জাকির হোসাইনঃ বাংলাদেশের একবিংশতম রাষ্ট্রপতি পদে বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান ভাটি শার্দূল মোঃ আবদুল হামিদকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন নির্বাচন কমিশন।
জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় ৭৪ বছর বয়সে মোঃ আবদুল হামিদকে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়া আজ নিশ্চিতই হল। আর কেউ ওই পদের নির্বাচনে আগ্রহী না হওয়ায় ভোটাভুটির প্রয়োজনও ফুরিয়ে গেল। বুধবার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আবদুল হামিদকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন এ নির্বাচনের নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসাবে আবদুল হামিদ এই পদে সপ্তদশ ব্যক্তি। এই পর্যন্ত টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদই। সংবিধানে সর্বোচ্চ দুই বার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার সুযোগ থাকায় এটাই হবে তার শেষ মেয়াদ রাষ্ট্রপতি। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন আবদুল হামিদ। আর এবার ২৩ এপ্রিল তার শপথ হবে আভাস দিয়েছেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা।
সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, আবদুল হামিদকে নির্বাচিত ঘোষণার গেজেট বুধবারই প্রকাশ করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। ৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন দাখিলের দিন একমাত্র আবদুল হামিদের মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। তফসিলে ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ রাখা হলেও তার প্রয়োজন আর হচ্ছে না জানান সিইসি। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফেরার পর শুধু ১৯৯১ সালেই রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন হয়েছিল। এরপর সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
কিশোরগঞ্জ-৪ (মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম) থেকে ৭ বারের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য, মাননীয় ডেপুটি স্পিকার, দুইবার মাননীয় স্পিকার, বিরোধী দলীয় উপনেতা, মহামান্য অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি থেকে বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি পদে সর্বদা জননন্দিত একজন সফল ব্যাক্তিত্ব হিসাবে বাংলার মানুষকে জয় করেছেন তিনি। কিশোরগঞ্জ তথা হাওরবাসীর কাছে ভাটির শাদুর্ল হিসেবে পরিচিত আবদুল হামিদ এ্যাডভোকেট আবারো ও হতে যাচ্ছেন দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি। দলমত নির্বিশেষে জেলার সকল জনগণ তাকে সমর্থণ যানাছেন। এ খবরে কিশোরগঞ্জ জেলার সকল অধিকারীরা দোয়া ও সমর্থণ করছেন। আব্দুল হামিদ এ্যাডভোকেট ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম হাজী মো. তায়েব উদ্দিন ও মাতার নাম মরহুমা তমিজা খাতুন।
আব্দুল হামিদের শিক্ষাজীবন শুরু কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে তিনি ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন ভৈরব কেবি স্কুলে এবং নিকলী জেসি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ ও বিএ ডিগ্রী এবং ঢাকার সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন। এলএলবি ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি আইন পেশায় কিশোরগঞ্জ বারে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯০-১৯৯৬ সময়কাল পর্যন্ত পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা বার সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আব্দুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ সংসদীয় আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতের মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান ও তৎকালীন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (মুজিব বাহিনী) এর সাব-সেক্টর কমান্ডার পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৮ থেকে ২০০৯ এর ২৫ জানুয়ারি স্পিকার নির্বাচিত হবার পূর্ব পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬-৭৮ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় তিনি কারারুদ্ধ হন।
১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আব্দুল হামিদ ৭ম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১১ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ৮ম জাতীয় সংসদে তিনি ২০০১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২৭ অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্য়ন্ত বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয়বারের মত স্পিকার নির্বাচিত হন।
দেশবাসীর কাছে ভাটি শার্দূল মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ মহোদয়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করিবেন, আল্লাহ তায়ালা উনাকে সুস্থতা এবং দীর্ঘ হায়াত দান করুন। যাতে দেশবাসির জন্য কাজ করে সোনারবাংলা গড়তে পারেন।আমৃত্যু বাংলাদেশ ও দেশবাসীর সেবা করার তৌফিক দান করুন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিরা
(বঙ্গভবনের তালিকা)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১২ জানুয়ারি ১৯৭২
সৈয়দ নজরুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত): ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২
আবু সাইদ চৌধুরী: ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩
মোহাম্মদ উল্লাহ: ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩ থেকে ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫
খন্দকার মোশতাক আহমেদ: ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫
এএসএম সায়েম: ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ থেকে ২১ এপ্রিল ১৯৭৬
জিয়াউর রহমান: ২১ এপ্রিল ১৯৭৬ থেকে ৩০ মে ১৯৮১
আবদুস সাত্তার (ভারপ্রাপ্ত): ৩০ মে ১৯৮১ থেকে ২০ নভেম্বর ১৯৮১
আবদুস সাত্তার: ২০ নভেম্বর ১৯৮১ থেকে ২৪ মার্চ ১৯৮২
এএফএম আহসান উদ্দিন চৌধুরী: ২৭ মার্চ ১৯৮২ থেকে ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ: ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০
সাহাবুদ্দিন আহাম্মদ (অস্থায়ী): ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ৯ অক্টোবর ১৯৯১
আবদুর রহমান বিশ্বাস: ৯ অক্টোবর ১৯৯১ থেকে ৯ অক্টোবর ১৯৯৬
সাহাবুদ্দিন আহাম্মদ: ৯ অক্টোবর ১৯৯৬ থেকে ১৪ নভেম্বর ২০০১
একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী: ১৪ নভেম্বর ২০০১ থেকে ২১ জুন ২০০২
মো. জমিরউদ্দিন সরকার (দায়িত্বপ্রাপ্ত): ২১ জুন ২০০২ থেকে ৬সেপ্টেম্বর ২০০২
ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ: ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২ থেকে ২০০৯
জিল্লুর রহমান: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ থেকে ২০ মার্চ ২০১৩
মো. আবদুল হামিদ: বর্তমানে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনরত