ঢাকা ১০:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরপাড়ের মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৪:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৩৪৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কেওলার হাওরের উপশি খাল দীর্ঘ ৪৩ বছর পর আবারো খনন করা হচ্ছে। হাওরের পানিপ্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ এই খালটি ভরাট হয়ে হয়ে যাওয়ায় পানির অভাবে এই হাওরের চাষযোগ্য জমি অনাবাদি থাকত। হাওরপাড়ের চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ খালটি খননের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনসহ এলাকার এমপির কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদের চেষ্টায় এ অঞ্চলের কৃষকদের প্রাণের দাবি পূরণ হওয়ায় হাওরপাড়ের মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। গত শনিবার দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম রূপশপুরসংলগ্ন কেওলার হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, উপশি খাল পানিতে ভরা। কৃষকরা পাম্প দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। বোরো চাষাবাদের জন্য জমি তৈরি করছেন। বোরো চাষাবাদ বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মো. মোবারক মিয়া (৪৬) বলেন, উফশি খাল খনন করায় এখন পানি পাওয়া গেছে। তাই তারা এখন এই জমিতে বোরো চাষাবাদ করছেন। এতদিন হাওরে তার ৫ বিঘা জমি পতিত ছিল।

রূপসপুর গ্রামের কৃষক আবদুল আলী (৫৫) বলেন, এই খালটি খনন করায় তারা খুব উপকৃত হয়েছেন। আগে পানির অভাবে তারা চাষাবাদ করতে পারতেন না। খালে পানি থাকায় এখন কেওলার হাওরে তার সাড়ে চার কেদার জমি চাষাবাদের আওতায় এনেছেন। পালগাঁও জনকল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হরিপদ দেবনাথ বলেন, এই খালটি ১৯৭৫ সালে একবার খনন করা হয়েছিল। এরপর আর সংস্কার না করায় খালটি ভরাট হয়ে মরা খালে পরিণত হয়।

খালটি মরে যাওয়ায় প্রতি বছর কেওলার হাওরে পানির অভাবে চাষাবাদের জমির পরিমাণ কমতে থাকে। কৃষকদের অভাব অনটন বাড়তে থাকে। ধোপাহাট গ্রামের কৃষক শক্তিব্রত দাস বলেন, আগে যে জমিতে ১০ মণ ধান পাওয়া যেত সেচ সুবিধার ফলে এখন সেই জমিতে ২০ মণ ধান পাওয়া যাবে। রূপসপুর গ্রামের ৮৪ বছরের বৃদ্ধ মতলিব মিয়া আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, খালটি খনন করায় এলাকার মানুষ যে খুশি হয়েছে কোটি টাকা দিলেও মানুষজন এত খশি হতো না। কেওলার হাওর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘ প্রায় তিন-চার কিলোমিটার উপশি খাল খনন করে লাঘাটা নদীর সঙ্গে সংযোগ দেয়া হয়েছে।

এই খালের সঙ্গে সংযোগ করা হয়েছে দেওছড়া খাল ও সুনছড়া খাল। প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ করা হয়ে গেছে। ফলে কেওলার হাওরের উত্তর ও দক্ষিণ অংশ পুরোটাই এখন চাষাবাদের আওতায় আনা যাবে। এতে কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার, মুন্সিবাজার, শমসেরনগর ও আলীনগর ইউনিয়নের ধোপাটিলা, রামেশ্বরপুর, রূপসপুর, কৃষ্ণপুর, শ্রীসূর্য, কোণাগাঁও, পতনঊষা গ্রামসহ প্রায় ৩০টি গ্রামবাসী উপকৃত হবেন- এমনটাই বললেন হাওরপাড়ের বাসিন্দারা।

কৃষক আবুল বশর জিল্লুল, জুবায়ের আহম্মেদ, শামিম আহম্মেদ, মৌরাজ মিয়া, সিপার মিয়া, আব্দুর হান্নান জানান, এতো দিন তাদের জমি পতিত ফেলে রাখতেন। কিন্তু এখন তারা আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। চলতি বোর মৌসুমে তাদের সবাই হাওরে পতিত জমিতে ধান চাষ করেছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে হাওরে পানি নিষ্কাশন আর যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেয়ায়। এখন তারা অনায়াসেই ঠেলায় করে সার, বীজ নিয়ে হাওরের শেষ সীমানা পর্যন্ত যেতে পারবেন।

