ঢাকা ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বেড়েছে ইতোমধ্যে এসেছে ৮ হাজারের বেশি গরু-মহিষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৩৪৭ বার

কোরবানির ঈদ যত কাছে আসছে, ততই বাড়ছে মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু আমদানি। গতকাল শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত একদিনে মিয়ানমার থেকে ৫৫০ গরু ও ১৭টি মহিষের চালান নাফ নদী হয়ে টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপ করিডরে এসেছে। এর আগের দিনও প্রায় ৫০০ গরুর চালান আসে এখানে। প্রতিদিনই বাড়ছে পশুর চালান। আর আমদানি বাড়ায় এলাকার মানুষের মাঝেও নেমে এসেছে স্বস্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপের জেটিঘাট এখন গরু-মহিষে ভরা। নাফ নদীর তীরেও রয়েছে বিপুলসংখ্যক মহিষ ও গরু। শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধ ও সড়ক জোয়ারে বিলীন হয়ে যাওয়ায় জেটিঘাট থেকে গরু-মহিষ ট্রাকে তোলার জন্য টেকনাফ আনা হচ্ছে।

শাহপরীর দ্বীপের ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ইতোমধ্যে ৮ হাজারের বেশি গবাদি পশু মিয়ানমার থেকে আনা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ শ করে পশু মিয়ানমার থেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে শাহপরীর দ্বীপ করিডরে ঢুকছে। ঈদের আগে আরো ব্যাপক হারে গবাদি পশু আসার সম্ভাবনার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। কাঠের তৈরি কার্গো বোটে মিয়ানমার থেকে আনা হয় পশুর চালান।

আমদানি স্বাভাবিক থাকায় এবারের কোরবানি ঈদে গবাদি পশুর সংকট হবে না বলে জনিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, বর্তমানে শাহপরীর দ্বীপ করিডর এবং টেকনাফ, সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপের পশু ব্যবসায়ীদের কাছে বিপুলসংখ্যক গবাদি পশু মজুত রয়েছে। ঈদের আগে আরো অন্তত ২০ হাজার পশু মিয়ানমার থেকে আমদানির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কয়েকজন ব্যবসায়ী এখন দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও আশানুরূপভাবে বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান। অথচ গত বছর এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে পশু বিক্রি হয়েছিল। এদিকে ভারত থেকে পশু আমদানি বন্ধ থাকায় টেকনাফের ব্যবসায়ীরা অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মাস্টার জাহেদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ইদানীং ইনজেকশন প্রয়োগ এবং নানা ধরনের ওষুধের মাধ্যমে কিছু গরু মোটা তাজাকরণ হচ্ছে। এই কারণে মিয়ানমারের গবাদি পশুর চাহিদাও বাড়ছে। ইউরিয়া সার ব্যবহার ও ক্ষেত-খামারে বিষ প্রয়োগ তেমন না হওয়ায় ওপারের গবাদি পশুর চাহিদা এপারে বরাবরই বেশি।’

টেকনাফের পশু ব্যবসায়ী মেম্বার আবু ছৈয়দ বলেন, ‘বর্তমানে শাহপরীর দ্বীপ ক্যাটল করিডরে শত শত পশু বিক্রির অপেক্ষায় মজুত করা হয়েছে। এছাড়া টেকনাফ, সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপ ব্যবসায়ীদের কাছেও বিপুল সংখ্যক গরু-মহিষ আছে। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখনো ব্যবসায়ীরা টেকনাফে আসেননি। অথচ গত বছর এই সময়ে প্রচুর পশু বিক্রি হয়েছিল।’

তিনি জানান, এখানে কোরবানির পশু আমদানি, বিক্রি ও পরিবহনে কোনো সমস্যা নেই। নির্বিঘ্নে বেপারিরা এখান থেকে পশু কিনে অন্যত্র নিয়ে যেতে পারবেন।

টেকনাফ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক কোরবানির পশুসংকট নেই দাবি করে বলেন, ‘শুধু শাহপরীর দ্বীপ ক্যাটল করিডর নয় টেকনাফ, সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপ ব্যবসায়ীদের কাছে কয়েক হাজার পশু বিক্রির অপেক্ষায় মজুত রয়েছে।’

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আবদুস সালাম মেম্বার এবং শাহপরীর দ্বীপ করিডর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সলিমুল্লাহ গতকাল শনিবার বলেন, ‘নানা কারণে এতোদিন মিয়ানমার থেকে করিডরে পশু আমদানি স্থবির হয়ে পড়েছিল। আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আবার শুরু হয়েছে পশু আমদানি। এখনই যেভাবে পশুর চালান আসছে আশা করছি সামনে এর হার আরো বাড়বে।’

টেকনাফ শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির জানান, গেল আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে ৪ হাজার ১৯৪টি গবাদি পশু করিডরের মাধ্যমে আনা হয়। এর বাবদ রাজস্ব পাওয়া গেছে ২০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।’

গত বছর মিয়ানমার থেকে প্রায় ২৫ হাজার গবাদি পশু আসার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘আসন্ন কোরবানির ঈদের আগে আরো ১০ থেকে ১৫ হাজার পশু আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বেড়েছে ইতোমধ্যে এসেছে ৮ হাজারের বেশি গরু-মহিষ

আপডেট টাইম : ১০:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কোরবানির ঈদ যত কাছে আসছে, ততই বাড়ছে মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু আমদানি। গতকাল শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত একদিনে মিয়ানমার থেকে ৫৫০ গরু ও ১৭টি মহিষের চালান নাফ নদী হয়ে টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপ করিডরে এসেছে। এর আগের দিনও প্রায় ৫০০ গরুর চালান আসে এখানে। প্রতিদিনই বাড়ছে পশুর চালান। আর আমদানি বাড়ায় এলাকার মানুষের মাঝেও নেমে এসেছে স্বস্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপের জেটিঘাট এখন গরু-মহিষে ভরা। নাফ নদীর তীরেও রয়েছে বিপুলসংখ্যক মহিষ ও গরু। শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধ ও সড়ক জোয়ারে বিলীন হয়ে যাওয়ায় জেটিঘাট থেকে গরু-মহিষ ট্রাকে তোলার জন্য টেকনাফ আনা হচ্ছে।

শাহপরীর দ্বীপের ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ইতোমধ্যে ৮ হাজারের বেশি গবাদি পশু মিয়ানমার থেকে আনা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ শ করে পশু মিয়ানমার থেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে শাহপরীর দ্বীপ করিডরে ঢুকছে। ঈদের আগে আরো ব্যাপক হারে গবাদি পশু আসার সম্ভাবনার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। কাঠের তৈরি কার্গো বোটে মিয়ানমার থেকে আনা হয় পশুর চালান।

আমদানি স্বাভাবিক থাকায় এবারের কোরবানি ঈদে গবাদি পশুর সংকট হবে না বলে জনিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, বর্তমানে শাহপরীর দ্বীপ করিডর এবং টেকনাফ, সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপের পশু ব্যবসায়ীদের কাছে বিপুলসংখ্যক গবাদি পশু মজুত রয়েছে। ঈদের আগে আরো অন্তত ২০ হাজার পশু মিয়ানমার থেকে আমদানির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কয়েকজন ব্যবসায়ী এখন দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও আশানুরূপভাবে বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান। অথচ গত বছর এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে পশু বিক্রি হয়েছিল। এদিকে ভারত থেকে পশু আমদানি বন্ধ থাকায় টেকনাফের ব্যবসায়ীরা অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মাস্টার জাহেদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ইদানীং ইনজেকশন প্রয়োগ এবং নানা ধরনের ওষুধের মাধ্যমে কিছু গরু মোটা তাজাকরণ হচ্ছে। এই কারণে মিয়ানমারের গবাদি পশুর চাহিদাও বাড়ছে। ইউরিয়া সার ব্যবহার ও ক্ষেত-খামারে বিষ প্রয়োগ তেমন না হওয়ায় ওপারের গবাদি পশুর চাহিদা এপারে বরাবরই বেশি।’

টেকনাফের পশু ব্যবসায়ী মেম্বার আবু ছৈয়দ বলেন, ‘বর্তমানে শাহপরীর দ্বীপ ক্যাটল করিডরে শত শত পশু বিক্রির অপেক্ষায় মজুত করা হয়েছে। এছাড়া টেকনাফ, সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপ ব্যবসায়ীদের কাছেও বিপুল সংখ্যক গরু-মহিষ আছে। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখনো ব্যবসায়ীরা টেকনাফে আসেননি। অথচ গত বছর এই সময়ে প্রচুর পশু বিক্রি হয়েছিল।’

তিনি জানান, এখানে কোরবানির পশু আমদানি, বিক্রি ও পরিবহনে কোনো সমস্যা নেই। নির্বিঘ্নে বেপারিরা এখান থেকে পশু কিনে অন্যত্র নিয়ে যেতে পারবেন।

টেকনাফ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক কোরবানির পশুসংকট নেই দাবি করে বলেন, ‘শুধু শাহপরীর দ্বীপ ক্যাটল করিডর নয় টেকনাফ, সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপ ব্যবসায়ীদের কাছে কয়েক হাজার পশু বিক্রির অপেক্ষায় মজুত রয়েছে।’

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আবদুস সালাম মেম্বার এবং শাহপরীর দ্বীপ করিডর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সলিমুল্লাহ গতকাল শনিবার বলেন, ‘নানা কারণে এতোদিন মিয়ানমার থেকে করিডরে পশু আমদানি স্থবির হয়ে পড়েছিল। আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আবার শুরু হয়েছে পশু আমদানি। এখনই যেভাবে পশুর চালান আসছে আশা করছি সামনে এর হার আরো বাড়বে।’

টেকনাফ শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির জানান, গেল আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে ৪ হাজার ১৯৪টি গবাদি পশু করিডরের মাধ্যমে আনা হয়। এর বাবদ রাজস্ব পাওয়া গেছে ২০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।’

গত বছর মিয়ানমার থেকে প্রায় ২৫ হাজার গবাদি পশু আসার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘আসন্ন কোরবানির ঈদের আগে আরো ১০ থেকে ১৫ হাজার পশু আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।’