ঢাকা ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়া প্রবাসীরা ডিআইপির হটকারি সিদ্ধান্তে দিশেহারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৪:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৩৩৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের হটকারি সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ মিশনের দীর্ঘদিন যাবৎ দেওয়া ইন্সট্যান্ট কন্স্যুলার সেবা বন্ধ হওয়ায় মালয়েশিয়ায় অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ মিশনে ইন্সট্যান্ট কন্স্যুলার সেবার মধ্যে ছিল সব থেকে বেশি বয়স, পুরাতন পাসপোর্ট নম্বর না থাকা এবং নামের সংশোধন। যে সেবাটি এমআরপি পাসপোর্ট নিমার্ণের শুরু থেকে এ যাবৎ পর্যন্ত প্রদান করে আসছিল বাংলাদেশ মিশন এবং এতে সুফল ভোগ করছিল সাধারণ প্রবাসী শ্রমিকরা।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ান সরকারের রিহিয়ারিং প্রকল্প বা অবৈধদের বৈধতা ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশ মিশনে নতুন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির হিড়িক পড়ে। এর মধ্যে বড় অংশ ছিল হাতে লেখা পাসপোর্ট ব্যবহার ও নদী পথে মালয়েশিয়া আগমন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অধিকাংশ শ্রমিকের শিক্ষাগতযোগ্যতা না থাকা, দালালের সাহায্যে পাসপোর্ট তৈরি ও বয়স বৃদ্ধি করে বিদেশে আসার কারণে নতুন মেশিন রিডেবল পাসপোট নির্মাণের ক্ষেত্রে নানা রকম ভুল-ভ্রান্তির শিকার হতে হয়। হাতের লেখা পাসপোর্টের সাথে নতুন এমআরপির নাম বা বয়সে মিল না থাকা এবং বয়স ৪৫-এর বেশি থাকার কারণে ভিসার জন্য মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত আসতে হয় প্রতিনিয়ত। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মিশন দীর্ঘ দিন যাবৎ এমআরপি পাসপোর্টের ৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায় এন্ডোজমেন্টের মাধ্যমে তৎক্ষণাত সমস্যা সমাধান করে আসছিল।

কিন্তু গত ১ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে উন্নত সেবা প্রদান ও সহযোগিতার লক্ষ্যে ঢাকা আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রজেক্ট ডিরেক্টর, এডিশনাল প্রজেক্টর ডিরেক্টরসহ ২৪ জনের একটি দল মালয়েশিয়ায় আসেন। এ সময় ৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায় এন্ডোজমেন্ট করে মিশনের ইন্সট্যান্ট কন্স্যুলার সেবার বিষয়টি ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে অবহিত করে। পাসপোর্ট, ভিসা ও পরিদর্শন বিভাগের পরিচালক মো: সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গত ১৮ই জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেরণ করলে ২৫ জানুয়ারি থেকে ইন্সট্যান্ট কন্স্যুলার সেবা বন্ধ করে দেয় মিশন কর্তৃপক্ষ। এ সময় সংশোধনের জন্য নতুন নিয়ম করা হয়েছে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পের উপর প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে এফিডেভিট, ল মিনিস্ট্রি ও ফরেন মিনিস্ট্রি থেকে সত্যায়িত করে অর্জিনাল কপি আনতে হবে এবং নতুন করে রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনের ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর নতুন পাসপোর্ট হাতে পাবে। তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে। নিয়মনীতির এমন বেড়াজালে যা খেটে খাওয়া সাধারণ প্রবাসী শ্রমিকদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।

এব্যাপারে মিশনের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ডিআইপির কোনো কর্মকর্তা আমাদের মিশনের সাথে এ বিষয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা করেনি। তারা নিজেদের মত করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদেরকে অবহিত করেছেন। আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করি কিভাবে একজন সাধারণ প্রবাসী শ্রমিকের সমস্যার সমধান করতে হয় সেটা আমাদের থেকে ভালো কেউ জানে না।

এ সময় তারা ক্ষোভের সঙ্গে আরো বলেন, রিহিয়ারিং প্রকল্পের জন্য ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে ইমিগ্রেশনে ফিংগারের এখনও কয়েক মাস বাকি। এর মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত কোনভাবেই কাম্য নয়। এন্ডোজমেন্টের মাধ্যমে তাদের ভিসা সমস্যা সমাধান হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
যেখানে মালয়েশিয়ান সরকার বা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কোনো সমস্যা নাই, সেখানে ডিআইপির এমন সিদ্ধান্তে শত শত প্রবাসী বাংলাদেশিকে ভিসা জটিলতার কারণে দেশে ফিরতে হবে। এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে?

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মালয়েশিয়া প্রবাসীরা ডিআইপির হটকারি সিদ্ধান্তে দিশেহারা

আপডেট টাইম : ১২:০৪:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের হটকারি সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ মিশনের দীর্ঘদিন যাবৎ দেওয়া ইন্সট্যান্ট কন্স্যুলার সেবা বন্ধ হওয়ায় মালয়েশিয়ায় অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ মিশনে ইন্সট্যান্ট কন্স্যুলার সেবার মধ্যে ছিল সব থেকে বেশি বয়স, পুরাতন পাসপোর্ট নম্বর না থাকা এবং নামের সংশোধন। যে সেবাটি এমআরপি পাসপোর্ট নিমার্ণের শুরু থেকে এ যাবৎ পর্যন্ত প্রদান করে আসছিল বাংলাদেশ মিশন এবং এতে সুফল ভোগ করছিল সাধারণ প্রবাসী শ্রমিকরা।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ান সরকারের রিহিয়ারিং প্রকল্প বা অবৈধদের বৈধতা ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশ মিশনে নতুন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির হিড়িক পড়ে। এর মধ্যে বড় অংশ ছিল হাতে লেখা পাসপোর্ট ব্যবহার ও নদী পথে মালয়েশিয়া আগমন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অধিকাংশ শ্রমিকের শিক্ষাগতযোগ্যতা না থাকা, দালালের সাহায্যে পাসপোর্ট তৈরি ও বয়স বৃদ্ধি করে বিদেশে আসার কারণে নতুন মেশিন রিডেবল পাসপোট নির্মাণের ক্ষেত্রে নানা রকম ভুল-ভ্রান্তির শিকার হতে হয়। হাতের লেখা পাসপোর্টের সাথে নতুন এমআরপির নাম বা বয়সে মিল না থাকা এবং বয়স ৪৫-এর বেশি থাকার কারণে ভিসার জন্য মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত আসতে হয় প্রতিনিয়ত। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মিশন দীর্ঘ দিন যাবৎ এমআরপি পাসপোর্টের ৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায় এন্ডোজমেন্টের মাধ্যমে তৎক্ষণাত সমস্যা সমাধান করে আসছিল।

কিন্তু গত ১ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে উন্নত সেবা প্রদান ও সহযোগিতার লক্ষ্যে ঢাকা আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রজেক্ট ডিরেক্টর, এডিশনাল প্রজেক্টর ডিরেক্টরসহ ২৪ জনের একটি দল মালয়েশিয়ায় আসেন। এ সময় ৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায় এন্ডোজমেন্ট করে মিশনের ইন্সট্যান্ট কন্স্যুলার সেবার বিষয়টি ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে অবহিত করে। পাসপোর্ট, ভিসা ও পরিদর্শন বিভাগের পরিচালক মো: সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গত ১৮ই জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেরণ করলে ২৫ জানুয়ারি থেকে ইন্সট্যান্ট কন্স্যুলার সেবা বন্ধ করে দেয় মিশন কর্তৃপক্ষ। এ সময় সংশোধনের জন্য নতুন নিয়ম করা হয়েছে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পের উপর প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে এফিডেভিট, ল মিনিস্ট্রি ও ফরেন মিনিস্ট্রি থেকে সত্যায়িত করে অর্জিনাল কপি আনতে হবে এবং নতুন করে রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনের ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর নতুন পাসপোর্ট হাতে পাবে। তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে। নিয়মনীতির এমন বেড়াজালে যা খেটে খাওয়া সাধারণ প্রবাসী শ্রমিকদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।

এব্যাপারে মিশনের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ডিআইপির কোনো কর্মকর্তা আমাদের মিশনের সাথে এ বিষয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা করেনি। তারা নিজেদের মত করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদেরকে অবহিত করেছেন। আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করি কিভাবে একজন সাধারণ প্রবাসী শ্রমিকের সমস্যার সমধান করতে হয় সেটা আমাদের থেকে ভালো কেউ জানে না।

এ সময় তারা ক্ষোভের সঙ্গে আরো বলেন, রিহিয়ারিং প্রকল্পের জন্য ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে ইমিগ্রেশনে ফিংগারের এখনও কয়েক মাস বাকি। এর মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত কোনভাবেই কাম্য নয়। এন্ডোজমেন্টের মাধ্যমে তাদের ভিসা সমস্যা সমাধান হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
যেখানে মালয়েশিয়ান সরকার বা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কোনো সমস্যা নাই, সেখানে ডিআইপির এমন সিদ্ধান্তে শত শত প্রবাসী বাংলাদেশিকে ভিসা জটিলতার কারণে দেশে ফিরতে হবে। এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে?