হাওর বার্তা ডেস্কঃ গত বছরের হাওর বিপর্যয়ের সময় আমরা হাজারো মানুষ মানবঢাল করে কালিকোটা হাওর রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অসময়ে নির্মিত দুর্বল বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যায়। এরপর নিঃস্ব কৃষকরা হাওরপাড়ে বসে কেবল কেঁদেছে। এবার এই হাওরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাওয়ার বাঁধে এখনও কাজ হয়নি। কৃষকরা এই অবস্থা দেখে চিন্তায় পড়েছেন।’ জেলার দিরাই উপজেলার শ্যামারচরের কৃষক নেতা অমর চাঁদ দাসের মন্তব্য এটি।
কৃষক নেতা অমর চাঁদ দাস জানান, দিরাই উপজেলার চরনারচর, আটগাঁও, রাজানগর, ভাটিপাড়া ও রফিনগর এই ৫ ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামের কৃষকদের জমি কালিকোটা হাওরে। গত বছর খালিয়াজুরি বাঁধে ভাঙার সময় দিরাই-শাল্লা ও খালিয়াজুরি উপজেলার হাজার হাজার কৃষক মানবঢাল করে বাঁধ আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত পানির প্রবল স্রোতের কাছে আমরা হার মেনেছি। পরে এই পানির চাপ এসে কালিকোটা হাওরের ভাটি এয়ারা গ্রামের পাশের হাওয়ার বাঁধে চাপ দিলে হাজারো কৃষক এই বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এবার এই বাঁধের কাজ এখনো (২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার পর্যন্ত) শেষ হয়নি। এটি খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। আমরা লিখিতভাবে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করবো।
ভাটি এয়ারা গ্রামের কৃষক আবুল বাশার বললেন,‘নেত্রকোণার ধনু নদীর পানির প্রবাহ ছোট নদী দিয়ে এসে হাওয়ার বাঁধ ভেঙে কালিকোটা হাওর ডুবায়, বৃষ্টির মৌসুম শুরু হাওয়ার বাঁধের পাশের ছোট নদী ও ধনু নদী পানিতে ভরাট হয়ে যাবে। অথচ. এখনো বাঁধের কাজ হয়নি। এই হাওরের ৭-৮ পিআইসির কাজ শেষ হয়নি। স্থানীয় একজন কৃষক জানালেন,‘এখানকার বেশিরভাগ পিআইসি গঠন হয়েছে কৃষক নয়, জেলেদের দিয়ে। এজন্যই এতো বড় একটি হাওর নিয়ে তাঁদের (পিআইসিদের) কোন দুশ্চিন্তা নেই।
একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন,‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেদিন বাঁধে আসেন, সেদিনই বাঁধে কিছু শ্রমিক কাজে লাগানো হয়, না হয় বাঁধে মাটির কাজই হয় না। স্থানীয় একজন কৃষক জানালেন,‘আব্দুস সালাম নামের একজন পিআইসি সভাপতি হয়েছেন, তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য বশির আহমদের ভাই, মূলত এই বাঁধের সকল পিআইসি-ই তাঁর হেফাজতে। তিনি ৩৬ নম্বর পিআইসির সভাপতি হলেও সবকয়টি বাঁধের কাজই তিনি করছেন। একাধিক কাজ তার দায়িত্বে থাকায় বাঁধের কাজ শেষ করতে পারছেন না তিনি। ৩৬ নম্বর পিআইসির সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, ২০ দিন আগে আমাদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
টাকা পেয়েছি এক কিস্তির, এই অবস্থায় যেটুকু কাজ হয়েছে তা কম নয়। বড় বড় ভাঙন ভরাট হয়ে গেছে। বাকী কাজ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে নেব।’ অন্য পিআইসিদের কাজ তার নয় দাবী করে তিনি বলেন, ‘আমার এক্সেভেটর ঘণ্টা হিসাবে ভাড়া নিয়ে পিআইসিরা কাজ করছেন। এজন্য অনেকে মনে করেন, আমি কাজ করাচ্ছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেন,‘দুয়েক দিনের মধ্যেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষ টিম শাল্লায় যাবে। কালিকোটা হাওরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও পিআইসিদের অবহেলা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।