জাকির হোসাইনঃ হাতী-ঘোড়া, গরু গাড়ি, ঢাক-ঢোল ও নানা রকম বাদ্যযন্ত্র নিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সের নানা শ্রেণী পেশার হাজারো নারী-পুরুষ মেতে ওঠেছিল আনন্দ উৎসবে সকল জনতার উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রায়। কিশোরগঞ্জের কৃতী সন্তান, রাজনীতির বরপুত্র, ভাটি বাংলার রাখাল রাজা, ভাটির পিতা, ভাটি শাদুর্ল খ্যাত আবদুল হামিদ ২য় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় কিশোরগঞ্জবাসীর এ আয়োজন। গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত রাজসিক নাগরিক আনন্দ মিছিলে ভাসে ঐতিহাসিক কিশোরগঞ্জ শহর।
ঘোষণার পর থেকে নানাভাবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হওয়ার বিষয়টি উদযাপন করছে কিশোরগঞ্জবাসী। গত কিছুদিন ধরে তাঁর নিজ এলাকা ইটনা-মিঠামন-অষ্টগ্রামসহ পুরো জেলায় রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আবেগ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আসছেন।
আজ সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন শহর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেচে-গেয়ে বাদ্য বাজিয়ে শহরের নরসুন্দা নদী তীরের সরকারি গুরুদয়াল কলেজ মাঠে আনন্দ মিছিল আসতে শুরু করে। দুপুর ১২টার মধ্যে মিছিলে মিছিলে ছেয়ে যায় ওই কলেজ মাঠ।
এ আনন্দ উৎসবের কারণে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দৃশ্যত কিশোরগঞ্জের সকল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি সরকারি অফিস-আদালতের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে পড়ে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সকল প্রকার যানবাহন চলাচল।
সেই উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসাকে এক সঙ্গে প্রকাশ করতে আজ শনিবার লাখো জনতা সমবেত হয়েছিল জেলা শহরে। নেচেগেয়ে, মিছিল করে পুরো দিনটি পার করে তারা। লাখো জনতার আবদুল হামিদ, আবদুল হামিদ স্লোগানে মুখরিত হয় গোটা শহর। দুপুরে মূল মিছিল শুরু হলেও সকাল থেকেই খ-খ- মিছিলে হাজির হয় তাঁর গুনমুগ্ধ ভক্তরা।
এসময় ‘আবদুল হামিদের জন্য কিশোরগঞ্জ তথা সকল জেলাবাসি ধন্য আমরা ধন্য’, ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ লও লও লও সালাম’ এই সকল স্লোগানে মুখরিত ছিল শোভাযাত্রাটিতে।
শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য মিছিলটি বের হয়ে পুরো শহর ঘুরে ঘুরে আবার সেখানে গিয়ে শেষ হয়। কিশোরগঞ্জের নাগরিক সমাজের ব্যানারে এ আনন্দ মিছিলের আয়োজন করা হয়।
মিছিলের নেতৃত্ব দেন কিশোরগঞ্জ-৪(ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বড় ছেলে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এমপি, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য দিলারা বেগম আসমা।
আনন্দ মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, রাষ্ট্রপতির ছোট ভাই পিন্সিপাল আবদুল হক নূরু, রাষ্ট্রপতির পুত্র রাসেল আহামেদ তুহিন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এম এ আফজল, জেলা অওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শাহ আজিজুল হক, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি এ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বকুল, কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের আহবায়ক এ বি এম লুৎফর রাশিদ রানা এ্যাডভোকেট, সদস্য-সচিব মনোয়ার হোসাইন রনিসহ বিভিন্ন স্থরের নেতৃত্বে সমাজের গণ্যমান্য লোকজন ও লাখো মানুষ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
আনন্দ মিছিলের প্রধান আকর্ষণ ছিল রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ছবি দিয়ে সাজানো দুটি হাতি, ও বেশ কয়েকটি ঘোড়ারগাড়ি। আনন্দ মিছিলে শুধু আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা সংগঠনের ব্যানার নিয়ে মিছিলে যোগ দেন। তাছাড়া স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, বিপুল সংখ্যক নারী ও সাধারণ মানুষও নেচেগেয়ে, ঢাকঢোল বাজিয়ে মিছিল অংশ নেয়। তখন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে উদ্দেশ্য করে সবার মুখেই ছিল নানা ধরণের স্লোগান দেয়।
রাষ্ট্রপতির ছোট ভাই পিন্সিপাল আবদুল হক নূরু বলেন, বিষয়টি উদযাপন করার মতো। কারণ এটি বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এ বিজয় কেবল আবদুল হামিদের নয়, কিশোরগঞ্জবাসীরও। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হাত ধরে এলাকার বহু উন্নয়ন হয়েছে। এবার তাঁর উদ্যোগে এলাকার আরও উন্নয়ন হবে। মূলত এসব কারণেই কিশোরগঞ্জবাসী এতটা উচ্ছ্বসিত।
জেলা অওয়ামী সভাপতি এ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে জেলার প্রাণের স্পন্দন বলেই আমরা মনে করি। মহান স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির ক্রান্তিলগ্নে এ জেলার কৃতীসন্তানেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও সেই ভূমিকাটিই নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন। তাঁকে কিশোরগঞ্জবাসী কতটা ভালোবাসে লাখো জনতার মিছিল- সে প্রমাণই দেয়।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক তার বাবাকে দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করায় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ঐতিহাসিক ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।