ঢাকা ০৬:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওর রক্ষার বাঁধ নির্মাণের কাজ হয়নি হুমকিতে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:১৩:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • ৩৬১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে চলছে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ। কিন্তু উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী লেদারবন্দ-বিন্নারবন্দ ও মোড়লের হাওরে গিয়ে দেখা যায় হাওর দুইটিতে ফসল রক্ষা বাঁধের কোন কাজ নেই। কৃষক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য জানান, গুরুত্বপূর্ণ লেদারবন্দ কুড়ির বাঁধটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিবছর নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

কিন্তু এ বছর বাঁধটি নির্মাণে কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়নি ইউনিয়ন পরিষদ। পানি উন্নয়ন বোর্ড বা উপজেলা পরিষদও বাঁধটির জন্য কোন প্রকল্প গ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় বাঁধটি নির্মাণে ইউএনও’র কাছে স্থানীয় ইউপি সদস্য গত ৩০ জানুয়ারি লিখিত আবেদন করেছিলেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ বাঁধটি নির্মাণে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ কারণে অরক্ষিত আছে লেদারবন্দ-বিন্নারবন্দ হাওর, কচুনালি, মরাগাঙ, গাঙকান্দা, চরের হাওর, লেঞ্জার হাওর, সাধেরখলা, পুরান খালাসের চর ও মাটিকাটা হাওরের তিন হাজার একর জমির বোরো ধান।

স্থানীয় কৃষকরা জানান,গত বছর একমাত্র ফসল তলিয়ে যাওয়ায় বিপন্ন কৃষকরা আশায় বুক বেঁধে এ বছর জমিতে ধানের চাষ করেছেন। কিন্তু বাঁধটি না হওয়া এ সকল হাওরের জমিতে ধানের চাষ করে শংকিত আছেন দেড় হাজার কৃষক পরিবার। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, লেদারবন্দ কুড়ির বাঁধটি নির্মাণ না করলে উপরোল্লেখিত হাওরগুলো ছাড়াও কুফাউরা, বলদা, ঘোলাঘাট হাওরের ফসল হুমকিতে পড়বে। উপজেলার বৃহৎ হাওর মাটিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ আলমখালি ও জামলাবাজ বাঁধটিও অকার্যকর হয়ে পড়বে।

সংশ্লিষ্ট দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ সুত্রে জানা যায়, গত বছর অক্টোবর মাসে এই বাঁধটি নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসক, তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কাছেও।

কিন্তু তারপরও এ বাঁধটি নির্মাণে কোন প্রকল্প নেওয়া হয়নি। বাঁধটি নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান কে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট ২ নং ওয়ার্ড সদস্য বার বার তাগিদ দেন। ইউপি সদস্য ৩০ জানুয়ারি উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন। এ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য আব্দুল মনাফ বলেন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মহোদয় কে বার বার এ বাঁধটির জন্য তাগিদ দিয়েছি।

পরবর্তীতে উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় কে জানাই। বাঁধটি এভাবে অরক্ষিত থাকলে কৃষকদের চাপে আমাকে এলাকাছাড়া হতে হবে। এই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান(৬০) বলেন, হাওরের ফসল রক্ষার জন্য সরকারিভাবে এত গুরুত্ব জীবনে কোন দিন দেখিনি। এ বছর উপজেলায় হাওরের বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প বেশি নেওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দও বেশি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বছরই প্রথম আমাদের লেদারবন্দ কুড়ির বাঁধটিতে কাজ হচ্ছে না। এর জন্য নেওয়া হয়নি কোন প্রকল্প।

লেদারবন্দ-বিন্নারবন্দ হাওরের ৫০ কিয়ার (১ কিয়ার ৩০ শতক) জমিতে ধানের চাষ করেছেন আব্দুল গণি। তিনি বলেন, এই বাঁধটি নির্মাণের জন্য আমরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে অনেকবার বলেছি। উপজেলা চেয়ারম্যানকেও জানিয়েছি। আর ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেই।
এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জানান, কুড়ির বাঁধটি নির্মাণ ও বিন্নারবন্দ শাফুরঘাট থেকে কুড়ির বাঁধ পর্যন্ত এক কিলোমিটার বেড়ী বাঁধে ২ ফুট উঁচু করে মাটি দিতে হবে। কৃষকরা জানান, কুড়ির বাঁধ নির্মাণে ৪ লাখ এবং বেড়ী বাঁধে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলে হাওরগুলোর ফসল রক্ষা পাবে।

