হাওর বার্তা ডেস্কঃ শাল্লা উপজেলার জয়পুর-নোয়াগাঁওয়ের পাশের ভেলা নদীর মাঝখানের বাঁধকেই জয়পুরের ভাঙন বলা হয়। এটি দিরাই-শাল্লার ছায়ার হাওর রক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এই ভাঙনে কাজ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ ভাগ। এলাকার মানুষ এই বাঁধ নিয়ে চিন্তিত। স্থানীয় কৃষকরা বলেছেন, এই বাঁধ ভাঙলে পুরো ছায়ার হাওর ডুবে যাবে।
বাঁধের পাশের নোয়াগাঁও’ এর বাসিন্দা রূপক দাস বলেন,‘এই বাঁধ ভাঙলে নোয়াগাঁও গ্রাম থাকবে না, ডুবে যাবে ছায়ার হাওর। গত বছরও এই বাঁধ ভেঙে ছায়ার হাওর ডুবেছিল। অথচ, এখনো কেন এই বাঁধের কাজ হলো না জানি না আমরা। জয়পুর গ্রামের অসিত চৌধুরী বলেন,‘কাশিপুরের বাঁধ ভেঙে উদগলে পানি ঢুকে। পরে পানির প্রবল চাপে ভাঙে জয়পুর বাঁধ, ডুবে যায় ছায়ার হাওর। জয়পুর বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
জয়পুর বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব কৃপেশ দাস বলেন, আমাদের ক্লোজারে বাঁশের আড় দিতে সময় লেগেছে। এখন জেনারেটর চালিয়ে রাতেও কাজ করবো আমরা। দিনে ও রাতে কাজ করলে এক সপ্তাহে কাজ শেষ করা যাবে।
কেবল জয়পুর বাঁধ নয় জেলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাঙন সোমবার বিকাল পর্যন্ত অরক্ষিত ছিল। কোথাও কোথাও ৩০-৪০ ভাগ কাজও হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মোতাবেক ১০ টি ক্লোজার বা ভাঙনে এখনো ৩০ ভাগের বেশি কাজ হয়নি। সোমবার বিকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া অগ্রগতির এই রিপোর্ট পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে অন্যান্য ভাঙনে ৬০ থেকে ৯০ ভাগ কাজ হয়েছে দাবি করা হলেও বাস্তবে এই পরিমাণ কাজ হয়নি বেশির ভাগ বাঁধে।
পাউবো’র তথ্য মোতাবেক পাগনার হাওরের দিরাই অংশের ফুলিয়া টানা, শাল্লা উপজেলার উদগল হাওরের জয়পুরের ভাঙা, দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের কাশিতলা ভাঙা, দোয়ারাবাজারের নাইন্দার হাওরের পেকেংগার ভাঙা, ছাতকের চাউলির হাওরের আসলামপুর, হাতিরখাল ও সিরাজগঞ্জের বাঁধে কাজ হয়েছে ৫০ ভাগেরও নীচে । এসব ভাঙনের পাশের গ্রামগুলোতেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোন কোন ভাঙনে ৩০ ভাগও কাজ হয়নি।
গতকাল সোমবার বিকালে পাউবো’র তথ্যে শাল্লার ভান্ডা বিল প্রকল্পের নোয়াজাঙ্গাইল, হরিনগর ভাঙনে ৮০ ভাগ কাজ হয়েছে উল্লেখ করলেও শাল্লা উপজেলা হাওররক্ষা বাঁধ মনিটরিং কমিটির সদস্য পিসি দাস জানিয়েছেন, এই দুই বাঁধে ৬০ ভাগেরও কম কাজ হয়েছে।
পাউবো’র তথ্যে শাল্লার উদগল হাওরের গিলটিয়ার ভাঙনে ৮০ ভাগ কাজ হয়েছে বলা হলেও সোমবার সকালে উপজেলা মনিটরিং কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতেই পাউবো কর্মকর্তারা বলে এসেছেন কাজ হয়েছে ৪০ ভাগ।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু সোমবার জেলা শহরের জগৎজ্যোতি পাঠাগারে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জেলার বেশিরভাগ হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হয় নি। কোন কোন বাঁধে মাটির কাজ হলেও কমপেকশন এবং স্লোপ ঠিকভাবে হয়নি। প্রত্যেক পিআইসিতে প্রভাবশালীরা যুক্ত থাকায় হাওরপাড়ের কৃষকরা প্রতিবাদও করতে পারছেন না।
সুনামগঞ্জ পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেছেন, ১১৫ টি ভাঙন এবং প্রায় ১৪’শ কিলোমিটার বাঁধে গড়ে ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হবার রিপোর্ট সোমবার বিকালে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। যেসব ভাঙনে কাজ আশানুরূপভাবে হয় নি, সেগুলোর বিষয়েও অবহিত করা হচ্ছে। কাজের মেয়াদ শেষ হবার পর আরও এক সপ্তাহ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেও যারা কাজ শেষ করতে পারবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।