ঢাকা ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৈতিক দিক থেকে শিক্ষার ওপর ভ্যাট সমর্থনযোগ্য নয় । অধ্যক্ষ আসাদুল হক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:৫৭:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ২৪৬ বার

অধ্যক্ষ আসাদুল হক বলেছেন, নৈতিক দিক থেকে শিক্ষার ওপর ভ্যাট সমর্থন করা যায় না। তবে সরকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভ্যাট নেওয়ার যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা ভালো সিদ্ধান্ত। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এখন দরকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটি সমঝোতায় আসা।
গতকাল শিক্ষাঙ্গনে চলমান সংকট প্রসঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ বলেন, ছাত্ররা একটি শক্ত পয়েন্ট থেকে আন্দোলন শুরু করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের যে ব্যাখ্যা দেয় তা অনেকটা যৌক্তিক বললে ভুল হবে না। কারণ আমাদের দেশে বর্তমানে থার্ড জেনারেশনের যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে তাদের ভ্যাট প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে যে পরিমাণ খরচ করে তাতে তাদের সামর্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তাদের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা যে সুযোগ-সুবিধা পান, তা উল্লেখ করার মতো। তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটি একটু বোঝা হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা একেবারেই নতুন, যাদের ছাত্রসংখ্যা পর্যাপ্ত নয়, তাদের জন্য এ ভ্যাট দেওয়া একটু কঠিন হতে পারে। যদিও এখন অনেকে নিজস্ব ক্যাম্পাস করছে, কেউ কেউ জায়গা কিনছে বা অনেক খরচপাতি করছে। তিনি বলেন, তার পরও অপেক্ষাকৃত কম সমর্থদের কথা বিবেচনা করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি বিশেষ সিস্টেমে বা ভ্যাটের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনা যেতে পারে। সামর্থ্য থাকলেও শিক্ষার ওপর ভ্যাট কতটা যৌক্তিক- এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক আজাদ বলেন, নৈতিকভাবে এটি সমর্থন করা যায় না। অন্যদিকে ইয়েস অর নো- এমনটিও বলা যায় না। এর জন্য ব্যাখ্যা প্রয়োজন। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমাদের সার্বিক অবস্থাই বিবেচনা করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভ্যাট নেওয়ার কথা বললেও আন্দোলনকারী ছাত্ররা বলছেন, কোনো না কোনোভাবে তাদের ওপরই এ ভ্যাট বর্তাবে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন আশঙ্কা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অন্যসব ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটে। এর সমাধান প্রসঙ্গে অধ্যাপক আজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে শিক্ষার্থীদের ওপর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দিতে না পারে সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট, ২০১০’-এর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ অ্যাক্টে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে শুরু করে ভ্যাট, মনিটরিং ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় উল্লেখ থাকলে আজকে এ সংকটে পড়তে হতো না। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো বিবেচনা করে কমপক্ষে ২০-৩০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। কেবল আমাদের দেশেই ভ্যাট দেওয়ার প্রতি এক ধরনের অনাগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। আর সে কারণেই ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল। তবে যেহেতু ‘শিক্ষা’ বলে কথা, সুতরাং বিষয়টি ভাবতে হবে। দরকার হলে অন্য কোনো খাতে ভ্যাট বাড়িয়ে শিক্ষা খাতে এ লোড আরও কমিয়ে আনা যেতে পারে।স্বতন্ত্র বেতন-স্কেলের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে অধ্যাপক এ কে আজাদ বলেন, শিক্ষক হিসেবে তাদের আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করি। কারণ আমার মনে হয়, এখানে শিক্ষকদের সঙ্গে এক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ হয়ে গেছে। এটি শিক্ষকদের টাকার অঙ্কে যতখানি না, তার চেয়ে তাদের মানসম্মান ও মর্যাদা প্রশ্নে বৈষম্য অনেক বেশি। হয়তো এমন মানসিকতা থেকেই শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘিœত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা তথা পড়াশোনায় যাতে ক্ষতি না হয় সে দিকটি বিবেচনা করে শিক্ষকদের আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা উচিত। সংকট নিরসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি শিক্ষকদের অনেক বেশি সম্মানের চোখে দেখেন। আর তাই তাদের কেউ দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করলে সেটিও তিনি বুঝতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি, খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি-দাওয়াগুলো বিবেচনা করবেন। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বা অন্য যে কোনো উপায়ে তিনি এর একটি সমাধান করবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

