উত্তরাঞ্চলে এবার অতিবৃষ্টি আর বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় কয়েক’শ হাজার হেক্টর রোপা আমন ধান খেত। এসব জমিতে দ্বিতীয় বারের মতো চাষাবাদ শুরু করার জন্য পর্যাপ্ত চারা না থাকায় অনেকটাই হতাশ ও দুশ্চিন্তায় আছেন এ অঞ্চলের কৃষক। ফলে চলতি মৌসুমে জমিগুলো অনাবাদী থেকে যাচ্ছে, এতে খাদ্য ঘার্তিসহ তীব্র গো-খাদ্যর সঙ্কট দেখা দিবে বলে ধারণা বিশিষ্ট জনের।
এদিকে চাষী অভিযোগ, যাদের কাছে চারা পাওয়া যাচ্ছে তারাও আবার বেশি দাম রাখছে। চারার মানও তেমন ভালো না হওয়ায় অনেকে আবার জমি পতিত রাখতে বাধ্য হচ্ছে । কৃষি অফিস থেকে বলা হচ্ছে, নতুন করে ধান লাগানোর কথা বললেও তারা সবাইকে চারার ব্যবস্থা পর্যাপ্ত করে দিতে না পারলেও দায় স্বীকার করতে রাজি নন কৃষি বিভাগ । তবে, চারার এ সঙ্কট দ্রুত কেটে যাবে বলে জানান তারা। রোববার কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের (ডিইএ) মহাপরিচালক ও কৃষিবিদ আব্দুল হামিদ প্রতিবেদককে জানান, গত সপ্তাহ থেকে ডিইএ’র চারা বিতরণের কাজ চলছে।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চারা বিতরণ শুরু কথা আছে। তবে, মৎস্য ন্যায়ের মতো আগে আসলে আগে পাবেন – এই নীতিতে চারা বিতরণ করা হবে বলে জনান ডিইএ।
রংপুর বিভাগের রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম সহ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খবর নিয়ে দেখা যায়, ডুবে যাওয়া আবাদি জমির অধিকাংশ ফসলই নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ায় এসব জমিতে দ্বিতীয় বারের মতো ধানের চারা রোপনের সুযোগ থাকলেও চারা বীজ সঙ্কটে এলাকা গুলো । আর কিছু কিছু জমিতে পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় ধানগাছগুলো কিছুটা জেগে উঠেছে। কাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে শেখ জব্বার ও সোলেমান নামে দুই চাষির মধ্যে তর্ক চলছিল।
কাছে গিয়ে জানা গেলো, শেখ জব্বার বলছেন, জমিতে পানি সরে গেছে কিন্তু চারার অভাবে ধান লাগাতে পারছেন না। আর সোলেমান বললেন, ‘টাকা থাকলি চারার অভাব নাই। কত চারা লাগবি তোমার?’ তাদের তর্কের মাঝে আরও কয়েকজন উপস্থিত হলেন। তাদের মধ্যে জহুরুল ইসলামের দাবি, পর্যাপ্ত চারা পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তাও মানের দিক দিয়ে ভালো না, আর দামও বেশি। এদিকে উঁচু জমির ধান বেশ ভালো আছে। এসব ক্ষেতের পাশ দিয়ে যেতেই মন ভরে যায়। বিশেষ করে রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মূল সড়কের পাশে জমিগুলোর ধান এখনো অনেক ভালো আছে। গাইবান্ধা উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ফুলু শেখ জানান, তিনি এক একর জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। এর মধ্যে কয়েক শতক জমির ধান ভালো আছে। আর বাকি জমির পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এই ধান ঘরে তুলে আগামী বছরের খাবারের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন তিনি। ফুলু শেখ বলেন, অনেক জমির ধানের পানি সরে গেলেও চারা না পাওয়ায় ধানের জমিগুলো পতিতই রাখতে হচ্ছে। এখন উপায় না পেয়ে আলু চাষের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে। পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারি এলাকায় গিয়ে একই অভিযোগ পাওয়া গেলো। পানি সরে গেলেও চারার অভাবে ধান লাগাতে পারছেন না কৃষকরা। আশরাফুল নামে এক কৃষক জানান, এবারই প্রথম কৃষি অফিস থেকে তাদের খোঁজ খবর নেওয়া হলো। কিন্তু কোলে অনেকেই ধান লাগিয়ে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু কারও কাছে তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
ডিইএ সূত্র বলছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চারা বিতরণ করা হবে। প্রায় ৭০ একর জমির চারা পাবেন কৃষকরা। এখান থেকে প্রায় এক হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ধান লাগানো যাবে।
ডিইএ মহাপরিচালক জানান, তিনি কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শন করেছেন। কৃষকরা অন্যান্য সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি রবিশস্যের জন্য দ্রুত বীজ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন। মাঠে বিকল্প ফসল উৎপাদনে তাদের প্রস্তুতি আছে বলে জানান এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে কৃষকদের আগ্রহের দিকগুলো প্রাধান্য দিয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে কৃষকরা জানান, নিচু জমিতে চলতি মৌসুমে আর কোনো আবাদ করার সুযোগ নেই। তাই চারা পাওয়া গেলে তারা আবারো জমিতে ধান লাগাতে চান।
এক্ষেত্রে কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা করলে ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ করা সম্ভব। রোপা আমনের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সঠিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা যেন প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে যদি কোনো সহযোগিতা দরকার হয় তাহলে যেন ক্ষতিগ্রস্তরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আগে সুবিধা পায় সে দাবিও জানিয়েছে কৃষকরা।