হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুলাদীর হারানো দুর্গ ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে মাঠে নামছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। আর বিজয় ধরে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সব দলের মনোনয়ন-প্রত্যাশী নেতারাই এখন মাঠে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে গ্রহণ করছেন বিভিন্ন কর্মসূচি। ক্ষমতাসীন মহাজোট থেকে এবার এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাশা করছেন দলের নেতাকর্মীরা। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনের আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী বিজয় লাভ করতে পারেনি। এই ইতিহাস মুছে দিতে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
বরিশাল-৩ সংসদীয় আসন (১২১) নম্বর আসনটি মুলাদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। বর্তমান সংসদ সদস্য বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা এ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতান।
বিগত নির্বাচনগুলোর ফলাফলের হিসাব মতে, এই আসন বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কারণে মুলাদী উপজেলা হিজলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে যুক্ত হলে কিছুটা বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। ওই সময়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয় লাভ করে। এভাবে বিএনপি তার দুর্গ হারায়। তখন মহাজোটের প্রার্থীর বিজয় ছিল আওয়ামী লীগের সাফল্যের নতুন মাইলফলক। কেননা ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগের গণজোয়ারের সময়ও এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন।
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে টানা চারবার বিএনপির প্রার্থী মোশাররফ হোসেন মঙ্গু এমপি নির্বাচিত হন। তাই এটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নবম সংসদ নির্বাচনে জাপা প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জয় লাভ করেন। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড় দেয়ায় ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী টিপু সুলতান এমপি নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগে যারা
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব তারিকুল হাসান মিঠু খান, সাবেক শিক্ষা সচিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্ণরস মো. সিরাজউদ্দীন আহমদ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মোস্তাক আহমেদ সেন্টুর বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান নীলু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক আসাদ। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান হাওলাদার এগিয়ে রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টির থেকে মনোনয়ন চাইবেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আহসান শাহজাদা মুন্সী। ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে নির্বাচন করতে চান বরিশাল জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান এমপি এ্যাড. শেখ মো. টিপু সুলতান, কেন্দ্রিয় যুব সংহতি নেতা ও সোনারগাঁও হোটেলের পরিচালক আতিকুর রহমান আতিক।
বিগত দুই জাতীয় নির্বাচনেই এই আসনে শরিক দলকে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের একাধিক দলের নেতারা মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাই প্রতিযোগিতার মাত্রাও বেশি। জোটের ভেতরেই এ ধরনের পরিস্থিতি দেশের খুব কম আসনেই আছে। একাদশ সংসদে এরশাদের জাপা ও ওয়ার্কার্স পার্টি যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করতে না পারে, তবে এই আসনটি ধরে রাখা তাদের সবার জন্যই কঠিন হয়ে যাবে।
মাঠে আছে বিএনপিও
বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কিছু জানা যায়নি। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে যেসব নেতা মনোনয়ন চাইবেন, তারা ঠিকই চেষ্টা-তদবিরে আছে। এই দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আ. ছত্তার খান। তবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন সেলিমা রহমান ও এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
অন্যান্য দলে যারা…
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এনডিএম থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে চান কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. এনায়েত কবির, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে প্রার্থী হতে পারেন জেলা মুজাহিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার মাহাবুব মানিক, চরলক্ষ্মীপুর ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম।