জাকির হোসাইনঃ গত ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে আমরা কয়েকজনে ঘুরাফেরার অংশ হিসেবে ঘুরে আসলাম পাতায়া ও ব্যাংকক সিটি। এই ট্যুরটা ছিল আমাদের সকলের জন্য। আমরা ৬ দিন ৫ রাত এর প্যাকেজ ট্যুরটা নিসিলাম। ভিসা প্রসেসিং এর কাজ করতে আমাদের বেশ কিছুদিন লেগে যায়।
আর যেহেতু এটাই আমাদের প্রথম দেশের বাইরে কোথাও যাওয়া তাই অনেক কিছুই আমাদের অজানা ছিল। যেমন সব কাগজ পত্র নিয়ে যেদিন ভিসা অফিসে গেলাম, গিয়ে শুনি বুকিং এর কাগজ ছাড়া ভিসা প্রসেসিং হবে না, স্বভাবতই আমাদের ধারণা ছিল আগে ভিসা পেলেই না তারপর টিকেট কাটা বা বুকিং। যাক বহু ঝামেলার পর অবশেষে ভিসা পেলাম।
আমাদের ফ্লাইট ছিল গত মাসের ২৮ তারিখ রাত ২ টার দিকে। ইমিগ্রেশন পার হয়ে আমরা ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমি এবং আমরা সকলে একটু ভীত আমরা যেই বেকুব প্রকৃতির, আল্লাহ জানে ঠিকঠাক মতন আবার দেশে ফিরে আসতে পারবতো। যাক ফার্স্ট টাইম প্লেন ভ্রমন আমরা খুবিই খুশি ও উত্তেজিত। আমি বরাবরের মতন এত অল্প সময়ের জার্নিতেও হেভি একখান ঘুম দিয়া দিসি।
আমরা গেসিলাম ব্যাংকক এয়ারওয়েজ এ। এদের খাবার দাবার আমার একটুও মজা লাগে নাই। আমাদের আশেপাশের মানুষদের দেখতেসি গপাগপ খাইতেসে। অবশেষে খুব ভোরে আমরা ব্যাংকক এর সুবর্নভূমি এয়ারপোর্ট এ পৌছালাম। কি বড় আর সুন্দর এয়ারপোর্ট। আমরা যেই প্যাকেজ এর গেসিলাম সেটা ছিল ৫ রাত ৬ দিন এর প্যাকেজ।
এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা এয়ারটিকেট, ব্যাংকক এয়ারপোর্ট টু পাতায়া হোটেল ট্রান্সপোর্ট (ওদের লোকরাই এসে নিয়ে যায়/বাস পাঠায়), পাতায়াতে দুইদিন হোটেল এ থাকা (শুধু ব্রেকফাস্ট ফ্রি),আবার পাতায়া টু ব্যাংকক সিটিতে হোটেল ট্রান্সপোর্ট, ওইখানে ২ দিন হোটেল এ থাকা (শুধু হোটেলের সাথে ব্রেকফাস্ট ফ্রি) বাকী দুইবারের খাবার খেয়েছি বাহিরের খাবারের হোটেলগুলোতে। আর হোটেল থেকে আবার এয়ারপোর্ট ট্রান্সপোর্ট। আমাদের হোটেল এর মানগুলা বেশ ভাল ছিল।
যাই হোক এয়ারপোর্ট এ নেমে আমরাতো চিন্তিত আমাদের যে নিতে আসবে তাকে আদৌ খুজে পাবতো। আমাদের কাছে অবশ্য ওখানের একজন গাইড লাইন ম্যাডাম থাকবে। আমরা এয়ারপোর্ট এ নেমেই অল্প ডলার ভাংগায়ে নিলাম। এয়ারপোর্ট এ এক্সচেঞ্জ রেট বাইরে থেকে কম। তারপর একটা সিম নিয়া নিলাম ট্রু টিউন কোম্পানির। যাক অবশেষে অনেক দূর হাটার পর দেখি আমাদের নাম লিখা কার্ড নিয়া একজন ম্যাডাম দাড়ায়ে আসে। সত্য এর আগে ওর নাম দেখে এত খুশি আর কখনওই লাগে নাই।
এরপর ঐ ম্যাডাম আমাদেরকে সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট থেকে নিয়া গেল পাতায়ার চনবুড়িতে। আমাদের হোটেল এর নাম ছিল হিলটন ৫স্টার ও Marcure pattaya Hotel। হোটেলটা খুবিই সুন্দর মনোরম পরিবেশ ছিল। খোলামেলা বিশাল জায়াগ জুড়ে আর সাথে সুইমিংপুলও। আমাদের রুম ছিল দুইতলা, তিনতলায়, চারতলা সামনেই বিশাল খোলা জায়গা, সুইমিং পুল। আমরা প্রথমে ফ্রেশ হয়ে হোটেলটা ঘুরে দেখলাম। তারপর রেডি হয়ে বের হলাম ঘুরতে আমরা সকলে। আমাদের হোটেল এর পাশেই মেসেজ সেন্টার বিশাল বিচ আর ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টও। আমরা বের হলাম বিশাল একটা বাস নিয়ে। গন্তব্য আন্ডার ওয়াটার ওর্য়াল্ড আরো অনেক জায়গা।
যদিও হোটেল থেকে এর দূরত্ব খুব বেশি ছিলনা কিন্তু এখানে বাস যায়ও পায়ে হেটে যাওয়া যায়। খুবই সুন্দর লাগল জায়গাটা বিশেষ করে জেলি ফিস এর এত সুন্দর রং বদলানো। ওখান থেকে আবার হোটেল এ ব্যাক করে কাছেই এক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট এ লাঞ্চ করলাম। এরপর হোটেল এ এসে একটু জিরিয়ে বের হলাম আবার ঘুরতে। এবার হেটে হেটে অনেক কিছু দেখলাম ।রাস্তায় খালি বার আর স্পা এর দোকান। সুন্দর সুন্দর অনেক জুতা স্যান্ডেল পাওয়া যায় কিছু কিনলাম। তারপর বিচে ঘুরলাম। বিকালে একটা থাই রেস্টুরেন্ট এ গিয়া পিজা খাইলাম, বুঝলাম এভাবে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট এ খেতে থাকলে টাকা সব একদিনেই ফুরায়ে যাবে।
এরপর আমরা গেলাম শপিং মলগুলা ঘুরতে। এখানে টুরিস্ট আসে বেশি দেখে জিনিস পত্র এর অনেক দাম। তাই খালি দেখেই মনের আশা মিটাতে হল। রাতে ম্যাকডোনাল্ড এ অল্প কিছু খেয়ে হোটেল এ ফিরার সময় দোকান থেকে রুটি, চিপস, জুস বিস্কিট এসব কিনে আনলাম। রাতে হোটেলটাকে আরো অনেক সুন্দর মনে হল। রাতে ওয়াইফাই কানেকশন দিয়ে নেট ইউজ করতে পারলাম না, দিনেও একদমই সিগন্যাল পাচ্ছিল না।
পরদিন সকালে এখানে ব্যুফে ব্রেকফাস্ট করলাম। ভালই অনেক আইটেম কিন্তু মিট সবই হল পিগএর ওরা বলে বেকন। তাই নানারকম সবজি ডিম আর জুস খেলাম।
তারপর আমাদের আবার ব্যাংকক সিটিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাস আসল। আবার রওনা হলাম ব্যাংকক সিটি এর উদ্দেশ্যে। পাতায়া ভ্রমন এর কিছু ছবি শেয়ার করলাম। ব্যাংকক সিটির গল্প আবার আগামী কোন পোস্টে এ।