হাওর বার্তা ডেস্কঃ মৃত্যু বলতে জীবনের সমাপ্তি বুঝায । ইসলাম ধর্মমতে, মৃত্যু হলো জাগতিক দেহ থেকে আত্মার পৃথকীকরণ এবং মৃত্যু পরবর্তী জগত অর্থাৎ আখিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক মৃত্যুর উল্লেখ পাওয়া যায়, যার সঠিক কারণ এখনও অজানা। রহস্যজনক এসব মৃত্যু শুধুই আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা, নাকি হত্যা সেই রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি আজও। অনেক বড় বড় তারকা ব্যক্তিত্বও এমন রহস্যময় মৃত্যুর শিকার হয়েছেন যুগে যুগে। প্রিয় এসব তারকার রহস্যজনক মৃত্যু তোলপাড় করে তোলে ভক্তদের হৃদয়। তাই রটনাও ছিল অনেক এসব মৃত্যুকে ঘিরে। রহসস্যজনক মৃত্যুর শিকার এমন কিছু তারকার কথাই আলোচনা করবো আজকে:
মাইকেল জ্যাকসন:
২০০৯ সালের ২৫ জুন,মাইকেল জ্যাকসনের আকস্মিক মৃত্যু সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় সমাজের সামনে হীনমন্যতায় ভুগতেন তিনি। তাই প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজেকে ফর্সা করে তোলেন। এছাড়াও তিনি ত্বকের সমস্যায় ভুগতেন। এসবের দরুণ তাকে দীর্ঘমেয়াদী পেইন কিলার সেবন করতে হত, যা তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে নিশ্চিত করেন ডাক্তারগণ। কিন্তু একইসাথে তার মৃত্যু নিয়ে শুরু হয়ে যায় বিতর্ক।
মৃত্যুর সময়ে তার দেহে ছয় ধরনের মাদকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়। কিন্তু পপসম্রাটের মৃত্যুর জন্য লস অ্যাঞ্জেলেসের করোনার কার্যালয় তার চিকিৎসক কনরাড মারেকেই দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। যদিও আইনজীবীরা দাবী করেন, মাইকেল নিজেই ওষুধটির অতিরিক্ত সেবনে মৃত্যুবরণ করেন। তাই মাইকেল নিজের বেখেয়ালি ওষুধ সেবনে মৃত্যুবরণ করেন নাকি এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা তা আজও রয়ে গেছে রহস্যের আড়ালে।
মেরিলিন মনরো:
মার্কিন অভিনেত্রী, গায়িকা, প্রযোজক ও মডেল মেরিলিন মনরো ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট লস অ্যাঞ্জেলেসের ব্রেন্টউডে নিজের বিলাসবহুল বাড়িতে মারা যান। ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নায়াগ্রা‘ সিনেমাটির বদৌলতেই মূলত তারকা বনে যান তিনি রাতারাতি। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তার মৃত্যু অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে মেনে নিতে রাজি নয় তার ভক্তেরা। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবনে তার মৃত্যু হয়েছে তদন্তের রিপোর্টে এমন উল্লেখ থাকলেও মনরোর স্বামী পরিচয়ের দাবিদার রবার্ট স্ল্যাটজার তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন কেনেডি পরিবারকে।
প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে মনরো অনেক গোপন তথ্য জানতেন, যার কারণে তাকে হত্যা করা হয়-এমন অভিযোগও ওঠে। হয়তো তাই মনরোর মৃত্যুর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, কথিত আত্মহত্যার নোট, পুলিশের রিপোর্ট সরিয়ে ফেলে সেগুলো হারিয়ে গেছে এমনটি প্রচার করা হয়। সত্যিই তাকে এমন ভয়াবহতার শিকার হতে হয়েছিল নাকি নিজেই তার জীবনদ্বার রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন- সেই রহস্য তার মৃত্যুর সাথেই গুপ্ত হয়ে গেছে চিরকালের জন্য।
জিম মরিসন:
জনপ্রিয় রক ব্যান্ড ‘The Doors‘ এর ভোকালিস্ট জিম মরিসন । রক সঙ্গীতের অন্যতম অগ্রদূত হিসেবে তাকে আজও স্মরণ করা হয়। মাত্র ২৭ বছর বয়সে প্যারিসে মারা যান তিনি। অভিনেত্রী ও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে খ্যাত ফেইথফুলের সাথে সস্পর্ক ছিল মরিসনের। তিনি অভিযোগ তোলেন, তার সাবেক প্রেমিক জাঁ দে ব্রেতোয়া মরিসনের হত্যার জন্য দায়ী। জাঁ দে ব্রেতোয়া ছিলেন একজন মাদক ব্যাবসায়ী এবং মরিসন তার কাছ থেকেই মাদক সংগ্রহ করতেন বলে জানা যায়। ডাক্তারেরা তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত মদ্যপানকে উল্লেখ করলেও মরিসনের ময়নাতদন্ত কখনই হয়নি। তাই তার মৃত্যুর ভ্রমজালও অস্পষ্টই রয়ে গেছে সকলের কাছে।
সালমান শাহ:
১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর মারা যান সালমান শাহ। বাংলাদেশে সালমান শাহ অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো তাঁর জীবনের রথও থেমে গিয়েছিল ওই ছবি করার ঠিক চার বছর পর। এরপর তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। সালমানের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে না পারায় তাঁর ভক্তদের মাঝে তৈরি হয় নানা প্রশ্নের।
মৃত্যুর আটদিন পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে মামলার কাজ সেখানেই থেমে যায়। তাঁর মৃত্যু এখনো একটি বড় রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
জিয়া খান:
২০১৩ সালের ৩ জুন মুম্বাইয়ে নিজ বাসায় ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। জানা যায়ম অভিনেতা আদিত্য পাঞ্চোলির পুত্র সুরজ পাঞ্চোলির সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল জিয়ার। তার সুইসাইড নোট থেকে জানা যায়, মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেই গর্ভপাত করেন তিনি। এছাড়াও সেখানে তিনি শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের কথাও উল্লেখ করেন। গলায় ফাঁসের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে প্রমাণ হলেও তার মা রাবেয়া খান দাবী করেন, জিয়া আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।