একই ভাবে ইউনিয়নটির সীমান্তঘেঁষা মোড়লের বিল হাওরটির হাফানিয়া থেকে বিন্নারবন্দ সাঁকোরঘাট পর্যন্ত ১ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধে ৩ ফুট উচ্চতায় মাটি ফেলা হলে রক্ষা পাবে হাওরটির ফসল। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কৃষকরা জানান, এ বছর মোড়লের হাওরের ৮০০ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। তারা জানান, এই বেড়ী বাঁধটি নির্মাণে ৪ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। এবার এ কাজ সম্পন্ন করলে আগামি ১০ বছর কোন সমস্যা হবে না। হাওরটির ২০ কিয়ার জমিতে এ বছর ধানের চাষ করেছেন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, লেদারবন্দ-বিন্নারবন্দ ও মোড়লের হাওরের জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা থাকায় ধানের ফলন বেশি।

যদি লেদারবন্দ কুড়ি ও হাওর দুইটি বেড়ী বাঁধে মাটি দেওয়া হয় তাহলে পাহাড়িঢল থেকে রক্ষা পাবে হাওরের ফসল।দক্ষিণ বড়দল ইউপি সচিব মনিরুল ইসলাম বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ বাঁধটি নির্মাণের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করেও  প্রকল্পে তালিকাভুক্ত করা যায়নি। ইউপি চেয়ারম্যান আজহর আলী বলেন, আজ (গতকাল সোমবার) গুরুত্বপূর্ণ এ বাঁধটি নির্মাণের সিন্ধান্ত হয়েছে। এ সপ্তাহেই বাঁধটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তিনি জানান, বৃষ্টি শুরু হয়েছে নদীতে পানি এলে এ বাঁধটির কারণে সরাসরি হুমকিতে পড়বে ৩ হাজার একর জমির ধান। এরপর ডুববে কয়েক হাজার হেক্টরের হাওরের ধান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওর রক্ষার বাঁধ নির্মাণের কাজ হয়নি হুমকিতে

আপডেট টাইম : ০১:১৩:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে চলছে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ। কিন্তু উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী লেদারবন্দ-বিন্নারবন্দ ও মোড়লের হাওরে গিয়ে দেখা যায় হাওর দুইটিতে ফসল রক্ষা বাঁধের কোন কাজ নেই। কৃষক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য জানান, গুরুত্বপূর্ণ লেদারবন্দ কুড়ির বাঁধটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিবছর নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

কিন্তু এ বছর বাঁধটি নির্মাণে কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়নি ইউনিয়ন পরিষদ। পানি উন্নয়ন বোর্ড বা উপজেলা পরিষদও বাঁধটির জন্য কোন প্রকল্প গ্রহণ করেনি। এ অবস্থায় বাঁধটি নির্মাণে ইউএনও’র কাছে স্থানীয় ইউপি সদস্য গত ৩০ জানুয়ারি লিখিত আবেদন করেছিলেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ বাঁধটি নির্মাণে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ কারণে অরক্ষিত আছে লেদারবন্দ-বিন্নারবন্দ হাওর, কচুনালি, মরাগাঙ, গাঙকান্দা, চরের হাওর, লেঞ্জার হাওর, সাধেরখলা, পুরান খালাসের চর ও মাটিকাটা হাওরের তিন হাজার একর জমির বোরো ধান।

স্থানীয় কৃষকরা জানান,গত বছর একমাত্র ফসল তলিয়ে যাওয়ায় বিপন্ন কৃষকরা আশায় বুক বেঁধে এ বছর জমিতে ধানের চাষ করেছেন। কিন্তু বাঁধটি না হওয়া এ সকল হাওরের জমিতে ধানের চাষ করে শংকিত আছেন দেড় হাজার কৃষক পরিবার। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, লেদারবন্দ কুড়ির বাঁধটি নির্মাণ না করলে উপরোল্লেখিত হাওরগুলো ছাড়াও কুফাউরা, বলদা, ঘোলাঘাট হাওরের ফসল হুমকিতে পড়বে। উপজেলার বৃহৎ হাওর মাটিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ আলমখালি ও জামলাবাজ বাঁধটিও অকার্যকর হয়ে পড়বে।

