হাওর বার্তা ডেস্কঃ মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জামালপুর-৩ আসন । দুই উপজেলার তিনটি পৌরসভাসহ ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৩ জন। আসনটি আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ আসনে আওয়ামী লীগ ৬ বার, বিএনপি ১ বার, জাতীয় পার্টি ২ বার আসনটি দখলে রেখেছিল। ১৯৯১ সাল থেকেই এই আসনটি বর্তমান বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি পর পর টানা পাঁচবার নিজ দখলে রেখেছেন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বহু আগে থেকেই আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
জামালপুরের ৫টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছে এই আসনে। দীর্ঘ সময় ধরে সংসদ সদস্য থাকার কারণে মির্জা আজম তার নির্বাচনী এলাকায় রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্টসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি জেলার সার্বিক উন্নয়নসহ নিজ নির্বাচনী এলাকার দুটি উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামোরও যথেষ্ট উন্নয়ন করেছেন। জনপ্রিয় নেতা হিসেবে মির্জা আজম এরই মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। আর এ কারণেই এই আসনে আওয়ামী লীগের আর কোনো প্রার্থী নেই।
অপরদিকে এক সময়কার তুখোড় ছাত্রনেতা ৯০’র এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বিএনপি থেকে এবারও মনোনয়ন পেতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম রূপকার, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, মেধাবী সংগঠক হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়েও তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
২০০১’র জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে এক লাখ সাত হাজার ভোট পেয়ে তিনি সবার নজর কেড়েছিলেন। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ পেলে ওই সময় তিনি এমপি হতেন বলে অনেকেই মনে করেন।
১৭ বছর ধরে তিনি এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড করে নিজেকে ভোট রাজনীতিতে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। জাতীয় রাজনীতির প্রভাব আর মেলান্দহ-মাদারগঞ্জের মানুষের মধ্যে নেতৃত্ব পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা কাজে লাগিয়ে তিনি আগামী নির্বাচনে সহজেই জয়ী হতে পারবেন বলে মনে করেন বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।
স্থানীয় ভোটারদের অভিমত, এই আসনে বর্তমান বিএনপির ভঙ্গুর অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলসহ জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে এলাকায় সময় দিতে হবে। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল পুনরায় ফিরে আসেন বিএনপিতে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন সামান্য ভোটের ব্যবধানে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশীর্বাদপুষ্ট মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল আগামী নির্বাচনেও এই আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শতভাগ আশাবাদী।
বিএনপির একক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এরই মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও এই আসন থেকে জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেলান্দহ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মীর সামসুল আলম লিপটনও দলীয় মনোনয়ন পেতে এলাকায় জোর গণসংযোগ শুরু করেছেন। তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছিলেন।
পরে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তিনি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি এই আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগাম বার্তা ছড়িয়ে দিতেই তিনি স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। গেল বন্যায় নিজস্ব অর্থায়নে বন্যার্তদের মাঝে তিনি বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। এ ছাড়াও মীর সামসুল আলম লিপটন এলাকার দরিদ্র মানুষদেরকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সূত্রঃ মানবজমিন