হাওর বার্তা ডেস্কঃ আবহমানকাল ধরে বাঁশের তৈরি ‘ডোল’ দরিদ্র কৃষকের গোলাঘর হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। কৃষিপ্রধান এ দেশের সচ্ছল কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান সংরক্ষণের জন্য গোলাঘর তৈরি করলেও দরিদ্র কৃষকের ‘ডোল’-ই একমাত্র ভরসা। তারা জরাজীর্ণ ঘরের কোণে ডোলের মধ্যে ভরে রাখে সারা বছরের আহার।
বিশেষ করে ধান কাটার মৌসুম জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে ডোলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। আর এ চাহিদার যোগান দিতে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পৌর সদরের বকচর-ঋষিপাড়া, আঙ্গারিয়া, দফদার পাড়া, জয়মন্টপ ও বায়রা এলাকার দু’শতাধিক পরিবার যুগ যুগ ধরে এ শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন।
গত সোমবার পৌর সদরের আঙ্গারিয়া বেপারিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ৮ বছরের শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধাও এ কর্মযজ্ঞে অংশ নিচ্ছে। কেউ বাঁশ থেকে বেতি উঠাচ্ছে। আবার কেউ তা শুকিয়ে ডোল বুনছে। বংশ পরম্পরায় ডোল তৈরির সঙ্গে জড়িত মৃত কালু বেপারির পুত্র মোহাম্মদ আলী (৪৫) বলেন, বাঁশ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর তেমন লাভ হয় না।
বাপ দাদার পেশা বলে ধরে রেখেছি। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের দাবিও করেন তিনি। এ সময় বাড়ির আঙিনায় ডোল বুনন কাজ করতে ছিল তার মা বানু বিবি (৮০)। পাশেই বাঁশ থেকে বেতি বানাচ্ছিল স্ত্রী রুপালি বেগম (৩৬) ও ভাতিজি ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিখা (১৫)। মোহাম্মদ আলী পরিবারের মতো আশ-পাশের অন্য পরিবারগুলোতে পুরোদমে চলছে ডোল তৈরি কাজ।
অপর দিকে ঋষিপাড়া-বকচর মহল্লায় গিয়ে দেখা গেছে, এ শিল্পের সাথে জড়িতরা ডোল তৈরি পাশাপাশি মাছ শিকারের জন্য ওচা , চাই, নাবানি, পুনপুনি ও দোয়ারী সহ গৃহস্থলি কাজে ব্যবহ্নত কুলা ,চালুন, জাকা, টুকরি ও মাথাইল তৈরি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। বাঁশের বেতি তুলার সঙ্গে কারিগরদের ধারালো দা-এর চট চট শব্দ যেন অন্য রকম উৎসব বইছে।
ডোলের পাইকার ও কারিগর রমজান বেপারি বলেন, এ এলাকার সারা বছর তৈরিকৃত ডোল তিনিসহ একাধিক পাইকার কিনে নিয়ে স্থানীয় সিংগাইর হাট, চারিগ্রাম হাট, বায়রা হাট, সিরাজপুর হাট, মানিকনগর ও জামসা বাজারে বিক্রি করে থাকেন। তিনি আরো বলেন, ১০-৩৫ মণ ধান ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এক একটি ডোলের দাম ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। একজন কারিগর প্রতিদিন ১টি ডোল তৈরি করতে পারেন বলেও তিনি জানান।