ঢাকা ১০:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৯০ বছর বয়সে ভিক্ষা করে সংসার চলছে যার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০২:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ মে ২০১৮
  • ২৭৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হালুয়াঘাটের ৯০ বছর বয়সের সময়ও ঠেলাগাড়ি চালিয়ে যেই লোকটি সংসার চালাতো সে এখন ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাচ্ছে। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়ায় ভিক্ষাবৃত্তির মতো পেশাকে এখন বেছে নিয়েছে সে। নাম হাইছু শেখ (৯২)। বাড়ি উপজেলার ৯নং ধারা ইউনিয়নের মকিমপুর বানিয়াকান্দা গ্রামে। বয়স একশ এর কাছাকাছি চলে এসেও চালিয়েছেন ঠেলাগাড়ি।

গত শুক্রবার ভিক্ষারত অবস্থায় দেখা মিলে উপজেলার ধারা বাজারে। কথা হয় তার সঙ্গে। আমার ব্যবস্থা অইবো। কিন্তু কিছুইতো অইলোনা! আমার কি কিছু অইতনা?’ এভাবেই কথাগুলো বললেন, বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া এই বৃদ্ধা। যে কিনা কয়েকমাস আগেও ঠেলাগাড়ি চালিয়ে সংসার চালিয়েছেন।

হাইছু শেখ কানে ঠিকমতো শুনতে পায় না। চোখেও দেখে কম। শরীরের চামড়া শুকিয়ে গেছে। হাড্ডিগুলোও বাহির থেকে গণনা করা যায়। চোখের পাতায় ক্লান্তির পরশ আচ্ছন্ন করে থাকলেও জীবন যুদ্ধে অবিচল ছিলেন তিনি। হাড় মানতে শিখেননি কখনো। আট দশটা যুবকের ন্যায় প্রাণচঞ্চল ব্যক্তি ছিলেন। নব্বই বছরে এসেও জীবন সংগ্রামে কর্মঠ পুরুষ ছিলেন। যার বাঁচার একমাত্র অবলম্বন ছিলো ঠেলাগাড়ি। চল্লিশ বছর যাবৎ চালিয়েছেন তার এই জীবন যুদ্ধ।

কিন্তু অবশেষে বিধির লীলায় হার মানতে বাধ্য হয়েছেন। ঠেলাগাড়ি চালকের জীবন ছেড়ে হয়েছেন এখন ভিক্ষুক। তার জন্ম ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী ৩রা এপ্রিল ১৯২৭ ইং। বৃদ্ধা বলেন, ভিক্ষা করে কোনদিন ২০ টেহা, কোনদিন ১৫ টেহা, কোনদিন ৪০ টেহা পাই। সংসার চলে না। একটা পুলা আছে, হে ঢাহা শহরে গার্মেন্টস এর চারহি কইরা হের দিন হেই-ই- দেহে। আমারে টেহা দেয় না।

হেগর দিনই চলে না। আমারে দিবো কেমনে। ঈদের সময় অইলে কাপড় দেয়। বাবা আমি এহন ভিক্ষা করি। জমিজামা নাই, বাড়িতে মাত্র আড়াই শতাংশ জায়গা আছে। এক সময় ঠেলাগাড়ি চালিয়ে ফুলপুর, মুন্সিরহাট, ঘোষগাঁও, ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট যাইতাম। অনেক দূরে ভাড়া নিয়ে যাইতাম। এহনতো আর পারি না। কি আর করমু, খাওনতো লাগবো। তাই ভিক্ষা করি। শুনেছি সরহার নাহি আমাগরে পুনরবাহন (পুনর্বাসন) কইরা দিবো। কবে দিবো আমারে?