এখন কৃষকদের একটাই শুধু দাবি লাঘাটা ছড়ায় স্লুুইস গেট নির্র্মাণের। এ সঙ্গে বনবিষ্ণপুর ও রামেশ্বরপুরের ধুপাবিল ও কুদালিছড়া, রায়নগড়ের ঘনিয়ামারা ও খোদিজান ছড়া, মইদাইল ও ভূমিগ্রামের মান্দারছড়া, বাসুদেবপুরের ভাওরকোনা বিল খননেরও দাবি করে বলেন, তা না হলে পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে আসা ছড়ার পানির সঙ্গে পলিমাটি এসে কেওলার হাওর এক সময় ভরাট হয়ে যাবে। কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. শাহদাত হোসেন বলেন, কেওলার হাওরের উপশি খাল খনন করে লাঘাটা নদীতে সংযোগ দেয়ায় বর্ষাকালে এই হাওরে মাছের উৎপাদন বাড়বে।

এছাড়াও হাওরের সঙ্গে সুনছড়া খাল ও দেওছড়া খালের সংযোগ থাকায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হবে না। কমলগঞ্জ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, খালটি খননের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। এলাকার এমপি মহোদয়ের চেষ্টায় খালটি খনন করা হচ্ছে। কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খালটি খননের ফলে হাওরের প্রায় ২৮৬ হেক্টর জমি এখন চাষাবাদ করা যাবে। খালে পানি থাকায় এই হাওরে প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে এখন তিনটি ফসলেরই আবাদ হবে।

স্থানীয় এমপি আলহাজ উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদ বলেন, এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি ছিল খালটি খননের। আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত এমপি। জনগণের দাবি মেটানোই আমার কাজ। এছাড়া কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। খালটি খননের কেওলার হাওরে উৎপাদন বাড়বে। এলাকার মানুষ এই হাওরে সারা বছরই ফসল ফলাতে পারবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরপাড়ের মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে

আপডেট টাইম : ১২:২৪:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কেওলার হাওরের উপশি খাল দীর্ঘ ৪৩ বছর পর আবারো খনন করা হচ্ছে। হাওরের পানিপ্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ এই খালটি ভরাট হয়ে হয়ে যাওয়ায় পানির অভাবে এই হাওরের চাষযোগ্য জমি অনাবাদি থাকত। হাওরপাড়ের চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ খালটি খননের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনসহ এলাকার এমপির কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদের চেষ্টায় এ অঞ্চলের কৃষকদের প্রাণের দাবি পূরণ হওয়ায় হাওরপাড়ের মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। গত শনিবার দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম রূপশপুরসংলগ্ন কেওলার হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, উপশি খাল পানিতে ভরা। কৃষকরা পাম্প দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। বোরো চাষাবাদের জন্য জমি তৈরি করছেন। বোরো চাষাবাদ বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মো. মোবারক মিয়া (৪৬) বলেন, উফশি খাল খনন করায় এখন পানি পাওয়া গেছে। তাই তারা এখন এই জমিতে বোরো চাষাবাদ করছেন। এতদিন হাওরে তার ৫ বিঘা জমি পতিত ছিল।

রূপসপুর গ্রামের কৃষক আবদুল আলী (৫৫) বলেন, এই খালটি খনন করায় তারা খুব উপকৃত হয়েছেন। আগে পানির অভাবে তারা চাষাবাদ করতে পারতেন না। খালে পানি থাকায় এখন কেওলার হাওরে তার সাড়ে চার কেদার জমি চাষাবাদের আওতায় এনেছেন। পালগাঁও জনকল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হরিপদ দেবনাথ বলেন, এই খালটি ১৯৭৫ সালে একবার খনন করা হয়েছিল। এরপর আর সংস্কার না করায় খালটি ভরাট হয়ে মরা খালে পরিণত হয়।

খালটি মরে যাওয়ায় প্রতি বছর কেওলার হাওরে পানির অভাবে চাষাবাদের জমির পরিমাণ কমতে থাকে। কৃষকদের অভাব অনটন বাড়তে থাকে। ধোপাহাট গ্রামের কৃষক শক্তিব্রত দাস বলেন, আগে যে জমিতে ১০ মণ ধান পাওয়া যেত সেচ সুবিধার ফলে এখন সেই জমিতে ২০ মণ ধান পাওয়া যাবে। রূপসপুর গ্রামের ৮৪ বছরের বৃদ্ধ মতলিব মিয়া আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, খালটি খনন করায় এলাকার মানুষ যে খুশি হয়েছে কোটি টাকা দিলেও মানুষজন এত খশি হতো না। কেওলার হাওর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘ প্রায় তিন-চার কিলোমিটার উপশি খাল খনন করে লাঘাটা নদীর সঙ্গে সংযোগ দেয়া হয়েছে।

এই খালের সঙ্গে সংযোগ করা হয়েছে দেওছড়া খাল ও সুনছড়া খাল। প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ করা হয়ে গেছে। ফলে কেওলার হাওরের উত্তর ও দক্ষিণ অংশ পুরোটাই এখন চাষাবাদের আওতায় আনা যাবে। এতে কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার, মুন্সিবাজার, শমসেরনগর ও আলীনগর ইউনিয়নের ধোপাটিলা, রামেশ্বরপুর, রূপসপুর, কৃষ্ণপুর, শ্রীসূর্য, কোণাগাঁও, পতনঊষা গ্রামসহ প্রায় ৩০টি গ্রামবাসী উপকৃত হবেন- এমনটাই বললেন হাওরপাড়ের বাসিন্দারা।

কৃষক আবুল বশর জিল্লুল, জুবায়ের আহম্মেদ, শামিম আহম্মেদ, মৌরাজ মিয়া, সিপার মিয়া, আব্দুর হান্নান জানান, এতো দিন তাদের জমি পতিত ফেলে রাখতেন। কিন্তু এখন তারা আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। চলতি বোর মৌসুমে তাদের সবাই হাওরে পতিত জমিতে ধান চাষ করেছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে হাওরে পানি নিষ্কাশন আর যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেয়ায়। এখন তারা অনায়াসেই ঠেলায় করে সার, বীজ নিয়ে হাওরের শেষ সীমানা পর্যন্ত যেতে পারবেন।

এখন কৃষকদের একটাই শুধু দাবি লাঘাটা ছড়ায় স্লুুইস গেট নির্র্মাণের। এ সঙ্গে বনবিষ্ণপুর ও রামেশ্বরপুরের ধুপাবিল ও কুদালিছড়া, রায়নগড়ের ঘনিয়ামারা ও খোদিজান ছড়া, মইদাইল ও ভূমিগ্রামের মান্দারছড়া, বাসুদেবপুরের ভাওরকোনা বিল খননেরও দাবি করে বলেন, তা না হলে পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে আসা ছড়ার পানির সঙ্গে পলিমাটি এসে কেওলার হাওর এক সময় ভরাট হয়ে যাবে। কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. শাহদাত হোসেন বলেন, কেওলার হাওরের উপশি খাল খনন করে লাঘাটা নদীতে সংযোগ দেয়ায় বর্ষাকালে এই হাওরে মাছের উৎপাদন বাড়বে।

এছাড়াও হাওরের সঙ্গে সুনছড়া খাল ও দেওছড়া খালের সংযোগ থাকায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হবে না। কমলগঞ্জ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, খালটি খননের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। এলাকার এমপি মহোদয়ের চেষ্টায় খালটি খনন করা হচ্ছে। কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খালটি খননের ফলে হাওরের প্রায় ২৮৬ হেক্টর জমি এখন চাষাবাদ করা যাবে। খালে পানি থাকায় এই হাওরে প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে এখন তিনটি ফসলেরই আবাদ হবে।

স্থানীয় এমপি আলহাজ উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদ বলেন, এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি ছিল খালটি খননের। আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত এমপি। জনগণের দাবি মেটানোই আমার কাজ। এছাড়া কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। খালটি খননের কেওলার হাওরে উৎপাদন বাড়বে। এলাকার মানুষ এই হাওরে সারা বছরই ফসল ফলাতে পারবে।