হাওর বার্তা ডেস্কঃ লগ্ন শুভ হলেই বিয়েটা হয়ে যায় রাজপুত্তুরের সঙ্গে। নইলে অপেক্ষা আর অপেক্ষা—এভাবেই বাঁশবাগানের ঝোপঝাড়ে একটি কুঁড়েঘরের প্রত্যাশায় কারও কেটে যায় সারাটা জীবন। কবিও বিশাল বড় কবি হয়ে ওঠেন কোনো এক শুভ লগ্নেই। অফিসের বড়কর্তা অতি সাধারণ একটা মেয়ের প্রেমে পড়েন কোনোরকম ঘটা না করেই। অন্য সময় হলে এড়িয়েই যেতেন! নিত্যকার ঘরকন্নায় অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর ওই সাধারণ মেয়েটিই হয়ে ওঠে ‘প্রয়োজনতমা’। কোয়ালিটি নিয়ে ভাববারও সময় নেই!
কেউ কেউ শুভলগ্নের অপেক্ষায় দখিনা দুয়ারে আজও দাঁড়িয়ে! বিশাল বড় পিতলের থালা নিয়ে হঠাৎ করেই চন্দ্রাবতী আসেন। অনেকগুলো বর! আমাকে বললেন কি চাই আমি? আমি বেছে নিলাম, তিতাস পাড়ের ঘন বাঁশ বনে ধ্যানে বসেছেন যে ঋষি, শুধু তাকেই! শুনেছি তিনি বাঁশিও বাজান। আমি বেঁচে উঠি। শাশ্বতকালের প্রাচীন ব্যথাগুলো স্নেহের প্রস্রবণ হয়ে গলে গলে পড়ে।
রাজবাড়ির শেওলা পড়া পৌরাণিক দেয়ালে হু হু কান্নার সুর—চাপা পড়া স্বাধীন সত্তাগুলো মুক্তির আলোয় আজ অধিকতর নেশা মগ্ন আমি ক্রমশ মানবী হয়ে উঠি! আমি বাউল হই। একতারা হাতে নেই। ভেতরে জেগে উঠে নয়া স্বপ্ন!
ঘর বাঁধি! কুয়া থেকে ঠান্ডা পানি তুলে স্নান করি, অন্তর ধুয়ে দিই। আহা কী শান্তি! এলো চুলের জটগুলো খুলে যায়, দু’মুখো মাটির চুলায় রান্না করি, পাতা কুড়ানোর দুপুরে উদাস হই, লাল মাটি গুলিয়ে ঘর লেপি! ফুল পাখি আঁকি নয়া ঘর, বড়ই সোন্দর! রোদের আলো পইরে সাতরঙা নাকফুল চিকচিক করে। পদ্মস্নান শেষে নাকের ডগায় জমে ওঠে আহ্লাদী-ঘাম! গঞ্জ থেকে আনা বাঁশিওয়ালার লাল গামছা বুকে সোহাগ জাগায়, আমি কেঁপে কেঁপে উঠি।
ঘ্রাণ লই, বউ হওয়ার ঘ্রাণ—বড় মিঠাই ঘ্রাণ! এমন ঘ্রাণকেই বেহেশত কয়, আমি মরলে বেহেশতের দরকার নাই’!
মনে মনে কত কথা কই! সুর তুলি—‘বকুল ফুল বকুল ফুল, সোনা দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি।’ প্রেম কী এমন ফুল যা বেহেশতে ফোটে!