তিনি বলেন, বাড়িতে আমি আর আইনের চাচী থাহে। আইনের চাচীই রাইন্ধা দেয়। এভাবেই বর্ণনা দেন নব্বই বছরের বৃদ্ধা হাইছু শেখ। বয়স্ক ভাতা পান বলে স্বীকার করেন। তিনি সকলের সহযোগিতা চান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

৯০ বছর বয়সে ভিক্ষা করে সংসার চলছে যার

আপডেট টাইম : ১২:০২:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ মে ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হালুয়াঘাটের ৯০ বছর বয়সের সময়ও ঠেলাগাড়ি চালিয়ে যেই লোকটি সংসার চালাতো সে এখন ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাচ্ছে। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়ায় ভিক্ষাবৃত্তির মতো পেশাকে এখন বেছে নিয়েছে সে। নাম হাইছু শেখ (৯২)। বাড়ি উপজেলার ৯নং ধারা ইউনিয়নের মকিমপুর বানিয়াকান্দা গ্রামে। বয়স একশ এর কাছাকাছি চলে এসেও চালিয়েছেন ঠেলাগাড়ি।

গত শুক্রবার ভিক্ষারত অবস্থায় দেখা মিলে উপজেলার ধারা বাজারে। কথা হয় তার সঙ্গে। আমার ব্যবস্থা অইবো। কিন্তু কিছুইতো অইলোনা! আমার কি কিছু অইতনা?’ এভাবেই কথাগুলো বললেন, বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া এই বৃদ্ধা। যে কিনা কয়েকমাস আগেও ঠেলাগাড়ি চালিয়ে সংসার চালিয়েছেন।

হাইছু শেখ কানে ঠিকমতো শুনতে পায় না। চোখেও দেখে কম। শরীরের চামড়া শুকিয়ে গেছে। হাড্ডিগুলোও বাহির থেকে গণনা করা যায়। চোখের পাতায় ক্লান্তির পরশ আচ্ছন্ন করে থাকলেও জীবন যুদ্ধে অবিচল ছিলেন তিনি। হাড় মানতে শিখেননি কখনো। আট দশটা যুবকের ন্যায় প্রাণচঞ্চল ব্যক্তি ছিলেন। নব্বই বছরে এসেও জীবন সংগ্রামে কর্মঠ পুরুষ ছিলেন। যার বাঁচার একমাত্র অবলম্বন ছিলো ঠেলাগাড়ি। চল্লিশ বছর যাবৎ চালিয়েছেন তার এই জীবন যুদ্ধ।

কিন্তু অবশেষে বিধির লীলায় হার মানতে বাধ্য হয়েছেন। ঠেলাগাড়ি চালকের জীবন ছেড়ে হয়েছেন এখন ভিক্ষুক। তার জন্ম ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী ৩রা এপ্রিল ১৯২৭ ইং। বৃদ্ধা বলেন, ভিক্ষা করে কোনদিন ২০ টেহা, কোনদিন ১৫ টেহা, কোনদিন ৪০ টেহা পাই। সংসার চলে না। একটা পুলা আছে, হে ঢাহা শহরে গার্মেন্টস এর চারহি কইরা হের দিন হেই-ই- দেহে। আমারে টেহা দেয় না।

হেগর দিনই চলে না। আমারে দিবো কেমনে। ঈদের সময় অইলে কাপড় দেয়। বাবা আমি এহন ভিক্ষা করি। জমিজামা নাই, বাড়িতে মাত্র আড়াই শতাংশ জায়গা আছে। এক সময় ঠেলাগাড়ি চালিয়ে ফুলপুর, মুন্সিরহাট, ঘোষগাঁও, ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট যাইতাম। অনেক দূরে ভাড়া নিয়ে যাইতাম। এহনতো আর পারি না। কি আর করমু, খাওনতো লাগবো। তাই ভিক্ষা করি। শুনেছি সরহার নাহি আমাগরে পুনরবাহন (পুনর্বাসন) কইরা দিবো। কবে দিবো আমারে?

তিনি বলেন, বাড়িতে আমি আর আইনের চাচী থাহে। আইনের চাচীই রাইন্ধা দেয়। এভাবেই বর্ণনা দেন নব্বই বছরের বৃদ্ধা হাইছু শেখ। বয়স্ক ভাতা পান বলে স্বীকার করেন। তিনি সকলের সহযোগিতা চান।