হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্যাপক তৎপরতায় এবং সাহসিকতা শান্তিপূর্ণ ও সাফল্যের জন্যে এবারও বাংলাদেশ পুলিশের সম্মানজনক ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ (বিপিএম) পেয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় বারের মত তিনি এই পদক পেলেন। এর আগে তিনি দুইবার পুলিশের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক ‘প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক’ (পিপিএম) লাভ করেন।
ব্যাপক তৎপরতায় এবং সাহসিকতার ফলে শান্তিপূর্ণ ও সফলভাবে এবার ১৩ জানুয়ারী থেকে ১৫ জানুয়ারী পর্যন্ত প্রথম পর্ব এবং ২০ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারী দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন। গত বছরের (২০১৬) ৮ জানুয়ারী থেকে ১০ জানুয়ারী পর্যন্ত ১ম পর্ব এবং গত ১৫ জানুয়ারী থেকে ১৭ জানুয়ারী পর্যন্ত ২য় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পবিত্র মাহে রমজান মাস ও ঈদ-উল-ফিতর উৎসব এবং ঈদ-উল-আযহা উৎসব উৎযাপন এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দূর্গাপুজা উপলক্ষে সকল প্রকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণসহ ঘরমুখো মানুষদের নির্বিগ্নে স্ব স্ব গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিতে এবং গাজীপুর জেলার মহাসড়কসহ অন্যান্য সড়কে যানজট মুক্ত রাখতে সক্ষম হন তিনি।
গত বছরের (২০১৬) ১৯ জুলাই জনৈক আঃ আলীম গাজীপুরের জয়দেবপুর থানাধীন বোর্ডবাজার ডাচ বাংলা ব্যাংক হতে ১০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়ার সময় পূর্ব হতে উৎ পেতে থাকা ছিনতাইকারীরা ওই ব্যক্তিকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নাওজোড়ের দিকে নিয়ে যায়। পুলিশ সুপার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশি হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা করেন। তাৎক্ষনিক পুলিশি হস্তাক্ষেপের ফলে ছিনতাইকারীরা টাকা ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত টাকা প্রকৃত মালিকের নিকট বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হন। বিষয়টি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
গত বছরের ২৭ আগষ্ট শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে আইজিপির উপস্থিতিতে স্থানীয় নেতৃস্থানীয় আলেম-ওলামাগণ, মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্র, সাংবাদিক, আইনজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও কমিউনিটি পুলিশিং এর সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি বিশাল কমিউনিটি পুলিশিং ও সূধি সমাবেশ আয়োজন করেন। যার ফলে গাজীপুর জেলার জনগণের মধ্যে জঙ্গীবাদ বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাপক জন সচেতনতার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও প্রতিটি থানায় কমিউনিটি পুলিশিং ও সূধি সমাবেশ আয়োজন করার ফলে জেলার অপরাধ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর মানবতা বিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ফাঁসীর আদেশ প্রাপ্ত আসামী মীর কাশেম আলীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কাশিমপুর ফাঁসীর আদেশ কার্যকর করা হয়। উক্ত ফাঁসীর আদেশ কার্যকরী করার পূর্বে ও পরে পুলিশ সুপারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জেলার সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্ষম হন। নিরাপত্তা বলয়ের কারণে উক্ত ফাঁসী কার্যকর করার আগে ও পরে জেলায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়নি।
গত ১০ সেপ্টেম্বর (২০১৬) টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস লিঃ ফ্যাক্টরীতে সংঘটিত আকস্মিক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অনেক সংখ্যক শ্রমিক আহত/নিহত হয়। সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তার বলিষ্ঠ ও সাহসিক নেতৃত্বে উদ্ধার কাজে সহায়তাসহ আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ এবং নিহতদের সনাক্ত করে পরিবারের নিকট হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন।গত ৮ অক্টোবর (২০১৬) জয়দেবপুর থানার হাড়িনাল পাতারটেক এলাকায় জঙ্গী আস্তানার বিষয় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। তার বলিষ্ঠ ও সাহসিক নেতৃত্বে সফল অভিযান পরিচালনাকালে ঢাকা বিভাগীয় প্রধান নব্য জেএমবি ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশসহ সাত জন জঙ্গী সদস্য নিহত হয়। ফলে বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ জনগণের নিকট বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী প্রশংসিত হয়।
এছাড়াও তার বলিষ্ঠ ও সাহসিক নেতৃত্বে বিভিন্ন সময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধার, মাদকসেবী ও মাদকদ্রব্য বিক্রতাদের গ্রেফতার এবং মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে গাজীপুর জেলা পুলিশ ব্যাপক সফলতা লাভ করে। ফলে গাজীপুর জেলায় ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবজী, চোরাকারবারী, ভূমি দস্যুদের দখলবাজী ইত্যাদি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জনগণের প্রশংসা পেয়েছে। তিনি পোশাক শিল্পে নাশকতাকারীদের কঠোর হাতে দমন করেছেন। তিনি গাজীপুরে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন শিল্প, কল-কারখানা, গার্মেন্ট, ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ঝুট নিয়ে হাঙ্গামা কঠোরভাবে প্রতিহত করে অনাচারে জড়িত ব্যক্তি সরকারদলীয় সংগঠনের সদস্য হলেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। জেলার গার্মেন্ট মালিক, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা যাতে শান্তিতে ও নিরাপদে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারেন সেজন্যেও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট যোগ দেন। যোগ দিয়েই মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সব শ্রেণি-পেশার লোকজনকে একত্র করে মাদকবিরোধী সমাবেশ ও র্যালি করে মাদক ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবহারকারী ও জোগানদাতাদের সতর্কবার্তা পৌঁছে দেন। জেলার বিভিন্ন বাসার ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ কাজ অব্যাহত রয়েছে। নতুন ভাড়াটিয়া আসলে তাদের তথ্যও পুলিশ কর্তৃক সরবরাহকৃত ফরমে পুলিশের কাছে জমা দিতে বাড়ির মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সপ্তাহ’১৭ উপলক্ষ্যে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ২৬ জন পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) প্রদান করা হয়। গত ২৩ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইনস প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পদক প্রদান করেন। গাজীপুরের পুলিশ সুপার ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ এর আগেও দুই বার পিপিএম ও একবার বিপিএম পদক পান।
কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান গাজীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। হারুন অর রশীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স করে ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন।