ঢাকা ০৬:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেখার হাওরে প্রকল্পের বাঁধে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফাটল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:২৫:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মার্চ ২০১৮
  • ২৯২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের আওতাধীন দেখার হাওর অংশের ডাইক-৩ এর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩১ নং প্রকল্পের বাঁধে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি শাহিনুর রহমান ও সদস্য সচিব আফজল হোসেন। আফজল হোসেন পূর্ব পাগলা ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেনের ছোট ভাই। অভিযোগ উঠেছে ৩১ নং প্রকল্পের বাঁধটিতে নীতিমালা না মেনে পকেট ভারি করতে দায়সার গোছের কাজ করা হচ্ছে। বাঁধের পাশ থেকে মাটি নিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পর কাজ শেষ না হতেই বাঁধে দেখা দিয়েছে ফাটল। এতে কৃষকরা শংকিত হয়ে পড়ছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩১ প্রকল্পে বাঁধের একেবারে পাশ থেকে মাটি কাটার মেশিন (এস্ক্যাভেটর) দিয়ে বিশাল বিশাল গর্ত করে নিচের মাটি উপরে তোলা হচ্ছে। নাম মাত্র ও দায়সারা গোছের কাজ করার কারণে ও বাঁধের নিচ থেকে মাটি উঠানোর জন্য বাঁধের অনেক অংশে বড়-বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধে কোন কম্প্রেসিং হচ্ছে না। এদিকে নিচ থেকে মাটি উঠাতে উঠাতে অনেক জায়গা পুকুরে পরিণত হয়েছে। আরও দেখা যায়, বাঁধের নিচ ৩৬ ফুটের জায়গায় রাখা হয়েছে ২২-২৬ ফুট ও উপরে রাখা হয়েছে ১১-১২ ফুট। উচ্চতা যেখানে ৬-৭ ফুট হওয়ার কথা সেখানে রাখা হয়েছে ৩-৩.৫ ফুট।

বাঁধের অনেকাংশে বড়-বড় মাটির টিলা রয়েছে, এগুলোকে ভাঙ্গা হয়নি, দুরমুজও করা হয়নি। এদিকে নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও আর কাজ করছেন না তারা। যেন আগাম বন্য না হলে তারা বাঁচে। প্রকল্প বরাদ্দ ২৫ লক্ষ টাকা হলেও স্থানীয়দের দাবি প্রায় ১০ লক্ষ টাকাও ব্যয় হতে পারে। জানা যায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এসএম শহিদুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হারুন অর রশীদ এ বাঁধ পরিদর্শনে গেলে বাঁধের কাজে অনিয়ম দেখতে পান। পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাগণ নিজেরাই দেখতে পান বাঁধের পাশ থেকে মাটি উঠিয়ে পুকুর তৈরি করার ফলে বাঁধে ফাটল দেখা দিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক কৃষক জানান, প্রকল্পের সদস্য সচিব আফজাল হোসেনের বাড়ি বাঁধ এলাকা থেকে প্রায় ৮ কি. মি. দূরে ও বাঁধ এলাকায় তার একটুও জমি নাই। এ ব্যাপারে পিআইসির সভাপতি শাহিনুর রহমান বলেন,‘ আমরা কাবিটা নীতিমালা মেনেই কাজ করছি। বাঁধে কিছু ফাটল দেখা দিয়েছে, আমরা সেটা ভরাট করার জন্য কাজ করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘বাঁধের পাশ থেকে মাটি উঠিয়ে বাঁধ নির্মাণ করছি কারণ আমাদের মেশিন দূর থেকে মাটি আনতে পারে না তাই। তবে গর্তগুলো ভরাট করা হবে।

এ ব্যাপারে পিআইসির সদস্য সচিব আফজাল হোসেন বলেন,‘এই পিআইসির নাম মাত্র আমি সদস্য সচিব, সব কাজ করেন পিআইসির সভাপতি শাহিনুর রহমান। আমি শুধু ব্যাংকের চেকে স্বাক্ষর করি। এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হারুন অর রশীদ বলেন,‘ সরেজমিনে আমি এ বাঁধটি দেখেছি। আমি কয়েকবার পিআইসির লোকজনকে বলেছি গর্ত ও ফাটল ভরাট করতে। নির্দেশমত কাজ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজ না করে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নাই, গর্ত ও ফাটল ভরাট করতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধ নির্মাণ না করা হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

দেখার হাওরে প্রকল্পের বাঁধে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফাটল

আপডেট টাইম : ০৩:২৫:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মার্চ ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের আওতাধীন দেখার হাওর অংশের ডাইক-৩ এর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩১ নং প্রকল্পের বাঁধে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি শাহিনুর রহমান ও সদস্য সচিব আফজল হোসেন। আফজল হোসেন পূর্ব পাগলা ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেনের ছোট ভাই। অভিযোগ উঠেছে ৩১ নং প্রকল্পের বাঁধটিতে নীতিমালা না মেনে পকেট ভারি করতে দায়সার গোছের কাজ করা হচ্ছে। বাঁধের পাশ থেকে মাটি নিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পর কাজ শেষ না হতেই বাঁধে দেখা দিয়েছে ফাটল। এতে কৃষকরা শংকিত হয়ে পড়ছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩১ প্রকল্পে বাঁধের একেবারে পাশ থেকে মাটি কাটার মেশিন (এস্ক্যাভেটর) দিয়ে বিশাল বিশাল গর্ত করে নিচের মাটি উপরে তোলা হচ্ছে। নাম মাত্র ও দায়সারা গোছের কাজ করার কারণে ও বাঁধের নিচ থেকে মাটি উঠানোর জন্য বাঁধের অনেক অংশে বড়-বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধে কোন কম্প্রেসিং হচ্ছে না। এদিকে নিচ থেকে মাটি উঠাতে উঠাতে অনেক জায়গা পুকুরে পরিণত হয়েছে। আরও দেখা যায়, বাঁধের নিচ ৩৬ ফুটের জায়গায় রাখা হয়েছে ২২-২৬ ফুট ও উপরে রাখা হয়েছে ১১-১২ ফুট। উচ্চতা যেখানে ৬-৭ ফুট হওয়ার কথা সেখানে রাখা হয়েছে ৩-৩.৫ ফুট।

বাঁধের অনেকাংশে বড়-বড় মাটির টিলা রয়েছে, এগুলোকে ভাঙ্গা হয়নি, দুরমুজও করা হয়নি। এদিকে নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও আর কাজ করছেন না তারা। যেন আগাম বন্য না হলে তারা বাঁচে। প্রকল্প বরাদ্দ ২৫ লক্ষ টাকা হলেও স্থানীয়দের দাবি প্রায় ১০ লক্ষ টাকাও ব্যয় হতে পারে। জানা যায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এসএম শহিদুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হারুন অর রশীদ এ বাঁধ পরিদর্শনে গেলে বাঁধের কাজে অনিয়ম দেখতে পান। পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাগণ নিজেরাই দেখতে পান বাঁধের পাশ থেকে মাটি উঠিয়ে পুকুর তৈরি করার ফলে বাঁধে ফাটল দেখা দিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক কৃষক জানান, প্রকল্পের সদস্য সচিব আফজাল হোসেনের বাড়ি বাঁধ এলাকা থেকে প্রায় ৮ কি. মি. দূরে ও বাঁধ এলাকায় তার একটুও জমি নাই। এ ব্যাপারে পিআইসির সভাপতি শাহিনুর রহমান বলেন,‘ আমরা কাবিটা নীতিমালা মেনেই কাজ করছি। বাঁধে কিছু ফাটল দেখা দিয়েছে, আমরা সেটা ভরাট করার জন্য কাজ করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘বাঁধের পাশ থেকে মাটি উঠিয়ে বাঁধ নির্মাণ করছি কারণ আমাদের মেশিন দূর থেকে মাটি আনতে পারে না তাই। তবে গর্তগুলো ভরাট করা হবে।

এ ব্যাপারে পিআইসির সদস্য সচিব আফজাল হোসেন বলেন,‘এই পিআইসির নাম মাত্র আমি সদস্য সচিব, সব কাজ করেন পিআইসির সভাপতি শাহিনুর রহমান। আমি শুধু ব্যাংকের চেকে স্বাক্ষর করি। এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হারুন অর রশীদ বলেন,‘ সরেজমিনে আমি এ বাঁধটি দেখেছি। আমি কয়েকবার পিআইসির লোকজনকে বলেছি গর্ত ও ফাটল ভরাট করতে। নির্দেশমত কাজ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজ না করে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নাই, গর্ত ও ফাটল ভরাট করতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধ নির্মাণ না করা হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।