ভোটের হাওয়া : নীলফামারী-১ আওয়ামী লীগ-জাপা সরব সাড়া নেই বিএনপির

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সীমান্তবর্তী নির্বাচনী এলাকা নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয় সামরিক শাসনামলে। একপর্যায়ে এটি পরিণত হয় জাতীয় পার্টির দুর্গে। তবে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আবদুর রউফ পরাজিত করেন জাতীয় পার্টির এন কে আলমকে। এর পর থেকে এ আসনে একবার জাতীয় পার্টি তো আরেকবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী সংসদ সদস্য হয়ে আসছেন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আসনটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরব ও সক্রিয় হয়ে উঠেছে এ দুটি দল।

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের একাধিক নবীন-প্রবীণ মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা মাঠ পর্যায়ে নানা তৎপরতা শুরু করেছেন। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন হাতেগোনা মাত্র দু’জন। তারাও গণসংযোগ করছেন। তবে মনোনয়নকে ঘিরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে। যদিও ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ হলে তারাও নির্বাচন করতে আগ্রহী।

ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নিয়ে গঠিত নীলফামারীর এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দলের বর্তমান সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার, ডোমার উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম বাবুল, সাবেক সংসদ সদস্য ড. হামিদা বানু শোভা, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও নীলফামারী জেলা শাখার সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হোসেন সরকার, সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট মনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের উপসাহিত্য সম্পাদক সরকার ফারহানা আখতার সুমি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার ইমরানুল কবির চৌধুরী জনি এবং অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল তছলিম উদ্দিন।

এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মনে করা হচ্ছে শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনকে। তবে মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত শাহরিন দেশের বাইরে অবস্থান করায় নির্বাচনে প্রার্থী নাও হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন তার বাবা অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী; অথবা তার মা বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বোন সেলিনা ইসলাম। যদিও স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে কিংবা নির্বাচনী কার্যক্রমে তাদের কেউই এ পর্যন্ত দৃশ্যমান নন। এমনকি তাদের সমর্থকদের কাউকেও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাতে দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী আশা করছে, জোটগতভাবে এ আসনে তাদের প্রার্থীকেই চূড়ান্ত করা হবে। এককভাবে নির্বাচন করতে হলে এ দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। এ দল থেকে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল রশিদকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ ছাড়া এ আসনে ২০ দলীয় জোট থেকে নির্বাচন করতে চাইছেন শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ-ভাসানী) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি।

এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য ও নীলফামারী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। তবে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ডা. মখদুম আজম মাশরাফিও জাপা থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার এলাকার উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে বলেন, দল তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি আবারও জয়ী হবেন। কারণ, তার সময়ে এ এলাকার প্রতিটি সেক্টরেই ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, যা আগে কখনই হয়নি। বন্যাকবলিত ডিমলায় এবার তারা যেভাবে দুর্গত মানূষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা এককথায় নজিরবিহীন। এমপি আফতাব বলেন, তার প্রতি তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও ব্যাপক সমর্থন রয়েছে।

তবে অপর হেভিওয়েট মনোনয়নপ্রার্থী খায়রুল ইসলাম বাবুল জানান, স্থানীয় উন্নয়নে বর্তমান সাংসদের অবস্থান তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। কারণ, নিজস্ব উদ্যোগে তিনি কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করাতে পারেননি। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী গতবার ডিমলা উপজেলা থেকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তাই এবার ডোমার থেকে মনোনয়নের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, উভয় উপজেলাতেই শুধু দলে নয়, দলের বাইরেও ৩৪ বছর অধ্যাপনার সুবাদে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। মনোনয়ন পেলে জয়ের আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের নেত্রী সরকার ফারহানা আখতার সুমি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ডোমার-ডিমলায় তিনি কাজ করতে চাইলেও শুধু এমপির সদিচ্ছার অভাবে তা সম্ভব হয়নি। মনোনয়ন পেলে নির্বাচিত হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি ব্যাপক উন্নয়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এ্যাডভোকেট মনোয়ার হোসেন জানান, নির্বাচন করার প্রত্যয়ে এক দশক ধরে তিনি এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে নির্বাচনী এলাকায় এসে গণসংযোগের পাশাপাশি নানা সামাজিক কার্যক্রমও করছেন। নির্বাচিত হলে তিনি ডোমার-ডিমলাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের আদলে গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক রাষ্ট্রদূত মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হোসেন সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে এবং সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি জেলা শহরের সঙ্গে ডোমার-ডিমলার প্রতিটি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব দেবেন এবং যুবসমাজকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মজীবী হিসেবে গড়ে তুলে এলাকাকে বেকারমুক্ত করবেন।

ব্যারিস্টার ইমরানুল কবির চৌধুরী বলেন, তার দাদা আবদুর রহমান বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে নীলফামারী-১ আসন থেকে এমএলএ নির্বাচিত হয়েছিলেন। পারিবারিকভাবে তারা সব সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছেন। দাদার পথ ধরে তিনিও চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখতে।

মনোনয়নপ্রত্যাশী লে. কর্নেল (অব.) তছলিম উদ্দিন নিজের অবসরজীবনকে জনগণের উন্নয়নে উৎসর্গিত করার কথা জানিয়ে বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী ডোমার-ডিমলাকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদমুক্ত এলাকা হিসেবে গড়ে তুলবেন। ব্যাপক কর্মসংস্থানের উদ্যোগও নেবেন বলে জানান তিনি।

সাবেক সংসদ সদস্য ড. হামিদা বানু শোভা বলেন, চিলাহাটি স্থলবন্দর চালু করার ক্ষেত্রে তিনিই জোরালো ভূমিকা রাখছেন। বিষয়টি এখন শুধু ভারতীয় সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে। চিলাহাটি থেকে ঢাকাগামী সব আন্তঃনগর ট্রেন চালু করার ক্ষেত্রেও নিজের অগ্রণী ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবেন।

জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, এমপি থাকার আগে-পরে সব সময়ই সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, মনোনয়ন পেলে তার শতভাগ বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, ডোমার-ডিমলা আসনে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। মহাজোটগত নির্বাচন হলেও এ আসনে জাপাকে প্রার্থিতা দিতে হবে।

এদিকে জাপা নেতা অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ডা. মখদুম আজম মাশরাফিও চাইছেন, মহাজোট থেকে নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে। এ লক্ষ্যে তিনি এলাকায় প্রায় প্রতি মাসেই চিকিৎসা ক্যাম্প করে দরিদ্র মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ন্যাপ-ভাসানী চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি বলেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে অবশ্যই তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। মনোনয়ন প্রত্যাশা করার পাশাপাশি তিনি বলেন, জোটনেত্রী যাকে এ আসনে মনোনয়ন দেবেন, তারা তার পক্ষেই কাজ করবেন।

নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির আবদুল রশিদ বলেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তাদের প্রার্থী অল্প ভোটে হেরেছেন। আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে জোটগতভাবে জামায়াতের প্রার্থী দিলে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে তাদের প্রার্থীই জয়ী হবেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, নীলফামারী-১ আসনে তাদের বংশগত ও পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে শতভাগ জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সূত্রঃ সমকাল

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর