হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এবারও হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইসি) কমিটিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার ১১টি উপজেলায় ইউপি সদস্য ও তার আত্মীয় স্বজনরা এবং ক্ষমতাশালীরাই। প্রকল্প কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। এমন অসঙ্গতির বিষয়ে বিভিন্ন উপজেলায কৃষকরা লিখিত ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্প কমিটির সময় পার হয়ে যাওয়ায় পর দ্রুত নামমাত্র কমিটি গঠন করা হয়েছে। এমন কমিটি দিয়ে হাওরের কি কাজ হবে তা নিয়ে কৃষকরা আছেন উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়।
জানাযায়, জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্শপাশা, বিশ্বম্বরপুর, দিরাই, শাল্লা, ছাতক, দোয়ারা বাজারসহ ১১টি উপজেলায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইসি) কমিটিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সাথে সাথে অর্থেও বিনিময়ে প্রকল্পে কাজ পেয়েছেন অভিযোগ রয়েছে। গত মওসুমে ৪০দিনের কর্মসৃজন কর্মসুচির কাজে ঐ ইউপি সদস্যদের অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে সেই প্রকল্পের টাকা ফিরত দিতে বাধ্য হন। এর পর কিছু কিছু উপজেলায় ঐসব কমিটি বাতিল করা হয়। তবে বেশির ভাগ কমিটিতেই এখনও রয়েছে আতীয়করন। ফলে গত বছরের মত বাঁধ ভাঙ্গার মত ঘটনা পুনারো বৃত্তি ঘটনার অশংকায় সবার মাঝে আতংক বিরাজ করছে লাখ লাখ কৃষকের মাঝে।
জেলার তাহিরপুর উপজেলার সাজাঁ প্রাপ্ত আসামীকে দেওয়া হয়েছে হাওররক্ষা বাঁধের কাজ। এছাড়াও রয়েছে দলীয় ও আতীয়করন রয়েছে। এ বিষয়ে গত ২৬ডিসেম্বর উপজেলার দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়নের রামজীবনপুর গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল মিয়া তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগে দায়ের করেছেন। জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওরের ফেনারবাঁক ইউনিযনের আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য আসাদ আলীর ও তার আত্মীয়-স্বজনরাই ৭পিআইসির দায়িত্ব পেয়েছেন।
পাকনা হাওরের ঐ ইউনিয়নের কামধরপুর গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন ও হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনে জামালগঞ্জ কমিটির যুগ্ম আহবায়ক জুলফিকার চৌধুরী রানা একটি লিখিত অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার কাছে দায়ের করেন। অন্য দিকে জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তার ইউনিয়নের পিআইসি গঠনে ব্যাপক অনিয়মের কারনে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নিজের পদের অব্যাহতি চেয়ে লিখিত ভাবে আবেদন করেন।
জেলার বিভিন্ন হাওরপাড়ের কৃষকরা অভিযোগে করে বলেন,প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠনে এমন অসঙ্গতির ঘটনায় শংকিত আছি বাঁধের কাজ হবে কী-না? সরকারী বিধি মোতাবেক হাওরপাড়ের লোকজন ও জমির মালিক হতে হবে এই নীতিমালা থাকা স্বত্বেও প্রকল্প কমিটি গঠনে একই পরিবারের লোকজন,আত্মীয় এবং ক্ষমতাশালী দলীয় লোকজনদের দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিগত বছর ঠিকাদার ও পিআইসিদের দূনীর্তির কারণে অকাল বন্যায় বোর ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে জেলার সব ক’টি বোর ফসলি হাওর তলিয়ে যায়। চলতি বছরও যদি দূর্নীতি গ্রস্থ কিংবা অসাধূ ব্যাক্তিদের দিয়ে আবার বাঁধের কাজ করানো হয় তাতে গত বছরের মত দূর্নীতি যে হবে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামীম আল ইমরান বলেন,উপজেলা কমিটি যাচাই বাচাই করে বাঁধের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে,নীতিমালা অনুযায়ী পিআইসি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ পেয়েছি অভিযোগের বিষয়ে খোজঁ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। জগন্নাথপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ বলেন, উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাসিমের লিখিতপত্র পেয়েছি।
এই বিয়য়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্নেন্দু দেব বলেন,উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ মনিটরিং কমিটিতে অনেকে আছেন কিন্তু কেউ আমাকে এ বিষয়টি অবহিত করেন নি। আমি এখানে নতুন অনেক কিছুই জানা নাই। জানলে এমনটা কখনও হত না। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক ভূঁইয়া জানান, কমিটি নিয়ে অনেক স্থানেই অভিযোগ উঠেছে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।