মৌমাছিদের গল্প

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এবার মৌমাছিরা অন্য পথ ভাবল। তারা নিজেরা আলোচনা করে ঠিক করল, এতবার অনুরোধ করেও যখন ফল হলো না, তখন অন্য রাস্তা ধরতে হবে। ঠিক হলো, যখন বাতাসের দেবতা গোসল করার জন্য নদীতে আসবে তখন ওকে আক্রমণ করা হবে। আগেই মৌমাছিরা একটা গাছে চড়ে বসে ছিল। বাতাসের দেবতা আসতেই ওরা আক্রমণ করল। মৌমাছিদের হুলের খোঁচা খেয়ে বাতাসের দেবতা ছুটল দেবতাদের রাজার কাছে এটা যখনকার গল্প, তখন নাকি মৌমাছিদের পাখা ছিল না। পরে নানারকম ঘটনা আর দুর্ঘটনা ঘটার পর মৌমাছিরা পাখা পেয়েছিল। যা হোক, আমরা গল্প শুরু করি।

সেটা এ রকমই একটা সময় ছিল। এখন কোন ঋতু চলছে বলতে পার? ঠিক বলেছ, বসন্ত ঋতু। বসন্তকে বলে ঋতুর রাজা। শীত চলে গিয়ে বসন্ত এলেই গাছে নতুন পাতা, সুন্দর সব ফুল দেখা দেয়। কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, শিমুল, সোনালু, কাঠগোলাপ, কনকচাঁপা, দোলনচাঁপা, বেলি এ রকম কত ফুলই না ফোটে। কোকিলের ডাকে তখন মনটা ভরে যায়।
মনে আছে তো, আমাদের গল্পে তখনকার মৌমাছিদের পাখা ছিল না। পাখা ছাড়া মৌমাছিদের অনেক কষ্ট। মৌচাক ছেড়ে অনেক দূরে যেতে পারে না, অনেক কষ্ট করে বেয়ে-বেয়ে গাছে চড়তে হয়। গাছে চড়তে গিয়ে অনেক সময় পা হড়কে গিয়ে একবারে ধপাস করে নিচে পাড়ে যায় অনেক মৌমাছি। আবার অনেক কষ্ট করে কোনো গাছে চড়ে কোনোমতে একটা ফুলে শুঁড় বসানোর পর বোঝা যায়, আগেই কেউ মধু নিয়ে গেছে।

এখানেই বিপদ শেষ নয়। গাছে লুকিয়ে থাকে অনেক রকম পতঙ্গ আর সরীসৃপ। যারা গপাগপ মৌমাছি ধরে আর খায়। এদের ফাঁদে পড়ে অনেক মৌমাছি প্রাণ হারায়। এছাড়া বসন্তকালে দমকা বাতাসে গাছ থেকে পড়ে যাওয়া তো সাধারণ ঘটনা। যত বিপদই হোক, তাই বলে তো মধু সংগ্রহ করা বন্ধ করা যায় না। মৌমাছিরা বুঝতে পারল, তাদের পাখা দরকার। তাহলেই এসব বিপদ কমে আসবে। ওরা সবাই বাতাসের দেবতাকে গিয়ে বলল, আমাদের এসব বিপদ থেকে বাঁচান, আমাদের পাখা দিন।

বাতাসের দেবতা বলল, আমি তো এখন খুব ব্যস্ত। তোমরা পরে এসো। বাতাসের দেবতা তখন কিন্তু মোটেই ব্যস্ত ছিল না। সে একটা কাঠি দিয়ে কান চুলকাচ্ছিল। ভরপেট খেয়ে তার মতলব ছিল লম্বা একটা ঘুম দেবে। মৌমাছিদের বিদায় করে সে তা-ই করল। এরপর ঘুম থেকে উঠে বিকেলের দিকে নদীতে গোসল করতে গেল। গোসল করা শেষ হওয়ার আগেই সে মৌমাছিদের ব্যাপারটা ভুলেই গেল। এদিকে মৌমাছিরা পরপর সাত দিন ধরে বাতাসের দেবতাকে তাগাদা দিয়েই গেল। কিন্তু প্রতিদিনই বিফল হয়ে ফিরে এলো। প্রতিবার বাতাসের দেবতা অনেক ব্যস্ততা, অনেক বাহানা দেখিয়ে মৌমাছিদের ফিরিয়ে দিল।

এবার মৌমাছিরা অন্য পথ ভাবল। তারা নিজেরা আলোচনা করে ঠিক করল, এতবার অনুরোধ করেও যখন ফল হলো না, তখন অন্য রাস্তা ধরতে হবে। ঠিক হলো, যখন বাতাসের দেবতা গোসল করার জন্য নদীতে আসবে তখন ওকে আক্রমণ করা হবে। আগেই মৌমাছিরা একটা গাছে চড়ে বসে ছিল। বাতাসের দেবতা আসতেই ওরা আক্রমণ করল। মৌমাছিদের হুলের খোঁচা খেয়ে বাতাসের দেবতা ছুটল দেবতাদের রাজার কাছে। মৌমাছিদের অভিযোগ শুনে দেবতাদের রাজা উল্টো বাতাসের দেবতাকে ধমক দিলেন। বললেন, মৌমাছিদের অভিযোগ আর চাহিদা সঠিক। ওদের পাখা দেওয়ার দায়িত্বও তোমার। তুমি দায়িত্বে অবহেলা করেছ। তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।
তখন অনেক কাকুতিমিনতি করে বাতাসের দেবতা ক্ষমা চেয়ে নিল দেবতাদের রাজার কাছে। তারপর সে মৌমাছিদের পাখা তৈরি করে দিল। সেই থেকে মৌমাছিরা উড়ে উড়ে ফুলের মধু সংগ্রহ করে নিরাপদে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর