হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাতের অন্ধকারে এক কলমের খোঁচায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা হাওয়া হয়ে গেল। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘হাওয়া ভবন’ চালু করেছিলেন। সেখানে জাদুমন্ত্রে অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পপতির অর্থ হাওয়া হয়ে যেত। রাষ্ট্রীয় কোষাগারেও অবলীলায় বাড়ানো হতো হাত। জাদুকররা ছাপা কাগজ থেকে কালি হাপিস করে দিতে পারে। বিএনপির জাদুকর কে, যিনি একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত দলের গঠনতন্ত্রের একটি মৌলিক ধারা মুছে ফেলে দিতে পারেন?
এভাবে গঠনতন্ত্রের কোনো ধারা রদ করার পর ঘটা করে পরিবর্তিত গঠনতন্ত্রের মুদ্রিত কপি নির্বাচন কমিশনে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জমা দিতে পারেন- সেটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। এমন নজির সম্ভবত বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেই। কে. এম. নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি নেতারা বিভিন্ন সময়ে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের কাছে এ কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ। অথচ সেই কমিশনের কাছেই তারা দলের গঠনতন্ত্র জমা দিয়ে এলেন, যেখানে ‘বিএনপির কাউন্সিলের নানা সিদ্ধান্ত ও গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ে কিছু তথ্য’ নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়।
আঠারো মাসে বছর- এটা প্রবাদ। কিন্তু বিএনপির যে ২২ মাসে বছর! এক বছর ১০ মাস আগে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ তাদের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন হয়েছে। সেখানে নাকি গঠনতন্ত্র থেকে ধারা- ক. দণ্ডিত ব্যক্তি বিএনপির কোনো নেতা হতে পারবে না, সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পাবে না, এমপি হতে পারবে না। খ. কেউ যদি দেউলিয়া হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না, গ. কেউ যদি উন্মাদ হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না এবং ঘ. কেউ যদি দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না- এসব বাদ হয়ে গেল। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এমনকি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যও থাকতে পারবে না- অতএব গঠনতন্ত্র থেকে ৭ ধারাটিই বাদ। বিএনপি এখন স্বীকার করে নিল যে, কেউ দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হলেও তার দলের এমনকি শীর্ষ পদে থাকতেও সমস্যা নেই?
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি ক্ষমতায় থেকেই লোভ-প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিএনপি গঠন করেন। পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক আইয়ুব খানের মতোই জিয়াউর রহমানও দলের গঠনতন্ত্র এমনভাবে প্রণয়ন করেন, যাতে সব ক্ষমতা থাকে চেয়ারপারসনের হাতে। খালেদা জিয়া তো তারই যোগ্য উত্তরসূরি! এর মধ্য দিয়ে বিএনপি যে অগণতান্ত্রিক দল সেটাও আবার প্রমাণ হয়ে গেল। এ দলের সঙ্গে গণতন্ত্র, সুশাসন এবং ন্যায়নীতি আদৌ খাপ খায় না।
রাজনীতিতে সবকিছু সম্ভব- এমনটি আমরা বারবার শুনছি। কারা বলছেন এসব কথা? যারা অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসেন, তাদের জন্য এটা প্রিয় বাক্য। জিয়াউর রহমান বারবার বলেছেন, আমি রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে তুলব। ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’- এটাও তার প্রিয় বাক্য ছিল। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে বিরাজনীতিকরণের প্রতিও মনোযোগী ছিলেন। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই, তৃণমূলে কাজ করা তো দূরের কথা- দলের কোনো পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে কখনও সংশ্নিষ্টতা ছিল না এমন ব্যক্তিও মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন কিংবা সংসদ সদস্য হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী কিংবা দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের তিনি কাছে টেনে নিয়েছেন। এ ট্রাডিশনই তো খালেদা জিয়া ধরে রেখেছেন। এখন যে বিপদ তার নিজেরই। তাই দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণার তারিখ প্রকাশ হতেই আমরা যেন শুনি সেই প্রবাদ- ‘ঠাকুর ঘরে কে, আমি কলা খাই না।’
আমরা শুদ্ধ রাজনীতির কথা বলি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রের চর্চার কথা বলি। ন্যায়নীতির কথা বলি; কিন্তু ‘সকলি গরল ভেল’!
দুর্নীতি দমন কমিশন শক্তিশালী করার দাবি অনেক দিনের। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সেটা করেছে। এ কমিশন আওয়ামী লীগের নেতাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে, কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলা কিন্তু দুদকেরই করা এবং এর সূচনা বিশেষ ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। গঠনতন্ত্রে আকস্মিক এ সংশোধনী এনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়ে দিল- যে কোনো দণ্ডিত কিংবা আইনের বেড়াজাল এড়িয়ে চলা দুর্নীতিবাজের জন্য তাদের দুয়ার সর্বদা উন্মুক্ত।