হাওর বার্তা ডেস্কঃ বর্তমান ২০তম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এ্যাডভোকেটের মেয়াদ শেষ হওয়ার আর মাত্র কয়েক মাস বাকী আছে। ২১ এপ্রিল ২০১৮ তার মেয়াদ শেষ হবে। ফলে বছরের প্রথমে সকলেরই দৃষ্টি এখন ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে। এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা-সমালোচনা।
বর্তমান আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর বিশেষ কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে ২১ এপ্রিল। মেয়াদ শেষ হলেই দলের অভিজ্ঞ নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
“বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠা এক লৌহমানব আবদুল হামিদ। পঞ্চাশ বছরের ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবনে একটি মুহুর্তের জন্যও যিনি জাতির পিতার আদর্শ ছেড়ে যাননি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার এবং কারাগারে জাতিয় চার নেতা হত্যার প্রতিবাদ করার কারণে, খুনীদের প্রলোভন ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে কারাবরণ করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন রাজপথে। সেই ওয়ান ইলেভেনেও ছিলেন প্রিয় নেত্রীর পাশে।”
হাওর এলাকা যার জন্ম, হাওরের মানুষ যাকে ভাটির শার্দূল বলে ডাকে যিনি মাটিও মানুষের সাথে মিশে আছেন হাওরের মাঝে। কিশোরগঞ্জ-৪ (মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম) থেকে সাতবারে নির্বাচিত মাননীয় সাংসদ, মাননীয় ডেপুটি স্পিকার, দুইবার মাননীয় স্পিকার, বিরোধী দলীয় উপনেতা, মহামান্য অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি থেকে বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি পদে সর্বদা জননন্দিত একজন সফল ব্যাক্তিত্ব হিসাবে বাংলার মানুষকে জয় করেছেন তিনি।
কিশোরগঞ্জ মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের কৃতি সন্তান ৭ বারের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ও কিশোরগঞ্জ তথা হাওরবাসীর কাছে ভাটির শার্দূল হিসেবে পরিচিত আবদুল হামিদ এ্যাডভোকেট এবারও হতে যাচ্ছেন দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি। দলমত নির্বিশেষে জেলার সকল জনগণ তাকে সমর্থণ যানাছেন। এ খবরে কিশোরগঞ্জ জেলার সকল অধিকারীরা দোয়া ও সমর্থণ যানাছেন।
আব্দুল হামিদ এ্যাডভোকেট ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম হাজী মো. তায়েব উদ্দিন ও মাতার নাম মরহুমা তমিজা খাতুন।
আব্দুল হামিদের শিক্ষাজীবন শুরু কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে তিনি ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন ভৈরব কেবি স্কুলে এবং নিকলী জেসি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ ও বিএ ডিগ্রী এবং ঢাকার সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন। এলএলবি ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি আইন পেশায় কিশোরগঞ্জ বারে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯০-১৯৯৬ সময়কাল পর্যন্ত পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা বার সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আব্দুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ সংসদীয় আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতের মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান ও তৎকালীন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (মুজিব বাহিনী) এর সাব-সেক্টর কমান্ডার পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৮ থেকে ২০০৯ এর ২৫ জানুয়ারি স্পিকার নির্বাচিত হবার পূর্ব পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬-৭৮ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় তিনি কারারুদ্ধ হন ।
১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আব্দুল হামিদ ৭ম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১১ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
৮ম জাতীয় সংসদে তিনি ২০০১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২৭ অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্য়ন্ত বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয়বারের মত স্পিকার নির্বাচিত হন।
সব বিশ্লেষণই ও সাংবাদিকরা বলছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে উনাকেই মহামান্য রাষ্ট্রপতি পদে রাখবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
বর্তমান প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন দিক পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া, বর্তমান দশম জাতীয় সংসদে যেহেতু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা রয়েছে, সেহেতু আওয়ামী লীগের প্রার্থীই হবেন দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।