হাওর বার্তা ডেস্কঃ গেল বছর বন্যায় হাওরে ব্যাপক ক্ষতির পর সরকার ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণে বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিলেও কাজ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ আসার পর হরিলুটের পাঁয়তারা চলছে সর্বত্র। ফলে আসছে বোরো মৌসুমেও ফসলহানির শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। অপ্রতিরোধ্য জনপ্রতিনিধি কর্তৃক গঠিত পিআইসির কাজে অসন্তুষ্ট স্থানীয় প্রশাসন। উল্লেখ্য, গত বছর নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীতে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় বোরো ফসল। এতে প্রায় ৫০ হাজার কৃষক নিস্ব হয়ে পড়েন।
জানা যায়, এ বছর বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও উপজেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে খালিয়াজুরীর ৪১টি পয়েন্টে পিআইসি কমিটির মাধ্যমে প্রায় ১১ কোটি টাকার কাজ শুরু হয়েছে। পুরোটাই কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের আওতায়। কিন্তু পিআইসি কমিটির লোকজন কর্মসৃজনে দেরি হওয়ার দোহাই দিয়ে ভেকু দিয়ে মাটি তুলছে। বাঁধ সংক্রান্ত নিয়মনীতিও মানছে না তারা। নিয়মানুযায়ী বাঁধের ১৫০ ফুট দূর থেকে মাটি তোলার কথা থাকলেও মেশিনে ২০-৩০ ফুটের মধ্যেই মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি আবার বালুমিশ্রিত হওয়ায় বাঁধ ধসে পড়ার ভয় রয়ে গেছে।
অভিযোগ আছে, এ সব অনিয়ম স্থানীয় প্রশাসনের নজরে এলেও প্রভাবশালীদের কাছে অনেকটাই অসহায় তারা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের অনুগতদের দিয়ে পিআইসি কমিটি গঠন করায় এ দুর্নীতি হচ্ছে বলে দাবি কৃষকদের। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কাজ সঠিক নিয়মেই হচ্ছে। কিছু লোক সব সময়ই অভিযোগ তুলে। তাদের কথা শোনা যাবে না।
এলাকাবাসী নিবারণ বর্মণ, মুক্তিযোদ্ধা প্রদীপ সরকার, কৃষক শম্ভু বর্মণ, ফজলুর রহমান জানান, বেশি বরাদ্দ হওয়ায় বেশি হরিলুট হচ্ছে। শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটার কথা থাকলেও বালুমাটি দিয়ে দায়সারা গোছে বাঁধের পাশ থেকে মাটি কাটছে মেশিনে। যে কারণে বাঁধের সন্নিকটে গর্ত থেকে যাচ্ছে। পানি আসতেই প্রথমে গর্তের স্থানগুলো ভেঙে যাবে।
খালিয়াজুরী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শাসছুজ্জামান তালুকদার সোয়েব বলেন। ‘শুভঙ্করের ফাঁকি হচ্ছে বাঁধ নির্মাণে। কেউ নীতিমালা মানছেন না। এবার বাঁধের কারণে ফসল গেলে প্রয়োজনে আমি মামলা করবো। ছাড় দেবো না কোনো পিআইসিকে’। খালিয়াজুরীর ইউএনও আব্দুলাহ আল মামুন বাবু বলেন, ‘তাদের হুঁশিয়ার করা হচ্ছে বারবার। যা কাজ হয়ে গেছে তাতো আর ফেরানো যাবে না। গর্তগুলো ভরাট আর বালুর উপর শক্ত মাটি দিয়ে বাঁধাই করতে বলেছি। কোথাও মানা হচ্ছে কোথাও হচ্ছে না।