সংশ্লিষ্ট দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ সুত্রে জানা যায়, গত বছর অক্টোবর মাসে এই বাঁধটি নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসক, তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কাছেও।

কিন্তু তারপরও এ বাঁধটি নির্মাণে কোন প্রকল্প নেওয়া হয়নি। বাঁধটি নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান কে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট ২ নং ওয়ার্ড সদস্য বার বার তাগিদ দেন। ইউপি সদস্য ৩০ জানুয়ারি উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন। এ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য আব্দুল মনাফ বলেন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মহোদয় কে বার বার এ বাঁধটির জন্য তাগিদ দিয়েছি।

পরবর্তীতে উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় কে জানাই। বাঁধটি এভাবে অরক্ষিত থাকলে কৃষকদের চাপে আমাকে এলাকাছাড়া হতে হবে। এই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান(৬০) বলেন, হাওরের ফসল রক্ষার জন্য সরকারিভাবে এত গুরুত্ব জীবনে কোন দিন দেখিনি। এ বছর উপজেলায় হাওরের বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প বেশি নেওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দও বেশি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বছরই প্রথম আমাদের লেদারবন্দ কুড়ির বাঁধটিতে কাজ হচ্ছে না। এর জন্য নেওয়া হয়নি কোন প্রকল্প।

লেদারবন্দ-বিন্নারবন্দ হাওরের ৫০ কিয়ার (১ কিয়ার ৩০ শতক) জমিতে ধানের চাষ করেছেন আব্দুল গণি। তিনি বলেন, এই বাঁধটি নির্মাণের জন্য আমরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে অনেকবার বলেছি। উপজেলা চেয়ারম্যানকেও জানিয়েছি। আর ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেই।
এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জানান, কুড়ির বাঁধটি নির্মাণ ও বিন্নারবন্দ শাফুরঘাট থেকে কুড়ির বাঁধ পর্যন্ত এক কিলোমিটার বেড়ী বাঁধে ২ ফুট উঁচু করে মাটি দিতে হবে। কৃষকরা জানান, কুড়ির বাঁধ নির্মাণে ৪ লাখ এবং বেড়ী বাঁধে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলে হাওরগুলোর ফসল রক্ষা পাবে।

একই ভাবে ইউনিয়নটির সীমান্তঘেঁষা মোড়লের বিল হাওরটির হাফানিয়া থেকে বিন্নারবন্দ সাঁকোরঘাট পর্যন্ত ১ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধে ৩ ফুট উচ্চতায় মাটি ফেলা হলে রক্ষা পাবে হাওরটির ফসল। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কৃষকরা জানান, এ বছর মোড়লের হাওরের ৮০০ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। তারা জানান, এই বেড়ী বাঁধটি নির্মাণে ৪ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। এবার এ কাজ সম্পন্ন করলে আগামি ১০ বছর কোন সমস্যা হবে না। হাওরটির ২০ কিয়ার জমিতে এ বছর ধানের চাষ করেছেন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, লেদারবন্দ-বিন্নারবন্দ ও মোড়লের হাওরের জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা থাকায় ধানের ফলন বেশি।

যদি লেদারবন্দ কুড়ি ও হাওর দুইটি বেড়ী বাঁধে মাটি দেওয়া হয় তাহলে পাহাড়িঢল থেকে রক্ষা পাবে হাওরের ফসল।দক্ষিণ বড়দল ইউপি সচিব মনিরুল ইসলাম বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ বাঁধটি নির্মাণের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করেও  প্রকল্পে তালিকাভুক্ত করা যায়নি। ইউপি চেয়ারম্যান আজহর আলী বলেন, আজ (গতকাল সোমবার) গুরুত্বপূর্ণ এ বাঁধটি নির্মাণের সিন্ধান্ত হয়েছে। এ সপ্তাহেই বাঁধটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তিনি জানান, বৃষ্টি শুরু হয়েছে নদীতে পানি এলে এ বাঁধটির কারণে সরাসরি হুমকিতে পড়বে ৩ হাজার একর জমির ধান। এরপর ডুববে কয়েক হাজার হেক্টরের হাওরের ধান।