ঢাকা ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামী অর্থবছরের বাজেট কৃষিতে ভর্তুকি থাকছে ৯ হাজার কোটি টাকাই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৮:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৮
  • ৪৬৩ বার

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকি থাকছে ৯ হাজার কোটি টাকাই। খাদ্য উৎপাদনকে গুরুত্ব দিয়ে এ বরাদ্দ এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরেও কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা মাথায় রেখে আগামী বাজেটে ভর্তুকি কমানো হয়নি।

তবে কৃষিতে ভর্তুকিসহ উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয়সহ আগামী বাজেটে কৃষি খাতে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের চেয়ে এটা ৪১৬ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

এ নিয়ে কথা হয় অর্থসচিব মো. মুসলিম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আগামী বাজেট বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট।

এ বাজেটে নতুন কোনো পরিবর্তন আসছে না। গতানুগতিক নিয়মেই বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষি খাতে গুরুত্ব বেশি দেয়া হচ্ছে।

এদিকে ভর্তুকি হ্রাস করার ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে দাতা সংস্থাগুলোর। তবে বর্তমান সরকারের এটি শেষ বাজেট হওয়ায় কোনো ধরনের চাপ আমলে নেয়া হয়নি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়াসহ অন্যান্য সারের মূল্য বৃদ্ধির ওপর।

আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বাড়লেও সরকার মূল্য সমন্বয় করেনি। এছাড়া জ্বালানির মূল্যের সঙ্গেও সারের মূল্যের সম্পর্ক রয়েছে।

এসব দিক বিশ্লেষণ করেই কৃষি খাতে ভর্তুকি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ভর্তুকি না দেয়া হলে সরকারকে বেশি দাম দিয়ে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে। জানা গেছে, দাতা সংস্থাগুলো ভর্তুকি কমিয়ে আনতে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে।

বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর চাপ রয়েছে বিশ্বব্যাংকের। তাদের যুক্তি হচ্ছে- ভর্তুকির টাকা ধনীরাও পাচ্ছেন, তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে ভর্তুকি দেয়া উচিত। যাতে শুধু সুবিধাবঞ্চিতরা এর সুফল পান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য যে বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয়েছে তার অতিরিক্ত আরও ১৪২ কোটি টাকা চেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

অর্থাৎ কৃষি মন্ত্রণালয় ১৪ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এ বাড়তি বরাদ্দ চেয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও) পাঠিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ে।

ডিও লেটারে বলা হয়, আগামী অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় পরিচালনা কার্যক্রম বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১১ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা।

পরিচালনা খাতে আরও ১৪২ কোটি টাকা বাড়িয়ে এখাতে ১২ হাজার ৩৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করতে হবে। আর এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ ১৪ হাজার ১৬ কোটি টাকার স্থলে ১৪ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা করার সুপারিশ করেন তিনি।

সূত্র বলছে, এর আগে ১৫ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়। সেখানেও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আগামী বাজেটে এ অতিরিক্ত ১৪২ কোটি টাকা চাওয়া হয়।

সূত্র জানায়, অতিরিক্ত ১৪২ কোটি টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হবে সে ব্যাপারেও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে ডিও লেটারে।

বলা হয়েছে, অতিরিক্ত টাকার মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বীজ ও উদ্ভিদ সংক্রান্ত কার্যক্রমে ৪০ কোটি টাকা এবং সরবরাহ ও সেবা খাতে ৩২ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভূমি কর খাতে ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

এ অর্থ দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীন রাজশাহীর হর্টিকালচার সেন্টারের জমি দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত বাবদ সেলামির অর্থ পরিশোধ করা হবে। এছাড়াও আগামী অর্থবছরে বেশ কিছু নতুন কর্মসুচি বাবদ ব্যয় হবে আরও ৫০ কোটি টাকা।

ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বিএডিসি সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বেতন সরকার দেয়। বীজ উৎপাদনেও অর্থ ব্যয় হয়।

বর্তমান ই-টেন্ডারিং চালু, নিরাপত্তা প্রহরীর বেতন বৃদ্ধি ও বিএডিসির গোডাউন ভাড়া না পাওয়ার কারণে বছরে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা নিজস্ব আয় কমেছে।

এছাড়া শ্রমিকদের মজুরি, তেল ও জ্বালানি, বিদ্যুৎসহ বীজ উৎপাদনের উপকরণ মূল্য বাড়ছে। পাশাপাশি চুক্তিবদ্ধ কৃষকের কাছ থেকে বাজার মূল্য থেকে ২৫ শতাংশ প্রিমিয়াম দিয়ে বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বীজের মান অক্ষুণ্ণ রেখে বাজারজাত করা হচ্ছে। যে কারণে বিএডিসির পরিচালনা ব্যয় বাড়ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আগামী অর্থবছরের বাজেট কৃষিতে ভর্তুকি থাকছে ৯ হাজার কোটি টাকাই

আপডেট টাইম : ১১:৩৮:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকি থাকছে ৯ হাজার কোটি টাকাই। খাদ্য উৎপাদনকে গুরুত্ব দিয়ে এ বরাদ্দ এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরেও কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা মাথায় রেখে আগামী বাজেটে ভর্তুকি কমানো হয়নি।

তবে কৃষিতে ভর্তুকিসহ উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয়সহ আগামী বাজেটে কৃষি খাতে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের চেয়ে এটা ৪১৬ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

এ নিয়ে কথা হয় অর্থসচিব মো. মুসলিম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আগামী বাজেট বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট।

এ বাজেটে নতুন কোনো পরিবর্তন আসছে না। গতানুগতিক নিয়মেই বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষি খাতে গুরুত্ব বেশি দেয়া হচ্ছে।

এদিকে ভর্তুকি হ্রাস করার ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে দাতা সংস্থাগুলোর। তবে বর্তমান সরকারের এটি শেষ বাজেট হওয়ায় কোনো ধরনের চাপ আমলে নেয়া হয়নি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়াসহ অন্যান্য সারের মূল্য বৃদ্ধির ওপর।

আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বাড়লেও সরকার মূল্য সমন্বয় করেনি। এছাড়া জ্বালানির মূল্যের সঙ্গেও সারের মূল্যের সম্পর্ক রয়েছে।

এসব দিক বিশ্লেষণ করেই কৃষি খাতে ভর্তুকি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ভর্তুকি না দেয়া হলে সরকারকে বেশি দাম দিয়ে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে। জানা গেছে, দাতা সংস্থাগুলো ভর্তুকি কমিয়ে আনতে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে।

বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর চাপ রয়েছে বিশ্বব্যাংকের। তাদের যুক্তি হচ্ছে- ভর্তুকির টাকা ধনীরাও পাচ্ছেন, তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে ভর্তুকি দেয়া উচিত। যাতে শুধু সুবিধাবঞ্চিতরা এর সুফল পান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য যে বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয়েছে তার অতিরিক্ত আরও ১৪২ কোটি টাকা চেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

অর্থাৎ কৃষি মন্ত্রণালয় ১৪ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এ বাড়তি বরাদ্দ চেয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও) পাঠিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ে।

ডিও লেটারে বলা হয়, আগামী অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় পরিচালনা কার্যক্রম বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১১ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা।

পরিচালনা খাতে আরও ১৪২ কোটি টাকা বাড়িয়ে এখাতে ১২ হাজার ৩৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করতে হবে। আর এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ ১৪ হাজার ১৬ কোটি টাকার স্থলে ১৪ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা করার সুপারিশ করেন তিনি।

সূত্র বলছে, এর আগে ১৫ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়। সেখানেও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আগামী বাজেটে এ অতিরিক্ত ১৪২ কোটি টাকা চাওয়া হয়।

সূত্র জানায়, অতিরিক্ত ১৪২ কোটি টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হবে সে ব্যাপারেও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে ডিও লেটারে।

বলা হয়েছে, অতিরিক্ত টাকার মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বীজ ও উদ্ভিদ সংক্রান্ত কার্যক্রমে ৪০ কোটি টাকা এবং সরবরাহ ও সেবা খাতে ৩২ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভূমি কর খাতে ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

এ অর্থ দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীন রাজশাহীর হর্টিকালচার সেন্টারের জমি দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত বাবদ সেলামির অর্থ পরিশোধ করা হবে। এছাড়াও আগামী অর্থবছরে বেশ কিছু নতুন কর্মসুচি বাবদ ব্যয় হবে আরও ৫০ কোটি টাকা।

ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বিএডিসি সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বেতন সরকার দেয়। বীজ উৎপাদনেও অর্থ ব্যয় হয়।

বর্তমান ই-টেন্ডারিং চালু, নিরাপত্তা প্রহরীর বেতন বৃদ্ধি ও বিএডিসির গোডাউন ভাড়া না পাওয়ার কারণে বছরে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা নিজস্ব আয় কমেছে।

এছাড়া শ্রমিকদের মজুরি, তেল ও জ্বালানি, বিদ্যুৎসহ বীজ উৎপাদনের উপকরণ মূল্য বাড়ছে। পাশাপাশি চুক্তিবদ্ধ কৃষকের কাছ থেকে বাজার মূল্য থেকে ২৫ শতাংশ প্রিমিয়াম দিয়ে বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বীজের মান অক্ষুণ্ণ রেখে বাজারজাত করা হচ্ছে। যে কারণে বিএডিসির পরিচালনা ব্যয় বাড়ছে।