হাওর বার্তা ডেস্কঃ দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের মহাসিং নদীর পাড় সংলগ্ন কাদিপুর গ্রামের কাছে বেড়িবাঁধের কাজ হচ্ছে ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির আওতায়। চার পিআইসির প্রায় ৩ কিলোমিটার বাঁধের বরাদ্দও বেশি। চারটি প্রকল্পে বরাদ্দ প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকা। এত বরাদ্দ থাকার পরও কাজের সময় একসপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন বাকী রয়ে গেছে বাঁধের প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ। কোনো কোন জায়গায় এখনো এক টুকরি মাটিও পড়েনি। শুধু মাটি ভরাটের কাজ নয়, বাকী আছে স্লোব তৈরি এবং ড্রেসিং-এর কাজ। এছাড়াও যে কাজে ড্রেসিং-এর কাজ শেষ বলে দাবি করা হয়েছে সে কাজেও স্লোপের গোড়ায় মাটি দেওয়া হয়নি।
বাঁধের গোড়ায় হাল্কা পানির ধাক্কা খেলে অথবা টানা বৃষ্টিপাত হলে মাটি ধসে পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এছাড়াও হাওরের ভেতর থেকে মাটি আনার কথা থাকলেও অধিকাংশ জায়গায় মাটি আনা হয়েছে নদীর পাড় থেকে এবং সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ ফুট দূর থেকে। যা সামান্য বৃষ্টি এলে ভেঙ্গে পড়ে বাঁধও ভাঙতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। দূর থেকে মাটি না আনা, পর্যাপ্ত স্লোপ ও পর্যাপ্ত দুরমুজ না করায় বাঁধের কাজে অনিয়মই বেশি দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, এ কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব নয়। যে পরিমাণ কাজ এখনো বাকী সে কাজ শেষ করতে কমপক্ষে ১৫-২০ দিন সময় লাগতে পারে।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারটি প্রকল্পের তিনটিতেই মাটি ভরাটের কাজ বাকী রয়েছে। কোনোটি প্রায় অর্ধেক অংশেই মাটি এখনো পড়েনি। যেটুকুতে মাটি পড়েছে সেটুকুতেও কোনো অংশেই দুরমুজসহ ড্রেসিং-এর কাজ হয়নি। একদম কম মাটি ব্যবহার করায় উঁচু স্লোপ যেনো ভেঙ্গে যাচ্ছে এখনই। বাঁধের ন্যূনতম ১৬৭ ফুট দূর থেকে মাটি আনার কথা থাকলেও মাত্র ১০-১৫ ফুট দূর থেকে মাটি আনা হচ্ছে। এতে গর্তগুলো গভীর হওয়ায় নদীর পাড় ভেঙ্গে বাঁধ ভাঙ্গার সম্ভাবনাও থেকে যায়। বিরাম উদ্দিনের বাড়ি থেকে মানিকপুর পর্যন্ত বাঁধের প্রকল্প সভাপতি ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার আঞ্জব আলী। বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। এখনো তার কাজের প্রায় ৪০ শতাংশ বাকী। দেওয়া হয়নি স্লোভ, দুরমুজ। করা হয়নি ড্রেসিংও। মাটি কাটার কাজও বাকী রয়েছে।
আঞ্জব আলী কাজ বাকী রয়েছে স্বীকার করে বলেন,‘আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের হাতে সময় আছে। আমরা সব কাজ করাব।’ কথা বলার মাঝামাঝি সময়ে তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন। ২২ নং পিআইসির সভাপতি সুন্দর আলী। কাজের দেখভাল করেন বিরাম উদ্দিন। বাঁধের কাছে দু’জনের কাউকেই পাওয়া যায়নি। তাদের বাঁধের অবস্থা একই। মাটি পড়েনি বেশ কিছু জায়গায়। স্লোপ হয়নি ঠিকমত। কিছু জায়গা দুরমুজ হয়েছে। বাঁধের উচ্চতা কম বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। এছাড়াও মহাসিং নদী সংলগ্ন খেওয়াঘাট থেকে থেকে পূর্ব কাদিপুর পর্যন্ত মাটি ভরাট হয়নি। কাদিপুর মসজিদের সামনে এখনও মাটি পড়েনি। কথা বলার জন্য প্রকল্প সভাপতি সুন্দর আলীর ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।
খেয়াঘাট থেকে আসামপুরের দিকে ব্রিজের মুখ পর্যন্ত কাজের বরাদ্দ ২৪ লক্ষ টাকা। পিআইস নং ২১। কোনো শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি। ড্রেসিং-এর কাজ শেষ, বাঁধের স্লোপের গোড়ায় মাটি নেই। খাড়া স্লোভ। মাটি কম হওয়ায় বৃষ্টি বা নদীতে পানি বাড়লে নৌকার আর পানির ঢেওয়ে পাড় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের। তার সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলে লাইন কেটে দেন তিনি। ২৩ নং পিআইসির সভাপতি শিবলী মিয়া। ২৪ লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ পেলেও তার কাজ বাকী প্রায় অর্ধেক। বাঁধে মাটি পড়েনি অধিকাংশ জায়গায়। তিনি কাজ সপন্ন করার নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন,‘আমার মাটি অনেক দূর থেকে আনতে হয়। স্লোপে আরো মাটি দেব। আরো ১ সপ্তাহ সময় লাগবে।
বাঁধের এমন অবস্থায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার শস্যভার দেখার হাওর বিপজ্জনক অবস্থার রয়েছে। এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। হাওরপাড়ের কৃষক ও এলাকাবাসী বলেন, এই বাঁধ শুধু যে আমাদের ফসল রক্ষা বাঁধ তা কিন্তু নয়। এটি আমাদের মহাসিং নদীর পাড়ের গ্রাম কাদিপুরের প্রধান রাস্তাও। এই কাজে অনিয়ম আমরা বরদাস্ত করব না। কাজ হচ্ছে হচ্ছে বলে সময় পার করলে হবে না। বৃষ্টি পড়লে আর কাজ হবে না। তাই দ্রুত কাজ সপন্ন করতে হবে। মানিক মিয়া নামের একজন বলেন,‘ অনেক অনিয়ম হচ্ছে এসব কাজে। যেভাবে কাজ করানো হচ্ছে তাতে এসব কাজ বৃষ্টি এলে টিকবে না।
নূরুল হক নামের আরেকজন বলেন, বাঁধের কাছ থেকে মাটি নিলে বাঁধ ভাঙ্গবেই। তাছাড়া স্লোপও কম। ভাঙ্গার সম্ভাবনা বেশি।