বিএনপিকে বেসরকারি বিরোধীদল হিসেবে অভিহিত করলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় সাদেক হোসেন খোকা মাঠে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উদ্যোগে আয়োজিত বিনামূল্যে চক্ষু সেবা ক্যাম্প ও ওষুধ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন- এইমাত্র খবর এসেছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মারা গেছেন। এখনো মারা যাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে মারা যাচ্ছেন। সেই সময় যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তারা দুই-তিন মাস মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে অনেকেরই জীবন চলে যাচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে আসার আগে আমি নিজেও হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন ৮৪ জনকে দেখে এলাম। তাদের দাবি, সুচিকিৎসার। এই দাবি আমরাও করছি।’
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে ছেলেগুলো আর ফিরে পাবে না পা, ফিরে পাবে না তার হাত, তাদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্র তথা সরকারের। পঞ্চাশ হাজার বা এক লাখ টাকা দিলেই এটার সমাধান নয়। এসব পরিবার যতদিন বেঁচে থাকবে তাদের একটি গতি করা বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে এই আন্দোলনের চেতনা আন্দোলনের প্রেরণা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, ভুলুণ্ঠিত হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা জাগিয়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এই চেতনা জাগিয়ে রাখতে জনগণের মাঝে এমন ধারণা দিতে হবে- পরিবর্তন হলে আন্দোলনে যারা শহিদ হন, পঙ্গুত্ববরণ করেন তাদের রাষ্ট্র নিরাপত্তা দেয়, তাদের চিকিৎসা দেয় এবং পরিবারের ভরণপোষনের দায়িত্ব নেয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই আন্দোলনে ২০ হাজার বেশি আহত হয়েছেন। এদের দায়িত্ব নেওয়া রাষ্ট্রের জন্য কঠিন ব্যাপার নয়। প্রায় ২ হাজারের মতো শহিদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের ভরণপোষণ রাষ্ট্রের জন্য কঠিন ব্যাপার নয়। তাদের রক্তপাতের ওপরই তো এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, আহত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা। যাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন, সেই ব্যবস্থা করা। এই কাজটি অন্তবর্তীকালীন সরকারকে করতে হবে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘বিএনপি- আমরা কোনো সরকারি সংগঠন নই, আমরা বেসরকারি বিরোধী দল, আমরা এখনো বিরোধী দল। কিন্তু আমরা আমাদের সামর্থ্য, আমাদের নেতাকর্মীদের যা আছে- এইটা নিয়ে আমরা বিএনপি পরিবারের ব্যানারে দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছি ‘
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ক্ষমতায় আসলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যার হাত হারিয়েছেন, পা হারিয়েছেন, দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেছে তাদের দায়িত্ব নেবে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কী অটুট মনোবল নিয়ে বিএনপিকে পরিচালনা করছেন। শেখ হাসিনার পতনের পরে অনেকেই বিএনপির নামে দখলবাজি করার চেষ্টা করেছে, চাঁদাবাজি করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তারেক রহমান এটাকে শক্ত হাতে দমন করেছেন। অনেককে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন, পদ স্থগিত করেছেন নানাভাবে সাংগঠনিক শাস্তি দিয়েছেন, সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। সর্বত্র তার এই পদক্ষেপ রাষ্ট্রনায়োকচিত বলে প্রমাণিত হয়েছ।’
এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশীদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন, রফিকুল আলম মজনু, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আতিকুর রহমান রুমন, কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন প্রমুখ।