আধুনিক প্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ কৃষক হবেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পরিবেশবান্ধব টেকসই লাভজনক কৃষি উৎপাদন বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সঙ্গে কৃষির অভিযোজন কৌশল বিষয়েও তাদের দক্ষতা থাকতে হবে। এছাড়া, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ জনপ্রিয় করার জন্য আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার বলে মনে করছে সরকার।

সে কারণেই কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি শেখাতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্পও অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সূত্র জানায়, ফসল উৎপাদন বাড়ানো, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন নির্ভর করে কৃষক মাঠে ফসল উৎপাদনে কতটা আধুনিক কলাকৌশল ও প্রযুক্তি সহায়তা নিচ্ছে বা পাচ্ছে তার ওপর। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে প্রাচীন কৃষি পদ্ধতি এখন মোটেও যথেষ্ট নয়।

এমনকি একযুগ আগেও যেভাবে ফসল ফলানো যেত বা যে ধরনের বীজ, সার, কলাকৌশল ব্যবহার করা যেত, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কৃষিতে সেসব কৌশল ও চাষ পদ্ধতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টেকসই কৃষি উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কৃষকের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থার উন্নয়নে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং মাঠপর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তর জরুরি হয়ে পড়েছে। এজন্যই ‘উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ” শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক। কৃষি মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ প্রকল্পটির জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। আগামী ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদকালে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় দেশের ৮টি বিভাগের ৪৭টি জেলার ১০৬টি উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ৮টি বিভাগের ১৯টি জেলার ২০টি উপজেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সেবা কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।

উল্লেখ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (২য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি মোট ১৭৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকার, যার পুরোপুরি সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রকল্পটি ২০১১ সালে জুলাইতে শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুন মাসে দেশের ৪৭টি জেলার ১০৬টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হয়।

পরবর্তীতে আইএমইডি প্রকল্পটির কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকল্প এলাকায় ফসলের ফলন ও শস্য নিবিড়তা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রকল্প সমাপ্তি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন করে। প্রতিবেদনে কৃষক প্রশিক্ষণের সুবিধার্থে যেসব উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই, ভবিষ্যতে সেগুলোতে কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে সুপারিশ করে। আইএমইডি’র সুপারিশের আলোকে উপজেলা পর্যায়ে ১০৬টি কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ২০টি ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৩১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা ধরে ব্যয়ে ‘উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং এর মাধ্যমে কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা। এছাড়াও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকের কারিগরি দক্ষতা বাড়িয়ে বৈশ্বিক জলবায়ুর সঙ্গে কৃষির অভিযোজন ও টেকসই কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে সার ও বীজসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং অন্যান্য কৃষি সেবা কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সম্প্রসারণ কর্মীদের সঙ্গে কৃষকদের যোগাযোগ দৃঢ় ও সহজ করা। আর এসব কাজে কৃষকদের সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে নিয়োজিত কৃষি কর্মকর্তাদের গণসংযোগ বাড়াবে এ প্রকল্প।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে কৃষক প্রশিক্ষণকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের লক্ষ্যে প্রকল্পভুক্ত ১০৬টি উপজেলায় তিনতলা ভিতবিশিষ্ট ১০৬টি তিনতলা কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও কৃষক পর্যায়ে সার্বক্ষণিক সম্প্রসারণ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০টি ইউনিয়নে তিনতলা ভিতবিশিষ্ট ২০টি তিনতলা কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। একইসঙ্গে কৃষকদের কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত ব্যবস্থাপনার ওপর ৬ হাজার ৪২টি ব্যাচে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দ্রুত, কার্যকর ও যুগোপযোগী সম্প্রসারণ সেবা দিতে ২৫ ব্যাচ কর্মকর্তা এবং ৪৫ ব্যাচ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের (এসএএও) প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় কৃষি প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করতে সদ্য অবমুক্ত লাগসই কৃষি প্রযুক্তি দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে ১ হাজার ১৭টি প্রযুক্তি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ১ হাজার ১৭টি মাঠ দিবসের আয়োজন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষি সচিব মঈন আবদুল্লাহ জানান, কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে অভিজ্ঞ করতেই এ প্রকল্প নেওয়া হবে। অদূর ভবিষ্যতেই এর সুফল পাওয়া যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর