হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর কুড়িখাই গ্রামে শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক কুড়িখাই মেলা। এ মেলায় লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করছে। মেলাটি প্রায় চারশ বছরের পুরনো। প্রতিবছরই এ মেলা বসে। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি নামক বই থেকে এ মেলা সম্পর্কে বর্ণনা করা হল।
প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ সোমবার থেকে এই মেলা শুরু হয়, চলে দশ দিন। হযরত শাহ শামছুদ্দীন আউলিয়ার বার্ষিক উরস উপলক্ষ্যে এ মেলার আয়োজন করা হয়। দেশ-দেশান্তর থেকে হাজার হাজার মানুষ উরস ও মেলায় অংশগ্রহণ করে। এ সময় কুড়িখাই গ্রামসহ আশপাশের প্রায় কুড়ি মাইল এলাকার গ্রাম-গ্রামান্তর হয়ে ওঠ উৎসবমুখর। এ সময় কর্মরত লোকজন ফিরে আসে গ্রামের বাড়ি। দূরে বিয়ে হওয়া গ্রামের মেয়েরা বাবার বাড়িতে নাইওরে আসে। শাহ শামছুদ্দীন আউলিয়ার মাজার শরীফকে কেন্দ্র করে প্রায় ছয় একর এলাকা জুড়ে বসে বহু দোকান। মৃৎশিল্প থেকে শুরু করে পোশাকআশাক, আসবাবপত্র, খেলনা, তৈজসপত্র, বিলাসসামগ্রী, হেন জিনিস নেই-যা কুড়িখাই মেলায় পাওয়া যায় না।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মেলা শুরুর সপ্তাহ আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা দোকান বরাদ্দ নিয়ে পণ্যসহ মেলায় আসতে শুরু করে। ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, টাঙ্গাইল, সিলেট, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও আজমীর শরীফ থেকে শাহ শামছুদ্দীন আউলিয়ার ভক্ত এবং আশেকানগণ উরস ও মেলায় অংশ নিতে আসেন।
জানা যায়, বুখারা থেকে আগত কামেল শাহ শামছুদ্দীন আউলিয়া মোগল আমলে এই এলাকায় এসে আস্তানা গাড়েন এবং সুফিবাদ প্রচার করেন। বাদশাহ আকবরের সময় এই আস্তানার আশপাশ এলাকা ‘লাখেরাজ’ ঘোষণা করা হয়। জনশ্রুতি হচ্ছে, শাহ শামছুদ্দীন আউলিয়ার ভক্ত বুখারার এক সুলতান ‘কুড়ি খাঁ’ এ অঞ্চলে আসেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর নাম ‘কুড়ি খাঁ’ থেকে কুড়িখাই নামের উৎপত্তি।
হিজরী ১০০৩ সালে শাহ শামছুদ্দীন আউলিয়ার ইন্তিকালের পূর্বে তাঁর তিন সাগরেদ শাহ কবির, শাহ নসীর ও শাহ কলন্দর খেলাফতপ্রাপ্ত হন এবং ফার্সি ভাষায় শাহ শামছুদ্দীন আউলিয়া তাঁদেরকে অসিয়তনামা লিখে দিয়ে যান। লিপিটি এখনও সংরক্ষিত আছে। পরবর্তীতে শাহ কবির, শাহ নসীর ও শাহ কলন্দর-এর বংশধরগণই আজ পর্যন্ত মাজার শরীফের মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হয়ে আসছেন এবং মেলা ও উরস পরিচালনা করছেন। একে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কিংবদন্তি এবং সংস্কার প্রচলিত রয়েছে।