হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলতি মৌসুমের বোরো ফসল রক্ষার জন্য সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের সময়সীমা গত বুধবার শেষ হলেও দিরাই উপজেলার কোন বাঁধেই ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়নি। সময়মত কাজ শেষ না হওয়ায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড উপজেলা কমিটির সভায় আর এক সপ্তাহ সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ কাজে কোন নীতিমালাই মানছে না প্রকল্প কমিটি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন অনুযায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে না।
প্রকল্প কমিটির সভাপতি নিজের ইচ্ছেমত কাজ করাচ্ছেন। এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি তোলা হচ্ছে। দুরমুজ করা হচ্ছে না কোন বাঁধেই। এদিকে বাধঁ নির্মাণ কাজ সন্তোষজনকভাবে না করার দায়ে চাপতির হাওরের বৈশাখী বাঁধ প্রকল্প কমিটির সভাপতি নুরে আলম চৌধুরীকে আটক করা হয়। গত বুধবার দুপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিদুল ইসলাম বাঁধ এলাকা থেকে তাকে আটক করে নিয়ে আসেন। পরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যস্থ্যতায় তিন দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার শর্তে মুচলেকা আদায়ের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সময়মত কাজ সম্পাদনের জন্য অধিকাংশ প্রকল্প কমিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। সময়মত কাজ সম্পন্ন না হওয়া ও নিয়মনীতি না মেনে বাঁধ নির্মাণের ফলে সাধারণ কৃষকের মাঝে ক্ষোভ, উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, এবছর উপজেলার ৯টি হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় ১শ’ ৩৫টি প্রকল্পের অনুকূলে প্রায় ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ২৮ শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার জন্য ডেড লাইন দেয়া হয়। কিন্তুকোন প্রকল্পেরই ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়নি। তবে ইউপি চেয়ারম্যানরা বলছেন ৭০-৭৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিন চাপতির হাওর ঘুরে দেখা যায়, বৃহৎ এ হাওরে তাড়ল ইউনিয়নের অংশে কালধর সীমের গাছ হতে বৈশাখী বাঁধ হয়ে স্লুইসগেট পর্যন্ত ৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শুধু মাত্র বৈশাখীর ঝুকিপূর্ণ ২শ’ ৪০ ফুট জায়গায় বাঁধ দেয়ার জন্য প্রায় সতের লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হলেও বাঁধের কাজ ৩৫-৪০ ভাগের বেশী হয়নি। এসময় প্রকল্প এলকায় পিআইসি নং ৩০ (ক) এর সভাপতি আব্দুল কাহির মিয়া ছাড়া কাউকেই পাওয়ায় যায়নি। বাঁধগুলোতে কাজ চলছে মন্থর গতিতে।
ভরাম হাওর পাড়ের কৃষক জুয়েল মিয়া বলেন, ‘সঠিক লোকের মাধ্যমে প্রকল্প কমিটি গঠন হলে সময় মত কাজ আদায় করা যেত। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে প্রকল্প কমিটি গঠন করায় বাঁধের কাজ ঠিকমত হচ্ছে না। চাপতির হাওর পাড়ের কৃষক রায়হান মিয়া বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়া ও শিডিউল অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। সরকার বাঁধে দুরমুজ করার জন্য আলাদা বরাদ্দ প্রদান করলেও কোন বাঁধেই দুরমুজ করা হচ্ছে না।
অনেক বাঁধে বালি মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই বাঁধের এসব মাটি থাকবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড উপজেলা কমিটির সভাপতি মঈন উদ্দিন ইকবাল বলেন, ‘বাঁধের কাজে অনিয়ম করলে ছাড় দেয়া হবে না। প্রতিদিনই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে। প্রাথমিক ভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান ও মুচলেকা আদায়ের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হলেও পরে আর কোন সুযোগ দেয়া হবে না।