জাকির হোসাইনঃ সবই কারণেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সৌভাগ্যবান। কোনো বিতর্ক ছাড়াই সুসম্মানে বঙ্গভবনে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে চলেছেন তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে আবার হবে রাষ্ট্রেপ্রধান। শুধু তাই নয় দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তিনি। তাঁর পূর্বসূরি আর কারো এই সৌভাগ্য হয়নি।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গত ২৭ বছরে যাঁরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তাঁদেরকে নিয়ে এই লেখাটি। ১৯৭৫ সালের পর ১৫ বছর গণতন্ত্র না থাকায় সে সময় যাঁরা রাষ্ট্রপতি হয়েছে তাঁদেরকে আলোচনা থেকে বাদ রাখা হয়েছে।
আবদুল হামিদের পূর্বসূরিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। ২০০৬ সালের শেষে এসে বেশ কিছু বিতর্কিত কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এর মধ্যে সংবিধানের তোয়াক্কা না করে তিনি নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর কিছু একক ও পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত সংকটকে আরো গভীর করে। এর ফল হিসেবে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয় যা প্রায় দুই বছর বলবৎ থাকে।
সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন আব্দুর রহমান বিশ্বাস। কিন্তু, তিনি ১৯৯৬ সালে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তৎকালীন সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করে গভীর রাজনৈতিক সংকটের দিকে দেশকে ঠেলে দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমানের প্রজ্ঞায় সে যাত্রায় দেশ বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে রক্ষা পায়।
আব্দুর রহমান বিশ্বাসের উত্তরসূরি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপতি পদের মর্যাদাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। তিনি এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন যিনি সত্যকে সত্য বা মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। এরশাদের পতনের পর তিনি একবছর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর অধীনেই ১৯৯১ সালে দেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রা শুরু হয়। এরপর তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ফিরে যান। প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়ার পর ১৯৯৬ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো পাঁচ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের শেষ দিকে এসে তাঁকেও রাজনৈতিক বিতর্কে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কারণ তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
গত ২৭ বছরের রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা ছিলেন একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাষ্ট্রপতি হওয়ার মাত্র সাত মাস পরই বঙ্গভবন ছাড়তে বাধ্য করা হয় শাহাবুদ্দিনের উত্তরসূরিকে। এর ফলেই পথ খুলে যায় ইয়াজউদ্দিন আহমেদের। জরুরি অবস্থায় নির্বাচন না হওয়ায় নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার দুবছর পরও স্বপদে বহাল ছিলেন তিনি।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইয়াজউদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমান। নির্বাচিত পঞ্চম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান তাঁর মেয়াদের শেষ বছরে ২০১৩ সালের মার্চে মারা যান তিনি। এরপরই বঙ্গভবনের দরজা খুলে যায় সেসময়কার স্পিকার ভাটি শার্দূল আবদুল হামিদের জন্য।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন আবদুল হামিদ। সেই হিসাবে আগামী ২৩ এপ্রিল তাঁর পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। এর ফলে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হতে হবে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারির আগে নির্বাচিত হবেন তিনি।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে ছিল, আবদুল হামিদকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফের প্রার্থী করতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাই হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই হলেন প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
তাঁর পুনর্নিবাচিত হওয়ার সবকিছু ঠিক আছে।