থী থাকে সেই বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি।

নজরুল বলেন, খুলনার পর সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস বেড়েই চলেছে। তারপরও আমরা আশা করব নির্বাচন কমিশন গাজীপুরে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে ভোটারদের সেই সন্দেহ দূর করবে। সূত্র জানায়, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র ছেড়ে কাউন্সিলর নিয়ে হিসাব কষছে ১৪ দলের শরিকরা। তারা তিন সিটিতে কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলরে ভাগ চায়। সিটি নির্বাচন নিয়ে আজ বুধবার ১৪ দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও বেঁকে বসতে পারে এমন নেতাদের ডাকা হচ্ছে ঢাকায়। আর কাউন্সিলরে বিদ্রোহী প্রার্থী রুখতে থাকছে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার নির্দেশ। খুলনায় এ কৌশল কাজে দেয়ায়, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও এটা প্রয়োগ করা হবে। এতে কাজ হবে এমন আশা করছে আওয়ামী লীগ।

অপরদিকে নিজ দলের একাধিক প্রার্থী ছাড়াও জোটের শরিক জামায়াতকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকায় স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার চিন্তাভাবনা রয়েছে দলটির। সিলেট : বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এতে ঘুরেফিরে আসছে সিসিকের বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী এবং সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নাম।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এখন পর্যন্ত এ দুজনই এগিয়ে আছেন। তবে মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে এ দুই নেতাকে ঘরের লড়াই সামলাতে হচ্ছে। উভয় নেতাই নিজ দলে মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মুখোমুখি হচ্ছেন। জানা গেছে, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পাশাপাশি ভোটের মাঠে সক্রিয় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম। জানতে চাইলে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সাংবাদিককে বলেন, দলীয় সভাপতির নির্দেশ পেয়েই দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচনী মাঠে আছি। এরইমধ্যে একাধিকবার প্রতিটি ওয়ার্ড ঘুরেছি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এলাকার উন্নয়ন চায়। আর উন্নয়নের জন্য সিলেটের ভোটাররা আমার সঙ্গেই আছে। সিলেটে আওয়ামী লীগের আর কোনো প্রার্থী নেই জানিয়ে কামরান বলেন, যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারাও কেন্দ্রের নির্দেশে আমার পক্ষে কাজ করবেন।

এদিকে বিএনপি থেকে এবারও মনোনয়ন পেতে পারেন আরিফুল হক চৌধুরী- এমন জোর গুঞ্জন রয়েছে। মেয়র পদে আরিফের সঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ও টানা তিনবারের সিটি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর নামও শোনা যাচ্ছে।
সিসিকের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, মানুষের রায় নিয়ে গত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলাম। বাকি সময়ে প্রতিশ্র“ত উন্নয়নকাজ শেষ করার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি দলীয় কাজেও সময় দিয়েছি। দল নিশ্চয়ই এসব বিবেচনা করে মনোনয়ন দেবে। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য গত এক বছর ধরে কাজ করে চলেছি আমি। সিলেটকে তিলোত্তমা হিসেবে গড়ে তুলতে আমার নিজস্ব কিছু পরিকল্পনাও আছে। দল মূল্যায়ন করলে আমি নির্বাচন করব।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠে আছেন। যদিও উভয় দলের স্থানীয় নেতারা প্রত্যেক ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দেয়ার চেষ্টা করছেন। নগরীর ৩নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলর আবজাদ হোসেন আমজাদ ও একই দলের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল খালিক ও একেএম লায়েক, ৪নং ওয়ার্ডে বিএনপির সোহাদ রব চৌধুরীসহ অন্যরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

৫নং ওয়ার্ডে বিএনপির হুমায়ুন আহমদ কামাল, সাবেক পৌর কমিশনার কামাল মিয়া (গুল্লি কামাল) ও আমিনুর রহমান খোকন, ৬নং ওয়ার্ডে বিএনপির বর্তমান কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে আছেন বিএনপির আরেক নেতা এমদাদ হোসেন চৌধুরী। ৮নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াছ, একই দলের সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাস, ১১নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলর রকিবুল ইসলাম ঝলক ও একই দলের সাবেক কাউন্সিলর এ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব বাবলু ভোটযুদ্ধে নামছেন। এভাবে প্রতি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগ বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে আছেন।

বরিশাল : মেয়র পদ নিয়ে রাজশাহী ও সিলেটে অনানুষ্ঠানিক ঘোষণার কথা শোনা গেলেও বরিশালের প্রার্থিতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে আওয়ামী লীগ। এখানে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে জয় নিশ্চিত করার মতো প্রার্থীর অভাব দেখছে দলটি। আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর বড় ছেলে সাদেক আবদুল্লাহর মেয়র পদে মনোনয়নের বিষয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে আছে।

তবে জয় নিশ্চিতের জন্য নানা কৌশলের অংশ হিসেবে তা এখনই দৃশ্যমান করা হচ্ছে না। বরিশালে আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম ও মাহবুব উদ্দিন আহমেদ জোর লবিং করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান মঙ্গলবার সাংবাদিককে বলেন, জয় ছিনিয়ে আনতে পারবে এমন প্রার্থীর সন্ধান করছি। জনপ্রিয় একাধিক প্রার্থীর মধ্য থেকেই একজনকে চূড়ান্ত করা হবে। সামনে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভা আছে। সেখানে নাম প্রকাশ করা হবে। এদিকে বরিশালে বিএনপির ছয়জন প্রার্থী মনোনয়ন দৌড়ে আছেন। তারা মনোনয়ন পেতে নানা মাধ্যমে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরা হলেন, বর্তমান মেয়র আহসান হাবীব কামাল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ওবায়দুল হক চাঁন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীন, মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা আফরোজা খানম নাসরিন।

তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, খুলনার মতো বরিশালেও মনোনয়নে চমক থাকতে পারে। প্রকাশ্যে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেও সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সরোয়ারের হাতে ধানের শীষ তুলে দিতে পারে দলটির হাইকমান্ড। দলের নীতিনির্ধারকের সিদ্ধান্ত মেনে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব সরোয়ারই হতে পারেন বরিশালের বিএনপির মেয়র প্রার্থী। জানতে চাইলে মজিবুর রহমান সরোয়ার সাংবাদিককে বলেন, আমি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই। তারপরও দলের হাইকমান্ড যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।

জানা গেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ৩০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে দুই দলের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে। ৭ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে নিগার সুলতানা হনুফা, ইমরুল আহম্মেদ উজ্জল, আব্দুল খালেক কায়সার বিশ্বাস- বিএনপি থেকে সৈয়দ আকবর হোসেন মাঠে রয়েছেন। ২০নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে- এসএম জাকির হোসেন, জিয়াউর রহমান বিপ্লব ও বিএনপি থেকে মো. বাতেন (ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক), ৮নং ওয়ার্ডে বিএনপি থেকে সেলিম হাওলাদার, মো. আল আমিন- আওয়ামী লীগ থেকে শেখ মনি, বশির আহম্মেদ মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ১৯নং ওয়ার্ডে গাজী নইমুল হোসেন লিটু, মো. সুনহাম-বিএনপি থেকে জাহিদ হোসেন, কাজী বশির ও মোস্তাফিজুর রহমান বাবু আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ২১নং ওয়ার্ডে বিএনপি থেকে আলতাফ মাহামুদ সিকদার, খন্দকার আবুল হাসান লিমন- আওয়ামী লীগ থেকে শেখ সাঈয়েদ আহম্মেদ মান্না, এসএম সুজন মাঠে আছেন।

রাজশাহী : রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে অন্য দুই সিটির চেয়ে এখানে মেয়র পদে দুই দলেই সম্ভাব্য প্রার্থী সংখ্যা কম। আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিটনের প্রার্থিতার বিষয়ে সবুজ সংকেত দেয়ায় এখানে অন্য নেতারা প্রার্থিতার বিষয়ে সাহস করছেন না। এছাড়া রাজশাহী সিটির যে উন্নয়ন হয়েছে সাবেক মেয়র লিটনের হাত ধরেই। তাই জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানের ছেলে খায়রুজ্জামান রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে তফসিল ঘোষণা হলেও বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন তা স্পষ্ট হয়নি। বর্তমান মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবারো নির্বাচন করতে চান। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ভোট করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাই এই সিটিতে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্তে ততটা বেগ পেতে হবে না। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী নিয়ে দুশ্চিন্তায় দলটি। কারণ দলটি ইতিমধ্যে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। মহানগর সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসাইন স্বতন্ত্র প্রার্থী করা হয়েছে। তবে তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। চানতে চাইলে বুলবুল সাংবাদিককে বলেন, গত নির্বাচনে দল আমার ওপর আস্থা রেখেছিল। আমি সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছি। মেয়র হওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলের নানা বাধার মুখেও নগরীর উন্নয়নে যথাসাধ্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করার প্রস্তুতি আমার রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের নানা অনিয়ম ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে রাজশাহীর ভোটাররা আবারও ধানের শীষকে জয়ী করাবে বলে আশা করি।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকবে। কাউন্সিলর পদে এ তিনটি সংগঠনে এখনও দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি সাধারণ এবং ১০টি নারী সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রার্থীরা মাঠে কাজ শুরু করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি এবং জামায়াতের তৃণমূলে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। জানা গেছে, রাসিক নির্বাচনে মোট ৪০টি কাউন্সিলর পদের বিপরীতে দেড় শতাধিক আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থী প্রচারণায় রয়েছেন। তিন নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বর্তমান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান এবং সাবেক কাউন্সিলর কামাল হোসেন প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। এছাড়া চার নম্বর ওয়ার্ডে সাজ্জাদ হোসেন এবং রুহুল আমিন টুনু ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ কবির মুক্তা প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন।

অন্যদিকে বিএনপিতেও রয়েছে একাধিক প্রার্থী। নগরীর এক নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর বিএনপির সদস্য মনসুর রহমান, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুস শহিদ, শামীম হোসেন বিএনপি প্রার্থী। এছাড়া এ ওয়ার্ডে জামায়াতের প্রার্থী রয়েছেন ইলিয়াস আলী। একইভাবে দুই নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মাহবুব সাঈদ টুকু এবং মোখলেসুর রহমান বিএনপির প্রার্থী। এছাড়া এ ওয়ার্ডে জামায়াতের প্রার্থী রয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর নোমানুল ইসলাম। একইভাবে নগরীর অন্য ওয়ার্ডগুলোতেই বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।

সূত্রঃ যুগান্তর