নৈতিক দিক থেকে শিক্ষার ওপর ভ্যাট সমর্থনযোগ্য নয় । অধ্যক্ষ আসাদুল হক

আপডেট টাইম : ০১:৫৭:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অধ্যক্ষ আসাদুল হক বলেছেন, নৈতিক দিক থেকে শিক্ষার ওপর ভ্যাট সমর্থন করা যায় না। তবে সরকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভ্যাট নেওয়ার যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা ভালো সিদ্ধান্ত। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এখন দরকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটি সমঝোতায় আসা।
গতকাল শিক্ষাঙ্গনে চলমান সংকট প্রসঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ বলেন, ছাত্ররা একটি শক্ত পয়েন্ট থেকে আন্দোলন শুরু করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের যে ব্যাখ্যা দেয় তা অনেকটা যৌক্তিক বললে ভুল হবে না। কারণ আমাদের দেশে বর্তমানে থার্ড জেনারেশনের যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে তাদের ভ্যাট প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে যে পরিমাণ খরচ করে তাতে তাদের সামর্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তাদের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা যে সুযোগ-সুবিধা পান, তা উল্লেখ করার মতো। তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটি একটু বোঝা হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা একেবারেই নতুন, যাদের ছাত্রসংখ্যা পর্যাপ্ত নয়, তাদের জন্য এ ভ্যাট দেওয়া একটু কঠিন হতে পারে। যদিও এখন অনেকে নিজস্ব ক্যাম্পাস করছে, কেউ কেউ জায়গা কিনছে বা অনেক খরচপাতি করছে। তিনি বলেন, তার পরও অপেক্ষাকৃত কম সমর্থদের কথা বিবেচনা করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি বিশেষ সিস্টেমে বা ভ্যাটের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনা যেতে পারে। সামর্থ্য থাকলেও শিক্ষার ওপর ভ্যাট কতটা যৌক্তিক- এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক আজাদ বলেন, নৈতিকভাবে এটি সমর্থন করা যায় না। অন্যদিকে ইয়েস অর নো- এমনটিও বলা যায় না। এর জন্য ব্যাখ্যা প্রয়োজন। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমাদের সার্বিক অবস্থাই বিবেচনা করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভ্যাট নেওয়ার কথা বললেও আন্দোলনকারী ছাত্ররা বলছেন, কোনো না কোনোভাবে তাদের ওপরই এ ভ্যাট বর্তাবে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন আশঙ্কা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অন্যসব ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটে। এর সমাধান প্রসঙ্গে অধ্যাপক আজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে শিক্ষার্থীদের ওপর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দিতে না পারে সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট, ২০১০’-এর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ অ্যাক্টে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে শুরু করে ভ্যাট, মনিটরিং ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় উল্লেখ থাকলে আজকে এ সংকটে পড়তে হতো না। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো বিবেচনা করে কমপক্ষে ২০-৩০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। কেবল আমাদের দেশেই ভ্যাট দেওয়ার প্রতি এক ধরনের অনাগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। আর সে কারণেই ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল। তবে যেহেতু ‘শিক্ষা’ বলে কথা, সুতরাং বিষয়টি ভাবতে হবে। দরকার হলে অন্য কোনো খাতে ভ্যাট বাড়িয়ে শিক্ষা খাতে এ লোড আরও কমিয়ে আনা যেতে পারে।স্বতন্ত্র বেতন-স্কেলের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে অধ্যাপক এ কে আজাদ বলেন, শিক্ষক হিসেবে তাদের আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করি। কারণ আমার মনে হয়, এখানে শিক্ষকদের সঙ্গে এক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ হয়ে গেছে। এটি শিক্ষকদের টাকার অঙ্কে যতখানি না, তার চেয়ে তাদের মানসম্মান ও মর্যাদা প্রশ্নে বৈষম্য অনেক বেশি। হয়তো এমন মানসিকতা থেকেই শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘিœত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা তথা পড়াশোনায় যাতে ক্ষতি না হয় সে দিকটি বিবেচনা করে শিক্ষকদের আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা উচিত। সংকট নিরসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি শিক্ষকদের অনেক বেশি সম্মানের চোখে দেখেন। আর তাই তাদের কেউ দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করলে সেটিও তিনি বুঝতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি, খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি-দাওয়াগুলো বিবেচনা করবেন। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বা অন্য যে কোনো উপায়ে তিনি এর একটি সমাধান করবেন।